দেশের স্কুল-মাদ্রাসাসহ সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের ওপর শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন রোধে নজরদারি বাড়ানোর জন্য সরকারের প্রতি নির্দেশনা দিয়েছে হাইকোর্ট। আইনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের ওপর দৈহিক ও মানসিক নির্যাতন শাস্তিযোগ্য অপরাধ হলেও প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থার বাইরে মাদ্রাসা নামক ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিশুদের ওপর অমানসিক নির্যাতন চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। সম্প্রতি এরকম কিছু ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনার ঝড় তুললে হাইকোর্ট এমন নির্দেশনা দিয়েছে।
সম্প্রতি চট্টগ্রামের হাটহাজারিতে মারকাযুল কোরআন ইসলামিক একাডেমি নামে একটি মাদ্রাসায় একটি শিশুকে শাস্তি দেওয়ার নামে নির্যাতনের ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর অভিযুক্ত শিক্ষককে বরখাস্ত ও গ্রেপ্তার করা হয়। যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। উল্লেখিত বিষয়টি গত বৃহস্পতিবার আদালতের নজরে আনেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। ওইদিনই আদালত চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে নির্দেশ দেন রবিবারের মধ্যে এ বিষয়ে কার্যক্রম গ্রহনের প্রতিবেদন দিতে।
আজ (রবিবার) আদালতে প্রতিবেদন দাখিলের পর আদালত সরকার ও সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতি নিম্নলিখিত নির্দেশনাসমূহ প্রদান করেন।
আদালতের নির্দেশনাসমূহ:
- দেশের সকল মাদ্রাসা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সংবিধান ও দেশের প্রচলিত আইন মেনে চলতে হবে।
- মাদ্রাসা বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের মারধর করা, ভয়ভীতি দেখানো যাবে না এমন সরকারি নির্দেশনার বাস্তবায়ন।
- শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা অধিদপ্তর এবং মাদ্রাসা বোর্ড বিষয়টি নজরদারি করবে, এর ব্যত্যয় ঘটলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
- শিশুটির নিরাপত্তা বিধানের অংশ হিসেবে তার বাড়িতে পুলিশ সদস্য মোতায়েন করতে হবে।
- নির্যাতনের শিকার শিশুটির পড়াশোনা যাতে বন্ধ না হয় সেটি মনিটরিং এ রাখা।
- নির্যাতনের ঘটনা যাতে শিশুটির ভবিষ্যতের ওপর কোন নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে সেজন্য জেলা প্রশাসন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।
- মারকাযুল কোরআন ইসলামিক একাডেমির প্রিন্সিপালকে সতর্ক করা হবে।
দেশের শিক্ষানীতিতে নিষেধ থাকা সত্ত্বেও মাদ্রাসা ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিশুদের শাস্তি দেওয়া, মারধর করা, ভয়ভীতি দেখানোর মত ঘটনা ঘটছে নিয়মিত। বিশেষজ্ঞমহলের অভিমত, দেশের মাদ্রাসাগুলো দেশের শিক্ষাবিভাগের নিয়ন্ত্রণ না থাকার কারণে এই ধরনের ঘটনাগুলো নিয়মিত ঘটছে। অজানা কারণে সরকার মাদ্রাসায় শিশুদের ওপর দীর্ঘদিন ধরে চলা এসব নির্যাতনের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করছে না। যারফলে মাদ্রাসার শিক্ষকরা দিনদিন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রচলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরগুলোর মত দেশের সকল মাদ্রাসাগুলোকে সরকারের শিক্ষানীতির আওয়তায় না আনতে পারলে শিশুদের ওপর শিক্ষকদের নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব নয় বলে অভিজ্ঞমহলের অভিমত।
আপনার মতামত জানানঃ