দেশে কোভিড-১৯ সংক্রমণ বাড়তে থাকায় এখন কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সামনে বড় বিপদের শঙ্কা দেখছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এবিএম খুরশীদ আলম। রোববার (১৪মার্চ) ঢাকার শ্যামলীর টিবি হাসপাতালে ওয়ান স্টপ টিবি সেন্টারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এই শঙ্কার কথা বলেন।
তিনি বলেন, এখন যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই তরুণ, আক্রান্তদের অনেককেই হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করা লাগছে। সংক্রমণের ভয়াবহতার বর্ণনায় স্বাস্থ্যের ডিজি বলেন, গত দুই মাসে আমার কাছে কখনোই আইসিইউ বেডের জন্য কোনো অনুরোধ আসে নাই। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে ফোন পাচ্ছি আইসিইউ বেড পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি জানান, আগে বৃদ্ধ ও দীর্ঘদিন ধরে রোগে ভোগাদের আইসিইউতে নেওয়া লাগত। এখন তরুণ সুস্থরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। তাদেরকে আইসিইউতে নেওয়া লাগছে।
সবাইকে সতর্ক করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, ‘গেল দুই মাস আমরা স্বস্তিতে ছিলাম, তাই এখন আমরা কোনো কিছু মানছি না। সামনের দিকে আমরা আরও বড় বিপদে পড়তে যাচ্ছি যদি আমরা স্বাস্থ্যবিধি না মানি।’
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি জোরদার করতে এরইমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংক্রমণ বাড়তে থাকায় ইতোমধ্যে দেশের সব হাসপাতালকে প্রস্তুত থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন ডা. খুরশীদ আলম। তিনি বলেন ইতোমধ্যে সিভিল সার্জন অফিসগুলোতে চিঠি পাঠানো হয়েছে; সারা দেশে আইসিইউগুলো প্রস্তুত রাখতে বলা হয়েছে।
সমস্ত দেশে ডিভিশনাল হাসপাতাল এবং ঢাকায় যতগুলো হাসপাতাল আছে, সেগুলোর পরিচালকদের সঙ্গে বসেছিলাম, তাদের সুবিধা-অসুবিধা কার কী অবস্থা আমরা সেগুলো শুনেছি। তাদের বলেছি যে কয়টা বেড আছে, আপনারা রেডি রাখেন। যুক্তরাজ্য ও আফ্রিকায় শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের প্রভাবে কি দেশে সংক্রমণ বাড়ছে? ডা. খুরশীদ আলম বলেন, “জিনোম সিকোয়েন্সের মাধ্যমে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির পরিচালক অধ্যাপক ডা. সামিউল ইসলাম, আইসিডিডিআর,বির শর্ট স্টে ইউনিটের প্রধান ডাক্তার আজহারুল ইসলাম খান, শ্যামলী টিবি হাসপাতালের উপ-পরিচালক মো. আবু রায়হান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে কোভিড-১৯ এ দেশে আরও ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে গত ২৪ ঘণ্টায়। এ সময়ে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন ১১৫৯ জন, যা গত আড়াই মাসের মধ্যে সর্বাধিক শনাক্তের রেকর্ড। রোববার (১৪মার্চ) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সবশেষ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের সবশেষ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। নতুন ১৮ মৃত্যু নিয়ে এ পর্যন্ত দেশে মহামারিতে ৮৫৪৫ জনের মৃত্যু হলো। আর আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৫৭ হাজার ৩৯৫ জনে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও এক হাজার ৩৮৫ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত এক দিনে। তাতে এ পর্যন্ত সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ৫ লাখ ১১হাজার ৬৯৫ জন হয়েছে। এর আগে গতবছরের ৩০ ডিসেম্বর আজকের চেয়ে বেশি রোগী শনাক্তের খবর দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেদিন মোট ১ হাজার ২৩৫ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছিল। দেশে প্রথম করোনা রোগী ধরা পড়ে গত বছরের ৮ মার্চ। প্রথম মৃত্যু হয় ১৮ মার্চ।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৮৩০
আপনার মতামত জানানঃ