হাইতির কারাগারগুলোকে বিশ্বের সবচেয়ে ঘিঞ্জি কারাগার বলা হয়ে থাকে। মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে যে, প্রায় ১১,০০০ বন্দি অমানবিক পরিস্থিতিতে বাস করে। এরইমধ্যে শোনা গেলো ক্যারিবীয় দেশ হাইতির এক কারাগার ভেঙ্গে কয়েদিরা দলে দলে পালিয়ে গেছে। হাইতির রাজধানী পোর্ট-অঁ-প্রিন্সের কাছে একটি কারাগার থেকে ৪ শতাধিক কয়েদি পালিয়েছে বলে জানিয়েছেন দেশটির কর্মকর্তারা। গত বৃহস্পতিবার ওই পালানোর ঘটনাকে কেন্দ্র করে সহিংসতায় কারা পরিচালক ও কয়েকজন পথচারীসহ ২৫ জন নিহত হয়েছে। এ পর্যন্ত ৬০ জনকে পুনরায় আটক করতে পেরেছে নিরাপত্তা বাহিনী।
গতকাল শুক্রবার উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় পোর্ট-অ-প্রিন্সের ক্রোইক্স-দেজ-বুকেটস বেসামরিক কারা কর্তৃপক্ষ এ তথ্য নিশ্চিত করে। যদিও দেশটির ইতিহাসে এক দশকের সবচেয়ে ভয়াবহ এ সংঘাতের ঘটনাটি ঘটে বৃহস্পতিবার।
জানা যায়, পলাতক কয়েদিদের মধ্যে দেশটির কুখ্যাত একটি অপরাধী দলের নেতা আর্নেল জোসেফও ছিলেন। জোসেফকে মুক্ত করার লক্ষ্যে জেলটিতে অভিযান চালায় তার অধীনস্তরা। ২০১৯ সালে গ্রেফতারের আগ পর্যন্ত জোসেফ ছিলেন হাইতির ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ পলাতক। ধর্ষণ, অপহরণ, হত্যাসহ অসংখ্য অভিযোগ আছে তার বিরুদ্ধে।
এদিকে, কারাগার থেকে পালিয়ে যাওয়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই ক্ষমতাবান গ্যাং নেতা আর্নেল জোসেফ নিহত হন। পুলিশের মুখপাত্র গেরি ডেসরোজিয়ার্স জানিয়েছেন, মৃত্যুর পর পায়ে বেড়ি পরা অবস্থায় তাকে পাওয়া গেছে। একটি মোটর সাইকেলে করে তিনি চেকপয়েন্ট দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। তাকে বহনকারী মোটরসাইকেলটি থামানো যায়নি এবং জোসেফ এক পুলিশ কর্মকর্তার দিকে বন্দুক তাক করেন। সে সময় আত্মরক্ষার জন্য ওই পুলিশ কর্মকর্তা জোসেফকে গুলি করেন।
দেশটির পুলিশ বাহিনীর মুখপাত্র গ্যারি দেসরোশিয়ার্স বলেছেন, শুক্রবার আর্নেল জোসেফকে একটি মোটরসাইকেলে থাকা অবস্থায় একটি চেকপোস্টে দেখা যায়। সেখানে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করা হলে পুলিশের সঙ্গে গুলি বিনিময়ের সময় তার মৃত্যু হয়
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তারা বৃহস্পতিবার দুপুরে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনেন এবং এর কিছুক্ষণ পর কয়েদিদের কারাগার থেকে দৌড়ে বেরিয়ে যেতে দেখেন।
কারাগারের কাছাকাছি থাকা এক স্টাফ জানান, কারাগার থেকে পালিয়ে আসা বন্দিরা জোর করে তাদের কাছ থেকে কাপড়-চোপড় নিয়ে গেছেন।
বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ক্রয়িক্স-দেস-বুকেটস কারাগারটি ২০১২ সালে চালু হয়। এই কারাগারে ৮৭২ জন বন্দিকে রাখা সম্ভব। কিন্তু সেখানে ধারণ ক্ষমতার বাইরে বন্দিদের রাখা হয়েছিল।
শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে হাইতির যোগাযোগ সচিব ফ্রান্জ এক্সান্টুস বলেন, ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে, যাদের মধ্যে ৬ কয়েদি এবং আঞ্চলিক পরিদর্শক পল হেক্টর জোসেফও আছেন, তিনিই ওই কারাগারের দায়িত্বে ছিলেন। নিহতদের মধ্যে কয়েকজন সাধারণ নাগরিকও আছেন, পালিয়ে যাওয়ার সময় কয়েদিরা তাদের হত্যা করে।
ক্যারিবীয় অঞ্চলের অন্যতম দরিদ্র দেশ হাইতিতে এর আগেও কারাগার ভেঙে কয়েদি পালানোর ঘটনা ঘটেছে।
২০১৯ সালে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলের আকুইন কারাগার ভেঙে সেখানকার ৭৮ কয়েদির সবাই পালিয়ে যায়; কয়েদিরা যখন পালাচ্ছিল, সেসময় পুলিশ কাছাকাছি এলাকায় সরকারিবিরোধী বিক্ষোভ নিয়ে ব্যস্ত ছিল।
এরও দুই বছর আগে পোর্ট-অঁ-প্রিন্সের উত্তরে অবস্থিত আরকাহাই কারাগার থেকে ১৭০ এরও বেশি কয়েদি পালিয়ে যায়।
২০১৪ সালেও একই কারাগার থেকে পালায় ৩শ’র বেশি কয়েদি। হাইতির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জেল ভেঙে পালানোর ঘটনাটি ঘটে ২০১০ সালের প্রলয়ঙ্কারী ভূমিকম্পের পর। তখন কুখ্যাত ন্যাশনাল পেনিটেশিয়ারি কারাগার ভেঙে পালায় ৪ হাজার ২শ’ কয়েদি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৪৫
আপনার মতামত জানানঃ