নবী মোহাম্মদ(সঃ) ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কটূক্তির পৃথক দুই ঘটনায় দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ফেসবুকে মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সঃ) কে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার ঘটনায় অভি দাস রনি (৩০) নামে এক যুবক ও প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করায় গাজীপুরে বাবুল হোসেন খান (৪১) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
নবী মোহাম্মদকে(সঃ) নিয়ে কটূক্তি
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মহানবীকে (স.) নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগ ওঠে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় অভি দাস রনির (৩০)বিরুদ্ধে। পরে শুক্রবার (১২ মার্চ) দিবাগত রাত ১টার দিকে রাজধানীর সায়দাবাদ এলাকা থেকে জেলা পুলিশের একটি বিশেষ দল তাকে আটক করে। সরাইল সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আনিসুর রহমান গণমাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে ফেসবুকে মহানবীকে (স.) কটূক্তি করে অবমাননাকর মন্তব্য করার জেরে উপজেলার অরুয়াইল বাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করে রনির বাড়ি ঘেরাও করে গ্রামবাসী। এ ঘটনায় অভিযুক্তের বাবা জহরলাল দাসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
স্থানীয় অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূইয়া বলেন, অভিযুক্ত অভি দাস রনি বাড়িতে থাকেন না, তিনি কুমিল্লার লাকসামে একটি এনজিওতে চাকরি করেন। স্থানীয় এক যুবকের দেয়া একটি ফেসবুক স্ট্যাটাসের কমেন্টে রনি মহানবীকে নিয়ে আপত্তিকর একটি মন্তব্য করেন। বিষয়টি স্থানীয়রা জানতে পেরে শুক্রবার সন্ধ্যায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। মিছিল শেষে বাজার এলাকায় অভিযুক্তের বাড়ি ঘেরাও করেন তারা।
চেয়ারম্যান আরও বলেন, এ সময় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা বিচারের আশ্বাস দিয়ে বিক্ষুব্ধদের ফিরিয়ে নিয়ে আসেন। অভিযুক্ত যুবককে গ্রেপ্তারে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসী।
সরাইল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) আনিসুর রহমান জানান, একজনের দেওয়া ফেসবুক পোস্টে রনি মহানবী (সা.) কে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন। শুক্রবার বিকেলের পর বিষয়টি স্থানীয় কয়েকজনের চোখে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে উত্তেজনা দেখা দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। পরবর্তীতে রাত ৯টার দিকে অরুয়াইল বাজার থেকে রনির বাবা জওহর লাল দাসকে হেফাজতে নেয় পুলিশ।
প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি
এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করায় গাজীপুরে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
গতকাল শুক্রবার (১২ মার্চ) দিনগত রাত পৌনে ১২টার দিকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তি হলেন- গাজীপুরের জয়দেবপুর থানাধীন জানাকৈর এলাকার মৃত হাসমত আলীর ছেলে বাবুল হোসেন খান (৪১)।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ও সেনাপ্রধানকে নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তি এবং বিদ্বেষমূলক অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে বাবুল হোসেনের নামে মামলা হয়। গতকাল শুক্রবার তার নামে মামলাটি হয়েছে জয়দেবপুর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে।
জয়দেবপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) বিশ্বজিৎ মিত্র জানান, ফেসবুকে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে কটূক্তি করায় মনির হোসেন সুমন নামে এক যুবক বাদী হয়ে শুক্রবার (১২ মার্চ) রাতে জয়দেবপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় বাবুল হোসেন খানকে আসামি করা হয়। পরে অভিযান চালিয়ে মামলার আসামি বাবুল হোসেন খানকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার (১৩ মার্চ) তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সেনাপ্রধান ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে অনেকদিন ধরে বিদ্বেষ ও কটূক্তিমূলক পোস্ট করে আসছিলেন বাবুল।
সরকার ও আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করে দেশের সুনাম নষ্ট করার অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন মনির হোসেন সুমন নামে এক ব্যক্তি।
বাদী এ বিষয়ে বলেন, বাবুল হোসেন বাংলাদেশের একজন নাগরিক হয়ে দেশের সরকার, সরকারপ্রধানকে নিয়ে কটূক্তি করে যাচ্ছেন। এতে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। তাই আমি দেশের স্বার্থে মামলাটি করেছি।
বিশেষজ্ঞদের মন্তব্য
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের নামে কালো আইনের মাধ্যমে সরকার তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে চায়। কেউ যেন এই সরকারের নানা দুর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে কথা বলতে না পারে, সেই জন্যই এই সরকার ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট তৈরি করে মানুষের মুখ বন্ধ রাখতে চায়।
তারা বলেন, এভাবে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে সরকারের অত্যাচার ও নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে সাংবাদিক ও নাগরিক সমাজের মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে খর্ব করা হচ্ছে। এই কালো আইনটির অপব্যবহারের চরম বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে লেখক মুশতাক আহমেদের কারা হেফাজতে মৃত্যু।”
তারা বলেন, আমাদের মত প্রকাশের স্বাধীনতা, চিন্তার স্বাধীনতা— এটা আমাদের সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার। যে অধিকার আইন করেও খর্ব করা যায় না। দুর্ভাগ্যবশত আজকে স্বাধীনতার সুর্বণ জয়ন্তী উদযাপন করতে গিয়ে এই স্বাধীনতার জন্য আমরা লড়াই করছি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭০০
আপনার মতামত জানানঃ