মহামারি করোনা ভাইরাসে ইতিমধ্যে বিপর্যস্ত গোটা বিশ্ব। করোনার একেরপর এক ঢেউয়ে বিশ্ব এখনো নাকানিচুবানি খাচ্ছে। করোনার এক ধরন(স্ট্রেইন) নরম হয়ে এলে শক্ত পায়ে দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে দাঁড়িয়ে যায় আরেক ধরন। সর্বশেষ ধরন নিয়ে বিশ্ব এখনো নাকাল অবস্থায় আছে। এরই মধ্যে শোনা গেলো চীনে আবারও নতুন এক ভাইরাস ছড়াচ্ছে। তবে এ ভাইরাস করোনার নতুন কোনো ধরন নয়, করোনার মতোই আরেকটি নয়া ভাইরাস। চীনে ক্রমাগত এর আগ্রাসী থাবা ছড়াচ্ছে। করোনার পাশাপাশি আরেকটি মহামারি বিশ্ব প্রত্যক্ষ করতে যাচ্ছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। খবর দ্য গার্ডিয়ানের।
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সর্বপ্রথম চীনেই শনাক্ত হয়। এজন্য অনেকেই চীনকে করোনার উৎপত্তিস্থলও বলে থাকেন। যদিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তদন্তদল এখনও এর উৎসস্থল খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য স্থানের তুলনায় চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহরে করোনাভাইরাস সর্বপ্রথম ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ায় চীনকেই এর উৎস হিসেবে মনে করেন অনেকে। এবার নতুন আরেকটি ভাইরাস মহামারী আকারে ছড়াচ্ছে চীনে। অভিযোগ উঠেছে, চীনা কর্তৃপক্ষ এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব চেপে রাখতে চাইছে।
ভাইরাসটির নাম আফ্রিকান সোয়াইন ফিভার (এএসএফ)। চীনের সিচুয়ান প্রদেশে এ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে। এ ভাইরাস প্রাথমিকভাবে বহন করে শূকর। পরে তা মানবদেহে ছড়ায়।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, চীনা কৃষি মন্ত্রণালয় বলেছে, সিচুয়ান চীনের বৃহত্তম শূকর উৎপাদন কেন্দ্র। শূকর বহনকারী এক ট্রাকে ১০টি শূকরের মধ্যে এএসএফ ভাইরাস পাওয়া গেছে। এর মধ্যে দুটি এরইমধ্যে মারা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে শূকর অবৈধভাবে স্থানান্তর করতে গিয়ে এ রোগ ছড়িয়েছে।
এক সপ্তাহের ব্যবধানে এএসএফ ছড়িয়ে পড়ার দ্বিতীয় ঘটনা এটি। দক্ষিণ-পশ্চিম সিচুয়ান এবং জিয়ানজিয়াং শহরে এই ভাইরাস ছড়িয়েছে। এক ফার্মে ১২৭ শূকরের মধ্যে ৩৮টিই এএসএফ আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। হুবেই প্রদেশে এক ট্রাকে আরও ১০টি শূকর আক্রান্ত হয়েছে।
গত ৯ মার্চ চীনের কৃষি ও গ্রামীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানায়, ১০টি শুকরবাহী একটি ট্রাকে এএসএফ ভাইরাসটি শনাক্ত করা হয়েছে। ওই শুকরগুলোর মধ্যে দু’টি মৃত ছিল। অবৈধভাবে শুকর পরিবহন করায় ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ছে বলে ধারণা করছে মন্ত্রণালয়।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, খবরে যতটা এসেছে বাস্তব পরিস্থিতি এর চেয়েও খারাপ। চিপ নেলিংগার নামের এক বিশ্লেষক বলেছেন, চীন দেখাতে চাচ্ছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে কিন্তু তা নয়। এটাও করোনার মতো ছড়িয়ে পড়তে পারে বিশ্বব্যাপী, দেখা দিতে পারে নতুন আরেক মহামারি।
রোগটি প্রথম ধরা পড়ে আফ্রিকায়। তাই এমন নামকরণ। ভাইরাসের নামও তাই। বাহক টিক বা এঁটুলি পোকা (অর্নিথোডোরোস)। গত কয়েক বছরে রোগটি ইউরোপ হয়ে ঢুকে পড়ে এশিয়ায়। মহামারীতে গত বছর কয়েক লক্ষ শুয়োরের মৃত্যু হয় চীনে। চিন থেকেই ভারতে এর সংক্রমণ হয়েছিল। গত বছর ভারতের আসামের ২০৫টি গ্রামে এরই মধ্যে প্রায় ২৫০০ বেশি শুয়োরের মৃত্যু হয়েছে।
চিকিৎসকদের কথায়, আফ্রিকান সোয়াইন জ্বর বা এএসএফ হল একটি মারাত্মক রোগ। এই রোগ একবার থাবা বসালে ১০০ শতাংশ শুয়োরের মৃত্যু নিশ্চিত। ২০১৮ -২০২০ সালের মধ্যে চীনে আফ্রিকান সোয়ইন জ্বরের প্রকোপে প্রায় ৬০ শতাংশ শুয়োর নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
১৯২১ সালে প্রথম কেনিয়া আর ইথিওপিয়াতে প্রথম এই রোগের প্রকোপ দেখা গিয়েছিল।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৯২৩
আপনার মতামত জানানঃ