করোনার কারণে প্রায় এক বছর বন্ধ থাকা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আগামী ৩০ মার্চ দেশের প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সশরীরে পাঠদান শুরু হবে। সর্বশেষ ঘোষণা অনুযায়ী ছুটি ছিল রোববার (২৮ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত। এ অবস্থায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে স্কুল-কলেজ খোলা হবে কি না এবং সেই পরিবেশ-পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে কি না, তা পর্যালোচনা করার জন্য শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) আন্তমন্ত্রণালয় বৈঠক ডাকা হয়। সন্ধ্যায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে অনুষ্ঠিত হয় এই বৈঠক। সেখানেই মূলত এই সিদ্ধান্ত হয়।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ৩০ মার্চের আগ পর্যন্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের কাজ চলছে। একই সঙ্গে শিক্ষক-কর্মচারিদের টিকা দেওয়া সম্পন্ন করতে পারব। আর ১৭ মে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হল খুলে দেওয়া হবে। এরমধ্যে হলের সংস্কার কাজ শেষ করা হবে। মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর মেরামতের কাজ করবে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় (এলজিআরডি)।
ডা. দীপু মনি বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস অনুষ্ঠিত হবে। স্বাস্থ্যবিধি বিষয়টি স্থানীয় পর্যায়ে স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা মনিটরিং করবেন। তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একেবারে তৃণমূল পর্যায়ে সব জায়গায় স্বাস্থ্যবিধিগুলো সঠিকভাবে মানা হচ্ছে কিনা, যে নোটিশগুলো থাকা দরকার সেগুলো প্রদর্শিত হচ্ছে কিনা- সেগুলো তারা দেখবেন। আর আমাদের প্রাথমিক ও গণশিক্ষা এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যারা মাঠ পর্যায়ে আছেন তারাও এই বিষয়গুলো মনিটর করবেন।’
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, রোজার সময় পুরো সময়ে ছুটি থাকবে না। এমনিতেই অনেক সময় চলে গেছে। আমরাও ছোটবেলায় দেখেছি শুধু ঈদের সময় ছুটি থাকত। এবারও আমরা তেমনটা করতে চই। এছাড়াও ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে দীপু মনি বলেন, এসব শিক্ষার্থীদের প্রাথমিকভাবে সপ্তাহে একদিন ক্লাস নেয়া হবে। এরপর ধীরে ধীরে স্বাভাবিক শ্রেণি কার্যক্রম শুরু করা হবে।
একই দিন শিক্ষামন্ত্রী জরুরি সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছিলেন, সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান শুরু হবে ঈদের পর ২৪ মে থেকে। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমাদের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলে ১ লাখ ৩০ হাজার শিক্ষার্থী থাকেন। তাদের টিকা দেয়ার বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে আমাদের ইতোমধ্যে কথা হয়েছে। আমরা সকল বিশ্ববিদ্যালয়কে বুধবার ইউজিসির মাধ্যমে চিঠি পাঠিয়ে দিয়েছি৷ নাম ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বরসহ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা তথ্য দেয়ার পর তাদের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া শুরু হবে। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব শিক্ষার্থী সুবিধামত কেন্দ্রে টিকা নিতে পারবেন।
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর ১৭ মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চলমান ছুটি ধাপে ধাপে বাড়িয়ে আগামীকাল ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত করা হয়েছে।
এর আগে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া যায় কিনা- সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বসে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে গত ২২ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভা বৈঠকে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনার কথা জানিয়ে ওইদিন প্রেস ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘সরকার খোলার (শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান) পরিবেশটা প্রিভিউ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা পাঁচ-ছয় দিনের মধ্যে একটা মিটিংয়ে বসব। এটা আন্তঃমন্ত্রণালয় মিটিং হবে।’
এরই মধ্যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হলে ফেরার আন্দোলন শুরু করেন। কোনো কোনো স্থানে শিক্ষার্থীদের তালা ভেঙে হলে প্রবেশের ঘটনাও ঘটে। এ পরিস্থিতিতে ২২ ফেব্রুয়ারি শিক্ষামন্ত্রী ঘোষণা দেন, আগামী ২৪ মে থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পাঠদান কার্যক্রম শুরু হবে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২৩০০
আপনার মতামত জানানঃ