ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে মিছিলে না যাওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে রুপসদী রাধাগোবিন্দ মন্দিরে যাওয়া দু’টি পথ বাঁশ দিয়ে বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে। উপজেলার রূপসদী উত্তরপাড়ার খানেপাড়ায় এই ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজনের দাবি, সরকারি টাকায় নির্মিত এই রাস্তা প্রায় দুই যুগ ধরে তারা ব্যবহার করে আসছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, উপজেলার রূপসদী সুজন স্মৃতি কলেজে গত শনিবার (১৩মার্চ) নতুন ভবনের উদ্বোধন অনুষ্ঠান হয়। ওই অনুষ্ঠানে যেতে রুপসদী ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জাকির হোসেন উত্তরপাড়ার (খানেপারা) হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকদের তার মিছিলে যোগ দিতে বলেন। একই সময় রূপসী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ফেরদৌস মিয়া হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনকে তার মিছিলে যেতে বলেন। এ নিয়ে বিপাকে পড়েন হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ। দুই পক্ষ থেকে দাওয়াত দেওয়ায় তারা কোন পক্ষের মিছিলে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এতে ক্ষিপ্ত হন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জাকির হোসেন। পরদিন তিনি রূপসদী খানেপাড়ার রাধা গোবিন্দ মন্দিরের যাওয়ার পশ্চিম দিকের ও পূর্ব দিকের রাস্তা বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেন। মন্দিরে যেতে না পারায় এলাকায় ১৩৫টি হিন্দু পরিবার পূজা করতে পারছে না বলে অভিযোগ করেছেন।
এ নিয়ে যুবলীগের সভাপতি জাকির হোসেন বলেন, ‘এটা আমার ব্যক্তিগত জায়গা। আমার বাড়ির নিরাপত্তার কারণে এই রাস্তা বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছি। মিছিলে না যাওয়ার সঙ্গে এটার কোন সম্পর্ক নেই। তবে আমার বাবা এই জায়গা দিয়ে গিয়েছিলেন মন্দিরে চলাচলের জন্য, এটা সত্য।’
এদিকে রুপসদী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ফেরদৌস মিয়া বলেন, ১৯৯৬ সালে সরকারি অর্থায়নে এ রাস্তা নির্মাণ করা হয়। এ রাস্তা আমি করেছিলাম। যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরে যাওয়ার সেই রাস্তা বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন। এখন তারা পূজা করতে পারছে না মন্দিরে যেতে না পারায়।
উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিন্টু রঞ্জন সাহা বলেন, মন্দিরে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেয়া খুবই দুঃখজনক। সরকারি টাকায় এই রাস্তা নির্মাণ হয়েছে। ধর্মীয় উপাসনালয়ে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ করে দেবে কেউ, এটা মানা যায় না। এটা ব্যক্তিগত জায়গা হলেও দীর্ঘদিন যাবত এটা রাস্তা হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে, তা বন্ধ করার কোন অধিকার তাদের নেই। আমি এর নিন্দা জানাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন সরোয়ার গণমাধ্যমকে বলেন, মন্দিরের রাস্তা বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনা শুনিনি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেব।
সংশ্লিষ্ট বিশিষজ্ঞরা বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর হিন্দুদের সম্পত্তি দখল করা নিয়ে এই অঞ্চলে যে তোড়জোড় লক্ষ্যণীয় ছিল, সেটা এখনো অব্যাহত আছে বিষয়টা লজ্জাজনক। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই হিন্দুদের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ আসে। আর এসবের প্রায় সবই করে থাকেন স্থানীয় প্রভাবশালী নেতারা। বিগত বিএনপি-জামাত আমলে এর হার লক্ষ্যণীয় অবস্থানে চলে গিয়েছিল। একইসাথে বিষয়টি খুবই আতঙ্কের ছিল।
আওয়ামী লীগ আসাতে হিন্দু সম্প্রদায় কিছুটা স্বস্থির নিঃশ্বাস ছাড়তে পারলেও এমনসব ঘটনা যখন পুনরাবৃত্তি হতে দেখেন তখন স্বাভাবিকভাবেই তারা অসহায় হয়ে পড়েন। আর সেটা যদি হয় আওয়ামী লীগের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা, তখন বিষয়টি আরো আতঙ্কের পর্যায়ে চলে যায়। সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে বিষয়টির সুরাহা প্রত্যাশা করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৯০০
আপনার মতামত জানানঃ