যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের তিন বন্দি কিশোর হত্যা মামলায় কেন্দ্রের ৪ কর্মকর্তাসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ। একইসঙ্গে জড়িত অপ্রাপ্তবয়স্ক অপর চার শিশুর বিরুদ্ধে দোষীপত্র দাখিল করা হয়েছে। এছাড়া একজনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) এ চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যশোর শহরের চাঁচড়া ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. রকিবুজ্জামান। শুক্রবার এ মামলার চার্জশিট দেয়া হলেও কাগজে-কলমে উল্লেখ করা হয় ৯ ফেব্রুয়ারি।
চার্জশিটে অভিযুক্ত চার কর্মকর্তা হলেন- সাময়িক বরখাস্তকৃত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক (সহকারী পরিচালক) আব্দুল্লাহ আল মাসুদ, সহকারী তত্ত্বাবধায়ক (প্রবেশন অফিসার) মাসুম বিল্লাহ, ফিজিক্যাল ইনসট্রাক্টর এ কে এম শাহানুর আলম ও সাইকোসোস্যাল কাউন্সিলর মুশফিকুর রহমান।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শহরের চাঁচড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. রকিবুজ্জামান বলেন, এ মামলায় ১৩ জন আসামি ছিলেন। তদন্ত শেষে ১২ জনের সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে চারজন কর্মকর্তা ও চারজন প্রাপ্তবয়স্ক বন্দী হওয়ায় তাদের নামে অভিযোগপত্র আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। অপ্রাপ্তবয়স্ক চারজনের নামে আদালতে ‘দোষীপত্র’ জমা দেওয়া হয়। অভিযুক্ত সবাই আটক আছেন। তিনি বলেন, তদন্তে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের সাময়িক বরখাস্ত হওয়া কারিগরি প্রশিক্ষক (ওয়েল্ডিং) ওমর ফারুকের জড়িত থাকার প্রমাণ মেলেনি। এ কারণে মামলা থেকে তার অব্যাহতির আবেদন জানানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, গত বছর ৩ আগস্ট হেড গার্ড নূর ইসলাম তার চুল কাটার জন্য মোস্তফা কামাল হূদয় ও পারভেজকে ডেকে পাঠান। এ সময় পাভেল অসুস্থতার কথা বলে চুল কাটতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেন। এতে মনক্ষুণ্ন হন হেডগার্ড নূর ইসলাম। মোস্তফা কামাল হূদয় ও পাভেল নেশা করে বেডে শুয়ে আছে বলে নূর ইসলাম প্রতিষ্ঠানটির সহকারী পরিচালকের কাছে অভিযোগ দেন। আর এই অভিযোগ দেওয়ার সময় আহত ১৫ জনের মধ্যে একজন শুনে ফেলে বলে মোস্তফা কামাল ও পাভেলকে জানায়। এতে রাগান্বিত হয়ে ঐদিন বিকেল ৫টার দিকে মোস্তফা কামাল ও পাভেলসহ কয়েক জন কিশোর মিলে হেডগার্ড নূর ইসলামকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দেয়। পাশাপাশি শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের বন্দি কিশোররা উত্তেজিত হয়ে ওঠে।
খবর পেয়ে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল লাইচ ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আতিকুর রহমান এবং কেন্দ্রের উপপরিচালক অসিত কুমার সেখানে গিয়ে কিশোরদের শান্ত করেন। পাশাপাশি কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশের পরিদর্শক শেখ তাসমিম আলম শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্মকর্তাদের আইনের আশ্রয় গ্রহণ করার পরামর্শ দেন।
এই পরিবেশের মধ্যে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে যশোর শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে আলোচনা শেষে নূর ইসলামকে মারপিট করা কিশোরদের শাসন করার কথা বলেন সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল মাসুদ। ঐদিনই শরীরচর্চা শিক্ষক এম শাহানুর আলম তার অনুগত মোহাম্মদ আলী, খালিদুর রহমান তুহিন, ইমরান হোসেন, হুমাইদ হোসেন, রিফাত হোসেন, আনিসুজ্জামান, পলাশ ও মনোয়ারসহ কয়েক জন কিশোরকে ডেকে আনেন। এরপর ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ দেখে নিহত ও আহতদের বাছাই করে এডি আব্দুল্লাহ আল মাসুদের কক্ষে আনা হয়। এ সময় এডি আব্দুল্লাহ আল মাসুদ আরমান খলিফা নামে এক বন্দি কিশোরকে চড়থাপ্পড় ও লাথি মারেন। পরে তাকে বের করে শরীরচর্চা শিক্ষক এম শাহানুর আলম তাদের স্টোররুমের পাশে জানালার গ্রিলের মধ্যে হাত ঢুকিয়ে বাইরে থেকে ধরে রাখেন এবং মারপিট করা হয়।
এভাবে মারপিটে পারভেজ হাসান রাব্বি, নাইম হোসেন ও রাসেল সুজন মারা যায়। আর ছোট হূদয়, আব্দুল্লাহ আল মাহিম, পলাশ, সাব্বির হোসেন, সাব্বির প্রামানিক, নাঈম খান, মারুফ ওরফে ঈশান, পাভেল, জাবেদ হোসেন, আরমান খলিফা, লিমন, মোস্তফা কামাল হূদয়, সাকিব আলী ও রূপক আহত হয়। এ ঘটনায় নিহত পারভেজ হাসান রাব্বির পিতা রোকা মিয়া বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রের কর্মকর্তা কর্মচারীদের আসামি করে কোতোয়ালি মডেল থানায় মামলা করেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আদালতের পুলিশ পরিদর্শক মাহবুবুর রহমান বলেন, শুক্রবার অভিযোগপত্র হাতে পেয়েছি। অভিযোগপত্রটি আমলে নেওয়ার জন্য রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিচারকের সামনে উপস্থাপন করা হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩১৭
আপনার মতামত জানানঃ