নারায়ণগঞ্জের বহুল আলোচিত মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার আজ ৮ বছর পূর্ণ হলো। দীর্ঘ ৮ বছর পার হলেও মামলার এখনো কোনো কূলকিনারা হয়নি। এতো বছর পেরিয়ে গেলেও মামলার তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা দিতে পারেনি র্যাব। চাঞ্চল্যকর ও লোমহর্ষক হত্যাকাণ্ড হিসেবে মনিটরিং সেলে অর্ন্তভুক্ত হলেও এখনও মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থা র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। নিহত ত্বকীর স্বজন ও নারায়ণগঞ্জের বিশিষ্ট নাগরিকদের অভিযোগ, জেলার একটি প্রভাবশালী পরিবারের কারণে এই মামলার অভিযোগপত্র দেওয়া হচ্ছে না।
এত বছরেও অভিযোগপত্র না দেওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মামলার বাদী ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বি। তার দাবি আসামিরা সরকারি দলের লোক হওয়ার কারণে র্যাব তদন্ত প্রতিবেদন চুড়ান্ত করার পরও আদালতে জামা দিচ্ছে না।
হত্যাকাণ্ডেরর এক বছর না যেতেই সংবাদ সম্মেলন করে যেখানে র্যাব বলেছিল কার নির্দেশে, কোথায়, কীভাবে ত্বকী খুন হয়েছিল, সেখানে আট বছর পরও বলছে, ‘তদন্ত চলছে’।
নিহত ত্বকীর বাবা ও মামলার বাদী রফিউর রাব্বির দাবি- তদন্তকারী সংস্থা র্যাব মামলার খসড়া চার্জশিট প্রকাশ করলেও সরকারের প্রভাবে মূল চার্জশিট দিচ্ছে না।
আর তদন্তকারী সংস্থা র্যাব বলছে, আইনের ভাষায় খসড়া চার্জশিট বলে কোনো শব্দ নেই। খুব শিগগিরই মামলাটির তদন্ত কাজ শেষ করা হবে।
এ তদন্ত কবে শেষ হবে, তার কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারেনি র্যাব। ত্বকীর বাবা বলছেন, ‘তদন্ত প্রথম বছরেই শেষ। নতুন করে কী তদন্ত করবে। একমাত্র প্রধানমন্ত্রী চাইলেই ত্বকী হত্যার বিচার হবে, অন্যথায় সম্ভব না।’
ত্বকীর বাবা রফিউর রাব্বী জাতীয় এক দৈনিককে বলেন, ‘আমাদের সংবিধানে বাধ্যবাধকতা আছে ৬০ দিনের মধ্যে অভিযোগপত্র দিতে হবে। কিন্তু, আজকে আট বছরেও ত্বকী হত্যার অভিযোগপত্র দেওয়া হয়নি। ত্বকী হত্যাকাণ্ডের এক বছরের মধ্যেই তদন্তকারী সংস্থা র্যাব সমস্ত রহস্য উদঘাটনের দাবি জানায় এবং কারা তাকে হত্যা করেছে, কেন করেছে, কোথায় করেছে সব কিছু সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়ে যে অভিযোগপত্র তারা তৈরি করেছে, সেটা আদালতে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু, সেই অভিযোগপত্র আজও পর্যন্ত তারা দেয়নি।’
তিনি বলেন, ‘ত্বকীর ঘাতকরা যেহেতু এ সরকার দলের সঙ্গে ও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট, সেহেতু এ অভিযোগপত্রটা আটকে রাখা হয়েছে। আমাদের দেশের বাস্তবতাটা হচ্ছে এরকম যে, কোনো কিছুই প্রধানমন্ত্রীর আদেশ-নির্দেশ ছাড়া হয় না। বিচার যখন না হয়, তখন বুঝি যে প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছার কারণেই বিচারটা আটকে আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া এ বিচার হওয়া সম্ভব না। কারণ, ২০১৪ সালের ৩০ এপ্রিল শামীম ওসমানের ভাই সংসদ সদস্য নাসিম ওসমান মারা যাওয়ার পর জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী ওসমান পরিবারের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছিলেন। এরপর থেকেই ত্বকী হত্যার তদন্ত কার্যত থেমে যায়। আর তাই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেলেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ত্বকীর খুনিদের ধরতে দ্বিধা করবে না। তাই ত্বকী হত্যার বিচার পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
র্যাবের দাবি তদন্ত চলছে?, তিনি বলেন, ‘র্যাব সাত বছর আগেই তদন্ত শেষ করেছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এ অভিযোগপত্রটি আটকে রেখেছে। এখন র্যাব কি বলবে যে প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ বা ইচ্ছায় আমরা আটকে রেখেছি? তাই তারা জটিল, তদন্ত চলছে এসব বলছে।’
অভিযোগ রয়েছে, শুরুর দিকেই প্রশ্নবিদ্ধ তদন্তের কারণে এই হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত অপরাধীরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। বিশেষ করে এই মামলার দুইজন আসামির আদালতে দেওয়া দুই ধরনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি মামলাটিকে অনেক বেশি জটিল করে তুলেছে।
ত্বকী হত্যার ৮ বছরে ৪ দিনের কর্মসূচি
ত্বকী হত্যার আট বছর পূর্ণ হওয়ায় ৫, ৬, ৮ ও ২০ মার্চ নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকায় বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে।
সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ জানায়, ৫ মার্চ শুক্রবার বিকেল ৩টায় আলী আহাম্মদ চুনকা নগর মিলনায়তনের সামনে সমাবেশ হয়েছে। ৬ মার্চ শনিবার সকাল ৯টায় বন্দর উপজেলার সিরাজ শাহর আস্তানা কবরস্থানে ত্বকীর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ, ফাতেহা পাঠ ও মিলাদ মাহফিল হয়। আজ ৮ মার্চ বিকেল ৫টায় সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে শীতলক্ষ্যা নদীর পাঁচ নম্বর খেয়াঘাটে আলোর ভাসান। ২০ মার্চ শনিবার বিকেল ৩টায় ঢাকায় জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ‘জাতীয় ত্বকী চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতা ২০২০’র পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান।
প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে ২৩ বিশিষ্টজনের বিবৃতি
নারায়ণগঞ্জের মেধাবী ছাত্র তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার বিচারে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও হস্তক্ষেপ চেয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দেশের ২৩ জন বিশিষ্ট নাগরিক বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেন ভাষাসৈনিক, লেখক ও গবেষক আহমদ রফিক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, রবীন্দ্র-গবেষক শিক্ষাবিদ ড. সন্জীদা খাতুন, চিত্রশিল্পী ও ভাষাসৈনিক মুস্তাফা মনোয়ার, শিক্ষাবিদ ও কথাসাহিত্যিক অধ্যাপক হাসান আজিজুল হক, লেখক অধ্যাপক যতীন সরকার, শিক্ষাবিদ ড. হায়াৎ মামুদ, শিক্ষাবিদ ড. সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী, শিক্ষাবিদ অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক, মানবাধিকার সংগঠক সুলতানা কামাল, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ডা. সারোয়ার আলী, শিক্ষাবিদ ও গবেষক ড. সফিউদ্দিন আহমদ, শিক্ষাবিদ ও লেখক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ, শিক্ষাবিদ অধ্যপক শফি আহমেদ, নারী অধিকারকর্মী ও লেখক ড. মালেকা বেগম, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ও লেখক-গবেষক মফিদুল হক, মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও অর্থনীতিবিদ অধ্যপক এম এম আকাশ, আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।
বিবৃতিতে বিশিষ্ট ব্যক্তিরা বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের মেধাবী কিশোর তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যার আট বছর পূর্ণ হচ্ছে আগামী ৬ মার্চ। এই দীর্ঘ সময়েও আলোচিত এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের অভিযোগপত্র আদালতে পেশ না করায় আমরা মর্মাহত, সংক্ষুব্ধ। এটি অত্যন্ত পরিতাপের ও বেদনার। হত্যাকাণ্ডের বছর না যেতেই এর তদন্তকারী সংস্থা হত্যার সব রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেছিল, যা আমরা সংবাদমাধ্যমে জেনেছি। তারা অপরাধী, অপরাধের স্থান-কাল-কারণসহ বিস্তারিত প্রকাশ করেছিল। কিন্তু তারপরও দীর্ঘ সময়ে সেই অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করা হয়নি। এ বিচার না হওয়ায় অপরাধীরা যেমনি উৎসাহিত হচ্ছে, অপর দিকে স্বাধীন বিচার ব্যবস্থাও প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। একটি বিচারহীনতা অসংখ্য বিচারহীনতার পথ তৈরি করে দেয়। বছরের পর বছর বিচার বন্ধ হয়ে থাকা কখনো কাম্য হতে পারে না।
মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে এমনটি আমাদের কাম্য নয়। আমরা অভিযোগপত্র আদালতে জমা দিয়ে এই বিচারপ্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর যথাযথ নির্দেশনা ও হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
ত্বকি হত্যা
২০১৩ সালের ৬ মার্চ সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ হয় ত্বকী। এ ঘটনায় ত্বকির বাবা রফিউর রাব্বি রাতেই নারায়ণগঞ্জ সদর থানায় সাধারণ ডায়েরিতে উল্লেখ করেন- তার ও তার ছেলের কোনো শত্রু নেই। একদিন পর ৮ মার্চ সকালে ত্বকীর মরদেহ পাওয়া যায় শহরের শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদীনি এলাকায়।
ত্বকী শহরের চাষাঢ়ায় এবিসি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের শিক্ষার্থী ছিল। ২০১৩ সালের ৭ মার্চ (নিখোঁজের একদিন পর ও মরদেহ উদ্ধারের একদিন আগে) এ লেভেল পরীক্ষার রেজাল্টে পদার্থবিজ্ঞানে ৩০০ নম্বরের মধ্যে ২৯৭ পেয়েছিল ত্বকী। যা সারাদেশে সর্বোচ্চ। এ ছাড়া, ও লেভেল পরীক্ষাতেও সে পদার্থ বিজ্ঞান ও রসায়ন পরীক্ষাতে দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়েছিল।
৮ মার্চ রাতেই ত্বকীর পিতা বাদী হয়ে নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানায় দণ্ডবিধি ৩০২/৩৪ ধারায় আসামি অজ্ঞাত উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন এবং ১৮ মার্চ জেলা পুলিশ সুপারের কাছে ত্বকী হত্যার জন্য তিনি শামীম ওসমান ও তার ছেলে অয়ন ওসমানসহ আট জনের নাম উল্লেখ করে একটি অবগতিপত্র দেন। তদন্তে মামলাটির আশানুরূপ অগ্রগতি না হওয়ায় ২০১৩ সালের ২৮ মে উচ্চ আদালতের নির্দেশে র্যাব ত্বকী হত্যা মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করে।
রফিউর রাব্বি বলেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রুটে চলাচলকারী বিভিন্ন পরিবহনের মালিকেরা ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ করেন। তিনি এই চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করায় তাঁকে শায়েস্তা করতে ছেলেকে খুনের পরিকল্পনা করা হয়। র্যাবের তদন্তে এসব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। গণমাধ্যমেও তা প্রকাশিত হয়েছে।
ত্বকী হত্যা মামলাটি প্রথমে তদন্ত করে পুলিশ। পরে রফিউর রাব্বির রিট পিটিশনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের নির্দেশে মামলাটি র্যাবের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে র্যাব ইউসুফ হোসেন ওরফে লিটন, সুলতান শওকত ও তায়েবউদ্দিন ওরফে জ্যাকিকে গ্রেপ্তার করে। তাদের মধ্যে ইউসুফ ও সুলতান শওকত আদালতে দোষ স্বীকার করে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন।
দুই রকম জবানবন্দিতে মামলা জটিল
২০১৪ সালের ২৯ জুলাই ইউসুফ হোসেন লিটন নামে একজন আসামি সর্বপ্রথম এই মামলায় আদালতে জবানবন্দি দেন। লিটন সেখানে নিহত ত্বকী হত্যার সঙ্গে সরাসরি জড়িত বলে স্বীকার করে সালেহ রহমান সীমান্ত নামে এক যুবকের বাড়িতে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দেন। সেখানে কোথাও ওসমান পরিবারের কোনো সদস্যের নাম ছিল না। কিন্তু বিপত্তি ঘটে যখন র্যাবের হাতে আটক সুলতান শওকত ভ্রমর নামে অপর এক আসামি ওই বছরের ১২ নভেম্বর আদালতে জবানবন্দিতে জানান, ত্বকীকে আজমেরী ওসমানের অফিসে হত্যা করে মরদেহ বস্তাবন্দি অবস্থায় নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। দুই আসামির এমন দুই রকম জবানবন্দি র্যাবের তদন্ত কাজকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।
২০১৪ সালের ২০ মার্চ নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পেয়েই নারায়ণগঞ্জ ও পরে দেশ ত্যাগ করেন ভ্রমর। তিনি এখনো দেশের বাইরে। আদালত এখনো ভ্রমরের বিরুদ্ধ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রেখেছে। বাকিরা সবাই জামিনে বের হয়ে হাজিরা দিয়ে যাচ্ছেন।
তদন্তকারী সংস্থার বক্তব্য
তদন্তকারী সংস্থা র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল খন্দকার সাইফুল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, তদন্ত চলমান রয়েছে। জটিল মামলা, তাই সময় লাগছে। দৃশ্যমান না হলেও কাজ হচ্ছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতনরাও তদারকি করছেন। সার্বক্ষণিক এ বিষয়ে তাদের জানানো হচ্ছে।
তিনি বলেন, চার্জশিট দেওয়ার সময় সুনির্দিষ্টভাবে বলা সম্ভব না। তবে কাজ চলছে। যখনই শেষ হবে, তখনই জমা দেওয়া হবে।
আপনাদের কার্যক্রমে কোনো চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে কি না?, তিনি বলেন, ‘কোনো চাপ নেই। র্যাবের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারবে না জেনেই তদন্তভার র্যাবকে দেওয়া হয়। আমরা আইনগত প্রক্রিয়ায় সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে তদন্তকাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’
এই হত্যাকাণ্ডের এক বছর না যেতেই সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দেওয়া হলো শিগগিরই অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। তাহলে এখন কেন এত সময় লাগছে?, র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কর্মকর্তা বদলি হয়, নতুন আসে, এজন্যেও সময় লাগছে। দৃশ্যমান না হলেও কাজ চলছে।’
বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য
অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ত্বকী হত্যার বিচার হচ্ছে না কেনো এটা সবারই জানা। কারো হস্তক্ষেপে এই বিচারটি হচ্ছে না, এটা খুব দুঃখজনক। যে ব্যাক্তিটির হস্তক্ষেপে এ্ বিচারটি হচ্ছে না তিনি দেখলাম ওই দিন আবরার হত্যারকারীদের জন্য আফসোস করছেন। তাদের পরিবারের জন্য সমাবেদনা জানাচ্ছেন। তাহলে এই লোকটির বিবেকবোধ কেমন হবে সেটা অনুমান করা যায়।
শিক্ষাবিদ অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম বলেন, একটি ঘটনার যদি বিচার না হয় তাহলে হাজারো ঘটনার জন্ম হয়। দেশে এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি গড়ে উঠছে। এই জায়গা থেকে বের হয়ে আসতে না পারলে সামনের দিকে আরো অন্ধকার দেখবে ভবিষৎ।
শিক্ষাবিদ ও গবেষক অধ্যাপক হায়াৎ মাহমুদ বলেন, ত্বকীকে জীবন দিতে হলো তার বাবার জন্য। একটি গোষ্ঠী তার বাবা’কে সারাজীবনের জন্য শেষ করে দিতেই তাকে হত্যা করেছে। কি ভয়ংকর ব্যাপার। অথচ তার বিচার হচ্ছে না এতো বছর পরও।
ত্বকী হত্যাকাণ্ডের পর থেকে এখনো বিচার দাবিতে সোচ্চার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভী। তিনি জাতীয় এক দৈনিককে বলেন, ‘বিষয়টা দুঃখজনক যে এখনো পর্যন্ত আমরা ত্বকী হত্যার বিচার পেলাম না। এ সরকার অনেকগুলো আলোচিত হত্যাকাণ্ডের বিচার করেছে। কিন্তু, ত্বকী হত্যার বিচারের কাজ শুরু হচ্ছে না। এটার জন্য আমরা ক্ষুব্ধ ও মর্মাহত। আমরা আশা করি, সরকার ত্বকী হত্যাকারীদের বিচার করবে এবং যারা প্রকৃত অপরাধী তাদের গ্রেপ্তার করে শাস্তি নিশ্চিত করবে।’
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৩২
আপনার মতামত জানানঃ