করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ফাইজারের উৎপাদিত ভ্যাকসিনের প্রথম ডোজ দেয়ার পর একজন ক্যান্সার রোগী অন্যদের তুলনায় ‘অনেক কম সুরক্ষিত’ অবস্থায় থাকেন। যুক্তরাজ্যে দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য ১২ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়, আর এই সময়ের মধ্যে একজন ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তির শারীরিক অবস্থা বেশ নাজুক হয়ে পড়তে পারে।
কিংস কলেজ লন্ডন এবং ফ্রান্সিস ক্রিক ইন্সটিটিউটের উদ্যোগে করা এক গবেষণায় এমনটা দেখা গেছে। করোনাভাইরাস টিকার বিষয়ে ক্যান্সার আক্রান্ত মানুষের ওপর গবেষণা চালিয়ে এ ধরণের জরিপ এটাই প্রথম করা হয়েছে। ব্রিটেনে ব্রেস্ট ক্যান্সার সংক্রান্ত দাতব্য সংস্থা ইতিমধ্যেই ভ্যাকসিন দেয়ার নীতিমালা পর্যালোচনার আহ্বান জানিয়েছে।
কিন্তু ক্যান্সার রিসার্চ ইউকে বলছে, এই গবেষণাটি এখনো অন্য বিজ্ঞানীরা নিরীক্ষা করে তাদের মতামত দেননি। একই সঙ্গে যাদের ক্যান্সারের চিকিৎসা চলছে তাদের নিজেদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ-পথ্য চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি।
ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ এবং কিংস কলেজ লন্ডনের গবেষণাটির অন্যতম প্রধান ডা. শীবা ইরশাদ বলেছেন, গবেষণায় প্রাপ্ত ফলাফল ‘রীতিমত উদ্বেগজনক’ এবং ক্লিনিক্যালি নাজুক অবস্থায় থাকা ব্যক্তির স্বার্থে দ্রুত ভ্যাকসিন নীতিমালায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। তিনি বলেন, তার আগ পর্যন্ত, এটা নিশ্চিত করা জরুরি যে ক্যান্সার রোগীরা টিকা নেয়ার পরেও সব ধরনের স্বাস্থ্য বিধি, যেমন সামাজিক দূরত্ব কঠোরভাবে মেনে চলবেন এবং হাসপাতালে যখন যাবেন পুরোপুরি সুরক্ষা নিয়ে যাবেন।
ডা. ইরশাদ বলছেন, “ক্যান্সারের চিকিৎসা প্রক্রিয়া এমনিতেই মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলে, সেই সঙ্গে ক্যান্সার আক্রান্ত ব্যক্তির ইমিউন সিস্টেম দুর্বল থাকে, সে কারণে সতর্কতা দরকার। তিনি বলছেন, এজন্যই তাদের দ্বিতীয় ডোজ তাড়াতাড়ি দেয়া দরকার।
এছাড়া দীর্ঘ সময় এমন রোগীদের ভাইরাসের বিরুদ্ধে অরক্ষিত রাখার ফলে যারা অসুস্থ ব্যক্তির দেখাশোনার কাজ করেন তাদের মধ্যে কোভিড-১৯ এর নতুন ভ্যারিয়ান্ট ছড়িয়ে পড়ার আশংকা তৈরি হয়। যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই নেই তাদেরকে এই ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
যুক্তরাজ্যে ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রমের প্রথম ধাপে দেশটির প্রায় ১২ লক্ষ মানুষ যারা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হলে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ার স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
ডিসেম্বরের শেষদিকে প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ টিকা গ্রহণের মধ্যবর্তী সময়ের সীমা তিন সপ্তাহ থেকে বাড়িয়ে ১২ সপ্তাহে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাজ্যের সরকার। এর পেছনে কারণ ছিল যাতে এই সময়ের মধ্যে আরো বেশি সংখ্যক মানুষকে প্রয়োজনীয় সুরক্ষার আওতায় আনা সম্ভব হয়।
প্রসঙ্গত, ফাইজারের টিকার ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে দেখা গেছে, এটি একজন সুস্থ মানুষের শরীরে ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত ভাইরাস প্রতিরোধী সুরক্ষা তৈরি করে।
এদিকে বাংলাদেশে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে আরও ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল আট হাজার ৫০২ জনে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫১ জন। সবমিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫ লাখ ৫৪ হাজার ১৫৬ জনে।
বৃহস্পতিবার বিকেলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. নাসিমা সুলতানা স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে আরও বলা হয়, নতুন করে ভাইরাসটি থেকে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৩০৭ জন। এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছেন ৫ লাখ ৭ হাজার ৯২০ জন।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৭৩৮
আপনার মতামত জানানঃ