যুক্তরাষ্ট্রে করোনাভাইরাসের চতুর্থ প্রবাহের শঙ্কা করছে দেশটির ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) প্রধান ডা. রোচেল ওয়ালেনস্কি। সম্প্রতি করোনা সংক্রমণ তথ্যের ওপর নির্ভর করে তিনি এ শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ডা. রোচেল ওয়ালেনস্কি বলেছেন, ব্রিটেন, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনার নতুন ধরণ যুক্তরাষ্ট্রেও ছড়িয়ে পড়ছে। মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ অধিদপ্তর (সিডিসি) আশঙ্কা করছে করোনার নতুন ধারাগুলোর মধ্যে বি.১.১.৭ যুক্তরাষ্ট্রে করোনার চতুর্থ ঢেউ তৈরি করবে।
করোনার বেশ কিছু ভিন্ন সংস্করণ বা ভ্যারিয়ান্টস আছে। তবে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা হাতে গোণা কয়েকটি ভ্যারিয়ান্ট নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন। এসব ভ্যারিয়ান্ট প্রথম শনাক্ত হয়েছে ব্রিটেন, দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলে। এগুলো তুলনামূলকভাবে উচ্চহারে ছড়ায়। সিডিসি পূর্বাভাস দিয়েছে ব্রিটেনে পাওয়া করোনার B.1.1.7 ভ্যারিয়ান্ট চলতি মাসে যুক্তরাষ্ট্রে শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এমনকি এই ধারাটির বিরুদ্ধে টিকার সক্ষমতা ও কার্যকারীতা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে।
সিডিসি প্রধান রোচেল ওয়ালেনস্কাই আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, গত এক সপ্তাহে এক দিনে ৭০ হাজার নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে। এই সংখ্যাটি আমাদের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি। একইসময়ে প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার প্রাণহানি হয়েছে। সবাইকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমার কথা মনোযোগ দিয়ে শুনুন। নতুন ধারাটি যেভাবে দ্রতগতিতে ছড়াচ্ছে তাতে আমাদের এতোদিনের পরিশ্রম ব্যর্থ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এই নতুন ধারাগুলো আমাদের করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধ ব্যবস্থার জন্য ঝুঁকি তৈরি করেছে।’
এদিকে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের (স্ট্রেইন) বিরুদ্ধে কার্যকর টিকা এ বছরের মধ্যেই চলে আসবে বলে আশা করছে ওষুধ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান অ্যাস্ট্রাজেনেকা। প্রতিষ্ঠানটি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যৌথভাবে উদ্ভাবিত টিকার উৎপাদন চালিয়ে যাচ্ছে। অ্যাস্ট্রাজেনেকার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের উদ্ভাবিত কোভিড-১৯ ঠেকানোর টিকার নতুন সংস্করণ চলতি বছরের মাঝামাঝি বা বছরের শেষ দিকে প্রস্তুত হয়ে যাবে।
সিডিসির তথ্য বলছে, ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশটিতে করোনার টিকার সাত কোটি ৬০ লাখ ডোজ দেওয়া হয়েছে। তবে জনসংখ্যার হিসাবে, গড়ে প্রতি ১০০ জনকে টিকা দেওয়ার হিসাব করলে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান চতুর্থ স্থানে। যুক্তরাজ্য, আরব আমিরাত ও ইসরাইলের পরেই বিশ্বের শীর্ষ অর্থনীতির দেশটির অবস্থান। দেশটি মর্ডানা, ফাইজার-বায়োএনটেক ও জনসন এন্ড জনসনের তৈরি টিকার অনুমোদন দিয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে মোট করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ২ কোটি ৯৩ লাখ ১৪ হাজার ২৫৪ জন, মারা গেছেন ৫ লাখেরও বেশি লোক।
উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যে পাওয়া করোনার নতুন ধরন নিয়ে দুশ্চিন্তা শুরু হয়েছে বিশ্বব্যাপী। ইতোমধ্যে অন্যান্য দেশেও পাওয়া গেছে উচ্চ সংক্রমিত এই নতুন ধরন। কানাডায় দুই ব্যক্তির শরীরে পাওয়া যায় করোনার নতুন ধরন। ছয় ভারতীয়র শরীরেও করোনার এই নতুন ধরন পাওয়া গেছে বলে মঙ্গলবার দেশটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
এর আগে শনিবার জাপানে দুই ব্যক্তির শরীরে করোনার নতুন ধরন শনাক্ত হয়েছে বলে জানা যায়। এ ছাড়া ফ্রান্স ও হংকংয়েও এই নতুন করোনা শনাক্তের খবর পাওয়া যায়। করোনাভাইরাসের নতুন স্ট্রেইন নিয়ে বেশ চাপে রয়েছে ইউরোপের বিভিন্ন দেশসহ পুরো বিশ্ব। সংক্রমণ ঠেকাতে বিভিন্ন দেশে নতুন করে লকডাউনও ঘোষণা করা হয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৯৫৯
আপনার মতামত জানানঃ