একক ডোজের জনসন অ্যান্ড জনসনের কোভিড-১৯ টিকার জরুরি অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের একটি স্বতন্ত্র বিশেষজ্ঞ প্যানেল। শুক্রবার ( ২৬ ফেব্রুয়ারি) এ টিকার অনুমোদন দেওয়া হয়। শীর্ষস্থানীয় বিজ্ঞানীদের পাশাপাশি ভোক্তা ও শিল্প প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের গঠিত ২২ সদস্যের কমিটি দীর্ঘ ভার্চুয়াল বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেন। প্যানেলের সুপারিশগুলো বাধ্যতামূলক না হলেও তারা সেটা অনুসরণ করেছেন এবং তাদের ব্যাপক সমর্থনের আশা করা হয়েছিল। গত ডিসেম্বরে ফাইজার ও মডার্নার অনুমোদনের পর যুক্তরাষ্ট্রে তৃতীয় ভ্যাকসিন হিসেবে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন (ইইউএ) পেল জনসন অ্যান্ড জনসন।
২৫ ফেব্রুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, যদি এফডিএ নতুন টিকা ব্যবহারের অনুমোদন দেয়, জনসন অ্যান্ড জনসন যাতে দ্রুত এটি উৎপাদন করতে পারে সে ব্যাপারে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। প্রশাসনিক কর্মকর্তারা চলতি সপ্তাহের শুরুর দিকে আশা প্রকাশ করে বলেছেন, অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকা টিকার অনুমোদন পেলে আগামী সপ্তাহে তিন থেকে চার মিলিয়ন ডোজ টিকা সরবরাহ পাওয়া যাবে।
এদিকে জনসন এন্ড জনসনের সিঙ্গল ডোজ ভ্যাকসিন সম্পূর্ণ নিরাপদ বলে দাবি করল আমেরিকার ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশন (FDA)। SARS-CoV-2 ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে এই টিকা সক্ষম বলে দাবি করা হয়েছে। তবে এই ভ্যাকসিনের তৃতীয় দফার ট্রায়াল এখনও চলছে। এই ট্রায়ালে অংশ নিয়েছেন প্রায় ৪০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক। প্রাথমিক বিশ্লেষণে ৩৯ হাজার ৩২১ জনের দেহে এই ভ্যাকসিন সাড়া ফেলেছে ৬৬.৯ শতাংশ। এর অর্থ নিয়ন্ত্রিত পরীক্ষায় দেখা গেল যে এই টিকা করোনাকে ৬৬.৯ শতাংশ কমিয়ে দিতে সক্ষম। এই ভ্যাকসিনের নাম Ad26.COV2.S রাখা হয়েছে। SARS-CoV-2 ভাইরাসের জিনগত উপাদান দিয়ে এই টিকা তৈরি। আরও সঠিকভাবে বলতে গেলে ভাইরাসের বাইরে যে স্পাইক প্রোটিন রয়েছে তার জেনেটিক কোড ব্যবহার করা হয়েছে টিকাকরণের ক্ষেত্রে। এই স্পাইক প্রোটিন মানুষের দেহ কোষে আবদ্ধ হয়ে সংক্রমণ ছড়ায়। এখনও পর্যন্ত অনেক টিকার ক্ষেত্রেই ব্যবহৃত হয়েছে।
এই ভ্যাকসিন দেওয়ার পর এটি দেহের মধ্যে অ্যান্টিবডি তৈরি করে। কিন্তু এটি যেহেতু দেহের মধ্যে ভাইরাসের সম্পূর্ণ জিনগত উপাদান তৈরি করতে পারে না তাই এটি মানুষকে অসুস্থ করে না। এই ভ্যাকসিন নেওয়ার পর কোনও মানুষ সংক্রমিত হলে এটি তার অ্যান্টিবডি তৈরি করে ও ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে। বিশেষত Ad26.COV2.S হল এমন একটি ভ্যাকসিন যার বিকল্প ভেক্টর গঠিত হয় না। ফলে সংক্রমণ ছড়ায়। এই টিকা SARS-CoV-2 ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিনকে স্থিতিশীল বিকল্প প্রদান করে। Ad26.COV2.S ভ্যাকসিনের ভাইরাল ভেক্টর অ্যাডেনোভাইরাস (অ্যাডেনোভাইরাস ২৬) হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি সাধারণ সর্দি-কাশির ক্ষেত্রে কাজে লাগে। এই ভেক্টর জেনেটিকালি মডিফাই হয় যার ফলে এটি প্রতিলিপি গঠন করতে পারে না ও সংক্রমণ ছড়াতে পারে না। এটি ছাড়া আরও অ্যাডেনোভাইরাস বেসড ভ্যাকসিন রয়েছে। ইবোলা, জাইকা, ফাইলোভাইরাস, ম্যালেরিয়া, HIV, HPV ও শ্বাসযন্ত্রকে আক্রমণকারী ভাইরাসের ক্ষেত্রেও এটি ব্যবহৃত হয়।
চলতি বছর বিশ্বব্যাপী ১০০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে জনসন অ্যান্ড জনসন। যুক্তরাজ্য এরইমধ্যে এই ভ্যাকসিনের ৩ কোটি ডোজ অগ্রিম অর্ডার দিয়ে রেখেছে। এই ভ্যাকসিনে সাধারণ ঠান্ডার ভাইরাস ব্যবহার করা হয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহার করে এটিকে নিরীহ করা হয়েছে, যাতে কোনও ক্ষতি না হয়।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২১০০
আপনার মতামত জানানঃ