মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিবেদনে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার মূলহোতা হিসাবে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানকে দোষী করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের প্রকাশ করা এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাশোগিকে আটক কিংবা হত্যার একটি পরিকল্পনা অনুমোদন করেন যুবরাজ। যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শুক্রবার সাংবাদিক জামাল খাসোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার এ তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সৌদির বাদশাহ সালমানকে ফোন দেওয়ার একদিন পর এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যুবরাজ সালমানের সংশ্লিষ্টতার দাবি করে প্রতিবেদন প্রকাশ করলো মার্কিন ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স। তবে এ অভিযোগ বরাবরের মতো অস্বীকার করেছে সৌদি রাজ পরিবার বা যুবরাজ সালমান। খাসোগিকে হত্যায় সৌদি যুবরাজকে জড়িয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাকে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ‘মিথ্যা’ বলা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘আমরা দেখতে পেয়েছি, সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে আটক বা হত্যা করতে ইস্তাম্বুলে একটি অভিযান অনুমোদন করেছিলেন।’
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জামাল খাশোগিকে নিজ সাম্রাজ্যের প্রতি হুমকি হিসেবেই দেখতেন যুবরাজ সালমান। এমনকি খাসোগিকে চুপ করাতে প্রয়োজন মতো কঠোর ব্যবস্থা নিতেও সম্মতি ছিল তার।
এদিকে ২০১৮ সালে সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগিকে হত্যার অনুমোদন দিয়েছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার এমন প্রতিবেদনকে পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে সৌদি আরব।
দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, রাজ্যের নেতৃত্ব সম্পর্কিত নেতিবাচক, মিথ্যা এবং অগ্রহণযোগ্য মূল্যায়ণ সৌদি সরকার পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে। বিবৃতিতে এই প্রতিবেদনে ভুল তথ্য সংযোগ এবং অনুমাননির্ভর বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
সৌদির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়েছে, অযৌক্তিক এবং ভুল সিদ্ধান্তের এই প্রতিবেদনটি সত্যি দুঃখজনক। এটি এমন সময়ে জারি করা হলো যখন সৌদি পরিষ্কারভাবে এই জঘন্য অপরাধের নিন্দা জানিয়েছে এবং রাজ্যের নেতৃত্ব ইতিমধ্যে পদক্ষেপ নিয়েছে যাতে এই ধরনের ঘটনা না ঘটে।
গোয়েন্দা প্রতিবেদন প্রকাশের আগে বৃহস্পতিবার সৌদি বাদশাহ সালমানের সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথমবারের মতো তাদের প্রথম ফোনালাপ অনুষ্ঠিত হয়। ওই ফোনালাপে এই গোয়েন্দা প্রতিবেদন নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠন নীতির অংশ হিসেবে বাইডেন প্রশাসন খাসোগি হত্যাকাণ্ড নিয়ে এই গোপন মার্কিন গোয়েন্দা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করলো। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আমলে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও ইয়েমেনে আগ্রাসনের বিষয়ে রিয়াদ অনেকটা ছাড় পেয়ে এসেছে। বাইডেনের সময় এই দৃষ্টিভঙ্গির বদল লক্ষ করা যাচ্ছে।
জানা যায়, সুপরিচিত সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি সৌদি আরবের বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার হয়ে আফগানিস্তানে সোভিয়েত অভিযান এবং আল কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের উত্থানসহ গুরুত্বপূর্ণ গটনা কাভার করেন। ৫৯ বছর বয়সী জামাল খাসোগি বেশ কয়েক দশক সৌদি রাজ পরিবারের ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং সৌদি সরকারের উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন। ২০১৭ সাল থেকে তিনি আমেরিকায় স্বেচ্ছা নির্বাসনে যান। সেসময় থেকেই তিনি ওয়াশিংটন পোস্টে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কার্যক্রম সমালোচনা করে প্রতি মাসে কলাম লিখতেন। ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে তার প্রথম কলামে তিনি যুবরাজের বিরোধিতা করার জন্য গ্রেপ্তার হতে পারেন বলে আশঙ্কাও প্রকাশ করেছিলেন। পরে ২০১৮ সালের অক্টোবরে ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পর নিখোঁজ হন তিনি।
২০১৮ সালের অক্টোবরে তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সৌদি দূতাবাসে যাওয়ার পরই নিখোঁজ হন ওয়াশিংটন পোস্টের কলামিস্ট সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি। পুলিশের ধারণা, ৫৯ বছর বয়সী সাংবাদিক খাসোগিকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর তার মরদেহ টুকরো করে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। সৌদি সরকার বরাবরই এ হত্যাকাণ্ডে যুবরাজের সংশ্লিষ্টতা থাকার বিষয়টি অস্বীকার করেছে। তবে আগে যুবরাজকে এ হত্যায় দায়ী করে সিআইএ প্রতিবেদন দিলেও তা প্রকাশে বাধা দিয়েছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর আগে জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনেও সৌদি সরকারকে খাসোগি হত্যার জন্য দায়ী করা হয়েছিল।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সাংবাদিক জামাল খাসোগির নামে একটি আইন প্রণয়ন করেছে। যার নাম দেওয়া হয়েছে, ‘খাসোগি আইন’। যেসব বিদেশি ভিন্নমতাবলম্বীদের হুমকি দেবে বা সাংবাদিক এবং তাদের পরিবারকে হয়রানি করবে; এই আইনের অধীন তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে পারবেন না। এই আইনে ৭৬ সৌদি নাগরিককে কালোতালিকাভুক্ত করা হয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিংকিন এক বিবৃতিতে বলেছেন, আমরা পরিষ্কার করে দিয়েছি যে বাইরের দেশে বসবাস করা ভিন্নমতাবলম্বী, সাংবাদিক ও মানবাধিকারকর্মীদের হুমকি ও হামলা সৌদি আরবকে অবশ্যই বন্ধ করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র তা সহ্য করবে না।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৪০৮
আপনার মতামত জানানঃ