ছয় বছর আগে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ১৭ জন কালেক্টিভ বার্গেনিং এজেন্ট (সিবিএ) নেতার বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ আনে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক)। এবিষয়ে দুদক অভিযুক্তদের নোটিশও দেয়। ছয় বছর আগে দুর্নীতি দমন কমিশনের নোটিশে সাড়া না দেওয়া বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাবেক ১৭ সিবিএ নেতার বিরুদ্ধে তদন্তের নথি তলব করেছেন হাইকোর্ট। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে দুদককে তা আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার(২৫ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আগামী ৯ই মার্চ এই মামলার পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছেন আদালত।
মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারি করে ওই ১৭ নেতার বিরুদ্ধে দুদকের পদক্ষেপ জানতে চান। সে বিষয়ে এদিন শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। আদালতে শুনানিতে মানবাধিকার সংগঠন এইচআরপিবির পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরশেদ। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এম এ আজিজ খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহজাবিন রাব্বানী দীপা।
হাইকোর্টের গত ২৮ জানুয়ারি দেওয়া আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল দুদক ১৭ সিবিএ নেতা সম্পর্কে প্রতিবেদন দাখিল করে। এতে দুদক থেকে আদালতকে জানানো হয়, সিবিএ নেতারা দুদকে হাজির হয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। কিন্তু তারা কি বলেছেন বা তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে কী না সে বিষয়ে দুদক থেকে কিছু বলা হয়নি। এ প্রতিবেদন দেখার পর রিট আবেদনকারীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ সংশ্লিষ্ট নথি আদালতে দাখিল করার আরজি জানান। এরপর আদালত শুনানি নিয়ে নথি তলবের আদেশ দেন।
১৭ সিবিএ নেতা হলেন, বিমানের তখনকার সিবিএ সভাপতি মসিকুর রহমান, সহ-সভাপতি আজাহারুল ইমাম মজুমদার, আনোয়ার হোসেন, ইউনুস খান, সাধারণ সম্পাদক মনতাসার রহমান, সহ-সাধারণ সম্পাদক রুবেল চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক রফিকুল আলম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম, অর্থ সম্পাদক আতিকুর রহমান, অফিস সম্পাদক হারুনর রশিদ, প্রকাশনা সম্পাদক আবদুল বারি, সাংস্কৃতিক সম্পাদক ফিরোজুল ইসলাম, সমাজ কল্যাণ সম্পাদক মো. আবদুস সোবহান, নারী বিষয়ক সম্পাদক আসমা খানম, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক গোলাম কায়সার আহেমেদ, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল জব্বার ও আবদুল আজিজ।
অভিযুক্তরা ২০১৪ সালে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সিবিএ (বিমান শ্রমিক লীগ) নেতা ছিলেন। তাদের ২৬ জানুয়ারি দুদকে হাজির হতে ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি নোটিশ দেয় দুদক। তবে, দুদকের নোটিশে সাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানান তারা।
আইনজীবী মনজিল মোরসেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ১৭ জনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তের জন্য দুদক নোটিশ দেয়। কিন্তু তারা হাজির হতে অস্বীকার করেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে দুদকের পক্ষে আর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি মর্মে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদন যুক্ত করে জনস্বার্থে এইচআরপিবি রিট পিটিশন দায়ের করলে একই বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল জারি করে দুদকের পদক্ষেপে নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চান।
মনজিল মোরসেদ বলেন, ওই রুল শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার দিন ধার্য ছিল। দুদক আইন অনুযায়ী, যদি কোনো ব্যক্তি কোনো নোটিশের ব্যাপারে পদক্ষেপ না নেয়, সে কারণে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান থাকলেও দুদকের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
তিনি বলেন, যেহেতু সিবিএ নেতারা প্রভাবশালী, সে কারণে যদি আইন তার নিজস্ব গতিতে না চলে তবে আইনের শাসন ব্যাহত হতে পারে এবং আইনের দৃষ্টিতে তা গ্রহণযোগ্য নয়। দুদকের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে আদালতে কোনো জবাব দাখিল করা হয়নি।
আইনজীবী মনজিল মোরশেদ জানান, ওই রুল শুনানির জন্য ছিল আদালতে। কোনো ব্যক্তিকে দুদক থেকে নোটিশ দেয়া হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি সে বিষয়ে সাড়া না দিলে দুদক আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে। অথচ ১৭ সিবিএ নেতার ক্ষেত্রে কোনো মামলা হয়েছে কি-না, তা আদালতকে জানানো হয়নি। এ প্রেক্ষাপটে আদালত ওই আদেশ দেন। এরপরে চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি শুনানিতে দুদকের নেয়া পদক্ষেপের তথ্য ২৫ ফেব্রুয়ারি জানাতে নির্দেশ দেন আদালত। এ অবস্থায় আজ নথি তলব করা হলো।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে আইনের বৈষম্যের কারণে এমন বিশৃঙ্খল এক পরিস্থিতি বিরাজ করছে যেখানে সাধারণ লোকজন আইনের আওতায় যতটা দ্রুত আসেন ততটাই গড়িমসি হয় প্রভাবশালীদের ক্ষেত্রে। কিন্তু দেশের টাকা লুটপাটে জনসাধারণের ভূমিকা কিঞ্চিৎ হলেও রাঘব বোয়ালের ভূমিকায় আছেন আদতে প্রভাবশালীরাই। প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে সর্বমহলেরই এক আতঙ্ক, আশঙ্কা ও সমীহ কাজ করে যেখানে অন্যরা হয় নির্যাতিত। আইনের এই বৈষম্য দূর না হলে রাঘব-বোয়ালেরা দেশের টাকা লুটপাটে আরও উৎসাহী হয়ে উঠবে বলে মনে করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭৩৩
আপনার মতামত জানানঃ