বিশ্বজুড়ে করোনার টিকা দেওয়া শুরুর পর থেকে কমতে শুরু করেছিল সংক্রমণ। টানা ছয় সপ্তাহ বিশ্বে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ছিল নিম্নমুখী। মৃত্যুর সংখ্যাও কমেছিল উল্লেখযোগ্য হারে। তবে চলতি সপ্তাহে ফের বাড়তে শুরু করেছে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা। এর মধ্যে ইউরোপে টিকার ঘাটতি নিয়ে ক্ষোভ সত্ত্বেও অনেক মানুষ সুযোগ পেয়েও টিকা নিতে নারাজ৷ অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার ভাবমূর্তির সমস্যার কারণে টিকাদান কর্মসূচি সংকটের মুখে পড়ছে।
জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়েচে ভেলে এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, টিকা কেনা ও বণ্টনের ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতার অভিযোগের মুখে পড়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ সমালোচকদের মতে, ব্রাসেলস ঠিক সময়ে, সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ও যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে করোনা ভাইরাসের টিকা সংগ্রহের উদ্যোগ নিলে আজ এমন ঘাটতি দেখা যেত না৷ সেই সঙ্গে ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেও সমস্যা দেখা যাচ্ছে৷ অর্থাৎ যে টিকা হাতে এসে গেছে, সেগুলিও অনেক ক্ষেত্রে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না৷ তার উপর নানা কারণে অ্যাস্ট্রাজেনিকা কোম্পানির টিকা নিয়ে বিভ্রান্তি ও সংশয়ের ফলে অনেক মানুষ সুযোগ পেয়েও সেই টিকা নিতে অস্বীকার করছেন৷
জার্মানি ও ফ্রান্স অ্যাস্ট্রাজেনিকা টিকার নেতিবাচক ভাবমূর্তি দূর করে মানুষকে সেটির কার্যকরিতা বোঝানোর চেষ্টা করছে৷ দুই দেশের সরকারই বার বার আশ্বাস দিচ্ছে, যে ফাইজার-বায়োনটেক ও মডার্না কোম্পানির টিকার মতোই অ্যাস্ট্রাজেনিকা অত্যন্ত কার্যকর৷ ফ্রান্সে কোনো জটিলতা ছাড়াই সরাসরি ডাক্তারের চেম্বারে এই টিকা দেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ অথচ ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ পর্যন্ত দেওয়া প্রায় ১৭ লাখ টিকার মধ্যে অ্যাস্ট্রাজেনিকার অনুপাত ছিল মাত্র ২৭৩,০০০৷ ফ্রান্সের কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার (৩মার্চ) থেকে এমনকি ৬৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষের জন্যও অ্যাস্ট্রাজেনিকা টিকার ছাড়পত্র দিচ্ছে৷ সংশয় কাটাতে খোদ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও পেশায় ডাক্তার ওলিভিয়ে ভেরঁ টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে এই টিকা নিয়েছেন৷
এ ছাড়া টিকার সরবরাহ ও বণ্টনের সঙ্গে সঙ্গে গোটা দেশে দ্রুত করোনা পরীক্ষার সুযোগও বেড়ে যাওয়ায় লকডাউন শিথিল করার জন্য চাপের মুখে পড়ছে কর্তৃপক্ষ। তবে করোনা ভাইরাসের আরও ছোঁয়াচে সংস্করণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ায় সরকার ও প্রশাসন এখনই সব বাধানিষেধ তুলে নিতে চাইছে না। সে ক্ষেত্রে দৈনিক সংক্রমণের হার আবার দ্রুত বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের চতুর্থ প্রবাহের শঙ্কা করছে দেশটির ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) প্রধান ডা. রোচেল ওয়ালেনস্কি। সম্প্রতি করোনা সংক্রমণ তথ্যের ওপর নির্ভর করে তিনি এ শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ডা. রোচেল ওয়ালেনস্কি বলেছেন, ব্রিটেন, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন ধরণ যুক্তরাষ্ট্রেও ছড়িয়ে পড়ছে। মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ অধিদপ্তর (সিডিসি) আশঙ্কা করছে করোনার নতুন ধারাগুলোর মধ্যে বি.১.১.৭ যুক্তরাষ্ট্রে করোনার চতুর্থ ঢেউ তৈরি করবে।
করোনার বেশ কিছু ভিন্ন সংস্করণ বা ভ্যারিয়ান্টস আছে। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা হাতে গোণা কয়েকটি ভ্যারিয়ান্ট নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। এসব ভ্যারিয়ান্ট প্রথম শনাক্ত হয়েছে ব্রিটেন, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে। এগুলো তুলনামূলকভাবে উচ্চহারে ছড়ায়। সিডিসি পূর্বাভাস দিয়েছে ব্রিটেনে পাওয়া করোনার B.1.1.7 ভ্যারিয়ান্ট চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রে শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এমনকি এই ধারাটির বিরুদ্ধে টিকার সক্ষমতা ও কার্যকারীতা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে।
সিডিসি প্রধান রোচেল ওয়ালেনস্কাই আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, গত এক সপ্তাহে এক দিনে ৭০ হাজার নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই সংখ্যাটি আমাদের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি। একইসময়ে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার প্রাণহানি হয়েছে। সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। নতুন ধারাটি যেভাবে দ্রতগতিতে ছড়াচ্ছে তাতে আমাদের এতোদিনের পরিশ্রম ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই নতুন ধারাগুলো আমাদের করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪১৯
আপনার মতামত জানানঃ