নোয়াখালীর বসুরহাটে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষ ও গোলাগুলির প্রেক্ষিতে গতকাল সারাদিন সেখানে ১৪৪ ধারা জারি ছিল। বসুরহাটের পর এবার বগুড়ার ধুনটে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের সমাবেশকে ঘিরে উত্তপ্ত অবস্থা বিরাজ করছে। এরই প্রেক্ষিতে বগুড়ার ধুনটে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। সহিংসতার আশঙ্কা দেখা দেওয়ায় ধুনট পৌরসভার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও মুজিব মঞ্চ এবং আশপাশের ৪০০ গজ এলাকায় বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সব ধরনের সভা, সমাবেশ নিষিদ্ধ করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মোহন্ত। ইউএনও জানান, বুধবার মধ্যরাতে এ আদেশ জারি করা হয়েছে।
থানা সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে মুজিব চত্বর এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ আহ্বান করেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ স্বপন। একই সময় একইস্থানে পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য রাসেল খন্দকার পাল্টা বিক্ষোভ সমাবেশ আহ্বান করেন। ছাত্রলীগের দু’পক্ষের বিক্ষোভ সমাবেশকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম উত্তেজনা দেখা দেয় এবং বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে মুজিব চত্বর এলাকায় বিকট শব্দে পর পর ৭টি ককটেল বিস্ফোরিত হয়।
সংঘাত এড়াতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সঞ্জয় কুমার মহন্ত বুধবার মধ্যরাতে ১৪৪ ধারা জারি করেন। এরপর মাইকিং করে জানিয়ে দেওয়া হয়।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার সঞ্জয় কুমার মহন্ত বলেন, একই জায়গায় দুই পক্ষের সভা-সমাবেশকে কেন্দ্র করে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির যথেষ্ট অবনতি হওয়ার অশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে মুজিব চত্বর ও তার আশপাশের এলাকায় সব ধরনের সভা, সমাবেশ, মিটিং, মিছিল ও গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
ধুনট থানার ওসি কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, মুজিব চত্বর এলাকায় ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া মুজিব চত্বর ও আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, ধুনটে আধিপত্য বিস্তার ও পৌর নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পড়েছেন। একপক্ষে বগুড়া-৫ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবর রহমানের অনুসারীরা এবং অন্যপক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ টিআইএম নুরুন্নবী তারিক ও তার লোকজন। এ নিয়ে তারিক প্রতিপক্ষের ৮-৯ জন নেতাকর্মীকে সংগঠন থেকে বহিস্কার করেন।
এ সব ঘটনায় থানায় পাল্টিপাল্টি মামলা হয়েছে। সব নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
মামলার প্রতিবাদে তারিক গ্রুপের উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু সালেহ স্বপন বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় শহীদ মিনার চত্বরে সমাবেশ আহ্বান করেন।
অপরদিকে এমপি গ্রুপের পৌর ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য রাসেল খন্দকার একই সময় ও স্থানে পাল্টা সমাবেশের ডাক দেন। তারা যেকোনো মূল্যে শহীদ মিনার চত্বরে সমাবেশ সফল করার ঘোষণা দেয়। পাল্টা পাল্টি সমাবেশ আহবান করায় উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। এরই প্রেক্ষিতে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
এদিকে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাটে জারি করা ১৪৪ ধারার সময় পার হয়েছে। তবে এখনো কঠোর অবস্থানে আছে প্রশাসন। নতুন করে যাতে সেখানে কোনো ধরনের সহিংসতার ঘটনা না ঘটতে পারে, সে জন্য মোতায়েন করা হয়েছে ৩০০ পুলিশ (১০০ জন করে পর্যায়ক্রমে) এবং ১৬ জন র্যাব সদস্য। জেলা পুলিশের পাশাপাশি রাঙামাটি থেকে আনা হয়েছে ২০০ জন পুলিশ সদস্য। রয়েছেন পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং প্রশাসনের একজন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বসুরহাটের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোয় অবস্থান নিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা।
বসুরহাটের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা প্রশাসন ১৪৪ ধারা জারি করে। এর মেয়াদ শেষ হয়েছে বুধবার রাত ১২টায়।তবে কোনও সহিংসতা যেন না ঘটতে পারে তার ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন।
বসুরহাটে থাকা বেগমগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শাহ ইমরান জাতীয় এক দৈনিককে আজ সকালে বলেন, বসুরহাটের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ সকাল থেকে অবস্থান করছে। পাশাপাশি পুলিশের একাধিক মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক টহলে রয়েছে। টহল দিচ্ছেন র্যাবের সদস্যরাও। বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জাকে ১৫-২০ জন অনুসারী নিয়ে সকাল থেকে বিভিন্ন সড়কে ঘুরে বেড়াতে দেখা গেছে। সার্বিক পরিস্থিতি শান্ত। কোথাও কোনো সমস্যা নেই।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগে বিরোধী দলের সাথে আদিপত্য বিস্তার নিয়ে সরকারি দলের এমন চিত্র দেখা যেত। এখন দেশে কোনো বিরোধী দল নেই। মাঠে সরকারি বিরোধী এখন আওয়ামী লীগ সরকারই। বিরোধী দল না থাকায় স্বাভাবিকভাবে দলটিতে বিভক্তির তৈরী হবে আর এমন সংঘর্ষে আধিপত্যে বিস্তারে নিজেদের ক্ষমতা জানান দেবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৩৪
আপনার মতামত জানানঃ