অপরিকল্পিত ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইনের কারণে করোনা ভাইরাসের তৃতীয় ঢেউ ইউরোপের বড় একটা অংশ জুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা গত কয়েকদিন ধরে দ্রুত গতিতে বেড়ে চলছে এই মহাদেশে।
ফেব্রুয়ারির শুরুর থেকে ইউরোপে আক্রান্তের হার এখন অব্দি সর্বোচ্চ। এই ক্রমবর্ধমান সংক্রমণের পেছনে নতুন ধরণের ভাইরাসের হাত আছে বলে দাবি করা হচ্ছে
ইউরোপের বিভিন্ন দেশ আগামী কিছু দিনের মধ্যে লকডাউনে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও এর সম্পূর্ণ বিপরীত অবস্থা লক্ষ্য করা যায় যুক্তরাজ্যে। দেশটি ধীরে ধীরে ফিরে পাচ্ছে পুরনো কর্মচঞ্চলতা। খুলে যাচ্ছে বন্ধ দোকানপাট, স্কুল। শুরু হচ্ছে খেলাধুলা।
ইতালিতে গত শুক্রবার ২৭ হাজার নতুন করে আক্রান্ত এবং ৩৮০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইতালিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের বিষয়ে সতর্ক করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘি।
দেশটির প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনা ভাইরাসের কারণে জরুরি অবস্থা জারির প্রায় এক বছর পর দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরা আমার সংক্রমণের নতুন ঢেউয়ের সম্মুখীন হচ্ছি। গত বসন্তে যা ঘটেছিল, সেই স্মৃতি ভয়ংকর এবং সেটা এড়ানোর জন্য আমরা আমাদের সাধ্যের সবকিছু করব।
যুক্তরাজ্যের পর ইউরোপে সর্বোচ্চ মৃত্যু করোনায়। সম্প্রতি দেশটিতে করোনায় মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ছাড়িয়েছে।
দেশটিতে এখন নতুন রোগী শনাক্ত ও মৃত্যুর হার বাড়ছেই। প্রতিদিন ২৫ হাজারেরও বেশি নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছেন। মারা যাচ্ছেন তিনশ’রও বেশি মানুষ।
সোমবার থেকে দেশটির জনপ্রিয় শহর রোম ও মিলানসহ অর্ধেকেরও বেশি অঞ্চলে আগামী সোমবার থেকে স্কুল, রেস্টুরেন্টসহ সব ধরনের দোকানপাট বন্ধ থাকবে। এসব অঞ্চলে জরুরি কাজ, স্বাস্থ্য সমস্যা ছাড়া কাউকে বাইরে বের হতে বিধিনিষেধ দেয়া হয়েছে। পূর্ব ইতালিকে ‘রেড জোন’ উল্লেখ করে আগামী ৩-৫ এপ্রিল লকডাউন রাখা হবে। যাতে করে সেখানে মানুষ অবকাশযাপনে যেতে না পারেন।
দেশটির প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, ইস্টার উৎসব পর্যন্ত এসব বিধিনিষেধ কার্যকর থাকবে। এছাড়া ইস্টারের ছুটিতে পুরো দেশকে রেড জোন বিবেচনা করে সর্বাত্মক শাটডাউন জারি করা হবে।
ফ্রান্সেও আবারও করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ওলিভিয়ের ভেরান প্যারিসের পরিস্থিতিকে বেশ উদ্বেগজনক বলেই মনে করছেন।
তিনি জানান, প্রত্যেক ১২ মিনিটে একজন প্যারিসিয়ান হাসপাতালের ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটে ভর্তি হচ্ছে।
ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রন বেশ কিছু অঞ্চলে কারফিউ এবং সামাজিক চলাফেরায় বিধিনিষেধ জারি করেছেন। অনেক চিকিৎসক তাকে জরুরি ভিত্তিতে দেশে লকডাউন জারি করতে পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানা যায়।
জার্মানিতে গত শনিবার ১২ হাজার ৬ শ ৭৪ জন নতুন করে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হন। গত সপ্তাহ থেকে যা ৩ হাজার ১শ ১৭ জন বেশি। দেশটির ইনিফেকশন ডিজিজ এজেন্সি স্বীকার করেছি, জার্মানি এখন করোনা ভাইরাসের তৃতীয় ঢেউয়ের মধ্যে আছে।
দেশটিতে এক সপ্তাহে গড়ে প্রতি লাখে আক্রান্তের হার শনিবার বেড়ে হয়েছে ৭৬ দশমিক এক, যা একদিন আগে ছিল ৭২ দশমিক চার৷ এই পরিসংখ্যানের উপর নির্ভর করেই জার্মানিতে লকডাউনের সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে সরকার৷
গত সপ্তাহে জার্মানি লকডাউনের কড়াকড়ি কিছুটা শিথিল করেছিল৷ প্রতি লাখে আক্রান্তের হার ছিল তখন ৬৫ দশমিক ছয় জন৷ এই হার ১০০ ছাড়ালে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আবারও কড়া লকডাউন আরোপের বিষয়ে সম্মত হয়েছেন বেশিরভাগ রাজ্য প্রধানরা৷ তবে ব্যতিক্রম ব্রান্ডেনবুর্গ ও নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়া৷ এই দুই রাজ্যের প্রধান বলেছেন তারা পরিকল্পনাটি মানতে বাধ্য নন৷
জার্মানির স্বাস্থ্য সংস্থা রবার্ট কখ ইনস্টিটিউট এর হিসাবে শনিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ১২ হাজার ৬৭৪ জন, যা গত সপ্তাহের একইদিনের তুলনায় তিন হাজার ১১৭ জন বেশি৷
একইভাবে পোল্যান্ডেও গত বুধবার ১৭ হাজার ২শ ৬০ জন নতুন করে সংক্রমিত হন। নভেম্বরের পর থেকে দৈনিক সংক্রমণের দিক দিয়ে এটিই সর্বোচ্চ। দেশটির সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই সপ্তাহেই মহামারীর জন্য দেশটিতে আবারও বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।
পোল্যান্ডে ইতিমধ্যেই সামাজিক জমায়েতে কঠোর নিষেধাজ্ঞা জারি আছে। অধিকাংশ স্কুল বন্ধ। রেস্তোরাঁগুলো শুধুমাত্র দুপুরের খাবারের জন্য খোলা আছে।
এছাড়া হাঙ্গেরি ও চেক রিপাবলিকেও সংক্রমণ এবং মৃত্যুর উচ্চহার পরিলক্ষিত হচ্ছে। স্বাস্থ্যকর্মীদের মতে সামনের সপ্তাহগুলোতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে।
এসডব্লিউ/এসএস/২০৩৫
আপনার মতামত জানানঃ