অবশেষে পরাজয় স্বীকার করে নিলেন বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। বৃহস্পতিবারের নির্বাচনে তিনি পরাজয় স্বীকার করে বিরোধী লেবার দলের নেতা কিয়ের স্টারমারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। যে আসনে নির্বাচন করেছেন তার একটি কেন্দ্রে বক্তব্য রাখছিলেন তিনি। নিজের আসনে বিজয়ী হয়েছেন তিনি।
সেখানে মাত্র পাওয়া খবরে বলা হয়েছে, তিনি পরাজয় স্বীকার করে বলেছেন, এটা দলের জন্য এক কঠিন রাত। তার আসনের ভোটারদেরকে সমর্থন দেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। বলেছেন, সামনের দিনগুলোতে তাদের সেবা করতে চান।
পাশাপাশি তিনি এটাও বলেছেন, লেবাররা নির্বাচনে জয়ী হয়েছে এবং তিনি ফোন করে কিয়ের স্টারমারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। ফলে লেবার নেতা কিয়ের স্টারমার হচ্ছেন বৃটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক ভূমিকম্পে ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহভাবে তছনছ হয়ে গেল ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টি।
বৃটেনে রাজনীতির হিসাব ওলটপালট করে দিচ্ছেন স্যার কিয়ের স্টারমার। তার নেতৃত্বে বিরোধী লেবার পার্টি দীর্ঘ ১৪ বছর পর ক্ষমতায় যাচ্ছে বলে পূর্বাভাসে বলা হয়েছে। তাও যেনতেন ভাবে নয়, একেবারে একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে। আর তিনি হতে যাচ্ছেন বৃটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী।
বুথফেরত জরিপ, বৃটেনের গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী শোচনীয় এক পরাজয় বরণ করছেন প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও তার দল কনজারভেটিভ পার্টি। এরই মধ্যে কমপক্ষে দু’জন বাঘা বাঘা মন্ত্রীর পরাজয়ের খবর পাওয়া গেছে। এ যেন বৃটেনে এক রাজনৈতিক ভূমিকম্প। এর আঘাতে ভেঙেচুরে তছনছ হয়ে গেছে কনজারভেটিভ পার্টির দুর্গ। তাদেরকে এই আঘাত দিয়ে জয় অর্জন করার নায়ক স্যার কিয়ের স্টারমার।
অনলাইন আল জাজিরা বলছে তার জন্ম বৃটেনের রাজধানী লন্ডনে। বয়স ৬১ বছর। স্টারমার রাজনীতিতে আসার আগে ছিলেন মানবাধিকার বিষয়ক আইনজীবী। যুক্তরাজ্যের পাবলিক প্রসিকিউশন দপ্তরের পরিচালক পদেও দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০২০ সালের এপ্রিলে লেবার পার্টির নেতা হিসেবে দায়িত্ব নেন তিনি। এর আগে দলটির নেতা ছিলেন জেরেমি করবিন। দলীয় নির্বাচনে তাকে পরাজিত করে তার স্থলাভিষিক্ত হন কিয়ের স্টারমার। সুচিন্তিত নির্দেশনা দিয়ে দলকে যুক্তরাজ্যের রাজনীতির কেন্দ্রে নিয়ে আসেন স্টারমার। কয়েক বছরের মাথায় ভোটের লড়াইয়ে এর সুফল পেলেন তিনি।
সমর্থকরা মনে করেন স্টারমার একজন বাস্তববাদী মানুষ। ভরসা করার মতো রাজনীতিবিদ। সমালোচকদের অনেকের মতে, স্টারমার চৌকস নন। বরং তিনি অনেকটাই ঝিমিয়ে পড়া একজন রাজনীতিক। রাজনীতির মাঠে সাড়া ফেলে দেওয়া স্টারমার একজন দক্ষ ফুটবলার। ক্লাব ফুটবলে আর্সেনালের ভক্ত তিনি। ফৌজদারি বিচারপ্রক্রিয়ায় অবদান রাখায় ‘নাইট’ উপাধি পেয়েছেন স্টারমার।
সম্প্রতি এক বিতর্ক অনুষ্ঠানে স্টারমার বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশগুলো থেকে যেসব মানুষ আসছেন, তাদের ফেরত পাঠানো হচ্ছে না। কনজারভেটিভ সরকারের রুয়ান্ডা অভিবাসী প্রত্যাবাসন প্রকল্পের সমালোচনা করতে গিয়ে তিনি এমন মন্তব্য করেন। স্টারমারের এমন মন্তব্যে ক্ষোভে ফেটে পড়ে যুক্তরাজ্যের বাংলাদেশি সম্প্রদায়। প্রতিবাদ জানানো হয়।
এমন মন্তব্যে বিপাকে পড়েন এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রার্থীরা। এবার লেবার পার্টির আটজনসহ সব মিলিয়ে অন্তত ৩৪ জন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যুক্তরাজ্যের নাগরিক ভোটে লড়ছেন।
স্যার কিয়ের স্টারমারের মন্তব্যে যখন চারদিক সমালোচনার ঝড় বইতে থাকে, তখন তিনি সুর নরম করেন। বলেন, ‘আমি আসলে বাংলাদেশকে আলাদাভাবে বোঝাতে চাইনি। আমাদের অর্থনীতি, সংস্কৃতি ও আমাদের দেশের প্রতি বাংলাদেশি কমিউনিটির অবদানকে আমি ব্যাপকভাবে মূল্যায়ন করি।’
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সরকারপ্রধানের দায়িত্ব নেওয়ার পর স্টারমারকে ডাউনিং স্ট্রিটে আরও কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হবে। ভোটের আগে তিনি এক শব্দের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রচার করেছেন। তা হচ্ছে- পরিবর্তন। জনগণের জন্য সরকারি সেবার মান কমে যাওয়া এবং জীবনযাত্রার মান নিয়ে মানুষের ক্ষোভকে কাজে লাগিয়েছেন স্টারমার। বলেছেন, লেবার পার্টি পরিবর্তন আনবে। যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি ক্ষমতায় আসতে যাচ্ছেন, তা থেকে শিগগিরই উত্তরণের কোনো জাদুমন্ত্র তার কাছে নেই।
আপনার মতামত জানানঃ