এক সময়ের খরস্রোতা পাটেশ্বরী নদীটি এখন মৃতপ্রায়। কয়েক বছর আগেও এই নদীপথ দিয়ে চলতো ছোট-বড় অসংখ্য নৌকা। সারা বছরই পানিতে ভরা থাকত এই নদী। পাল তুলে চলত নৌকা। নওপাড়া বাজার সহ বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীরা স্বল্প খরচে পন্য আমদানী রপ্তানি করতে পারতেন। কৃষকরা নদীর দুপাশের জমিতে নির্বিঘ্নে সেচ দিতে পারতেন। কোন বাধাই ছিলনা কোথাও। এখন নদী শাসনের ফলে খরস্রোতা নদী ভরাট হয়ে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ফসলের মাঠ।
পাটেশ্বরী নদীটি নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার দলপা ইউনিয়ন থেকে বলাইশিমুল ইউনিয়নের বসুর বাজার হয়ে নওপাড়া ইউনিয়নের বাজারের পাশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। সারা বছরই এই নদীতে বাঁশ দিয়ে বাঁধ দিয়ে স্থানীয় প্রভাবশালীরা মাছ ধরেন। উপজেলা প্রশাসন, ভূমি অফিস, পুলিশ বার বার নোটিশ দিয়ে বাঁধ না দেওয়ার জন্য বললেও তা কোন কাজেই আসছে না। সম্প্রতি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. খবিরুল আহসান ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে নদীর বাঁধ অপসারণ করেছিলেন। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই আবার বাঁধ দেয় প্রভাবশালীরা।
নদীর দুই পাশের কৃষকরা জানান, এই নদীর পানি দিয়ে সারা বছর নিত্য প্রয়োজনীয় কাজ করা যেত। এছাড়া বোরো ফসলের মাঠে সেচ দেওয়ার জন্য পানির কোন চিন্তাই করতে হতো না। কিন্তু এখন আর নদীর বুকে সেচ দেওয়ার মতো পানি নেই।
তারা জানান, এক সময় এই নদীতে সারা বছরই জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতে পারত। কিন্তু এখন প্রভাবশালীদের বাঁধায় তারা আর নদীতে মাছ ধরতে পারে না। ফলে প্রকৃত মৎস্যজীবীরা এখন বেকার। নদীতে ময়লা আবর্জনা ফেলাসহ স্থানে স্থানে বাঁধ দেওয়ার ফলে স্রোত কমে পলি পড়ে নদী ভরাট হয়ে গেছে।
মস্যজীবী জুনায়েদ মিয়া জানান, এই নদীতে মাছ ধরে এবং তা বিক্রি করেই জেলেদের সংসার চলতো। কিন্তু এখন নদীতে পানি নাই। মাছও নাই। তাই জেলেরা কর্মহীন অবস্থায় বেকার ও পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে।
তাই অবিলম্বে সাইডুলী নদী খনন করে নদীর পানি প্রবাহ ফিরিয়ে দেওয়া, স্থানীয় জেলেদের কর্মসংস্থান ও এলাকার কৃষকদের চাষাবাদের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্যও তিনি সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।
কেন্দুয়া সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ সাজ্জাদ হোসেন জানান, নদীটি ভরাট হয়ে যাওয়ায়, এই নদীতে মাছ ধরা যাচ্ছেনা। নদীটি খনন করার যথেষ্ঠ প্রয়োজনীয়তা আছে বলে তিনি দাবী করেন।
এদিকে কেন্দুয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি মোঃ খবিরুল আহসান বলেন, নদীর ভিতরে ব্যক্তি মালিকানা কোন জায়গা নেই। যারা এই জমি দখল করে চাষাবাদ করছেন, তাদের জানা দরকার এই নদী সরকারের। সকল জনগনের এই নদী ব্যবহারের অধিকার রাখেন। তিনিও পাটেশ্বরী এই নদীটি জরুরী ভাবে খনন করা হলে কৃষক সহ সকল শ্রেনী পেশার মানুষের অনেক উপকারে আসবে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেভাবে দখলদার দ্বারা নদী দখল হচ্ছে যা সত্যিই হতাশাজনক। নদীকে দূষণমুক্ত করা নিয়ে পরিবেশবাদীরা অনেক আন্দোলন করলেও বিষয়টি নিয়ে সরকারের কোন সদিচ্ছা লক্ষ্য যায় না। পাটেশ্বরী রক্ষার্থে তারা সরকারের বিশেষ দৃষ্টির কামনা করেন। একইসাথে অবৈধ দখলদার ও দূষণে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৯৩০
আপনার মতামত জানানঃ