কয়েকজন বখাটে ছেলে মেসের বাইরে থেকে রাতে দুই দফায় বিভিন্নভাবে উত্ত্যক্ত ও ভয় দেখিয়ে অত্যাচার করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের চার ছাত্রী। গতকাল বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে ক্যাম্পাস পার্শ্ববর্তী শেখপাড়া এলাকার একটি ছাত্রী মেসে এ ঘটনা ঘটে। মধ্যরাত থেকে ভোর পর্যন্ত দুই দফায় ওই ছাত্রীদের জানালার সামনে অশ্লীল কথাবার্তা ও বিভিন্ন কুরুচিপূর্ণ বাজে মন্তব্য করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। বখাটেদের দ্বারা রাতভর হয়রানির শিকার হয়ে তারা শেষে আজ বৃহস্পতিবার(২৫ ফেব্রুয়ারি) সকালে মেস ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন।
ভুক্তভগী ছাত্রীরা জানান, তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থী। হল বন্ধ রেখে বিভাগের পক্ষ থেকে পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা করা হলে তারা চারজন বান্ধবী মিলে শেখপাড়া এলাকার ওই মেসে ওঠেন। মেস মালিকের স্ত্রী ও এক মেয়েও তাদের সঙ্গে থাকতেন। বাসায় কোনো পুরুষ মানুষ না থাকায় প্রায়ই পাড়ার বখাটেরা মেসের আশেপাশে ঘুরাফেরা করে তাদেরকে বিভিন্নভাবে বিরক্ত করত। বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাত ১২টার দিকে বখাটেদের দল মেসের পাশে এসে ছাত্রীদের হয়রানি করতে থাকে। এ সময় জানালার ফাঁকা অংশ দিয়ে ভেতরে তাকানো ও বিভিন্ন বাজে ভাষায় মন্তব্য করতে থাকে তারা।
এ ঘটনায় আতঙ্কিত ছাত্রীরা সহপাঠীদের মাধ্যমে ইবি থানা পুলিশকে ঘটনা জানালে তারা শৈলকুপা থানা পুলিশের ফোন নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বলে। তবে শৈলকুপা পুলিশের সাথে যোগাযোগ করা হলে এ সময় কোনো সহযোগিতা পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী ছাত্রীরা। তারা জানান, প্রায় দেড় ঘণ্টা পর রাত দেড়টার দিকে বখাটেরা চলে গেলেও রাত তিনটার দিকে আবারো ফিরে আসে। এতে ছাত্রীরা আতঙ্কিত হয়ে মেস মালিকের কক্ষে আশ্রয় নিলেও বখাটেরা হয়রানি চালিয়ে যায়।
পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডির মাধ্যমে পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করলে শৈলকুপা থানা পুলিশের একটি টহল দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেলে বখাটেরা পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ মেস মালিকের স্ত্রী ও ভুক্তভোগী ছাত্রীদের সাথে কথা বলে চলে যায়।
পরে বৃহস্পতিবার সকালেই ওই ভাড়া করা মেস ছেড়ে দেন তারা। দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর অভিযোগ দেন তারা। পরে নিজেদের মালামাল আবাসিক হলে রেখে প্রক্টরিয়াল বডির সহযোগিতায় বাড়ি ফিরে যান চার ছাত্রী।
এ ঘটনা জানাজানি হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ইবিয়ানরা। এ ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত আইনের আওয়াত এনে শাস্তির দাবি করেছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। যাতে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি আর না ঘটে সেজন্য প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়েছে।
ভুক্তভোগী এক ছাত্রী সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আমরা প্রায়ই এমন হাঁটাহাটির শব্দ শুনতাম। কিন্তু গত রাতে খুব বাজে ভাষায় কথা বলতেছিল। আমাদের বর্ণনা দিয়ে এমনভাবে বলছিল মনে হচ্ছিল ওরা আমাদের দেখতে পাচ্ছে। এজন্য আমরা খুব ভয় পেয়েছিলাম তাই আমাদের বন্ধু ও স্যারদের জানিয়েছি। গতকাল খুবই দুর্বিসহ একটি রাত কেটেছে আমাদের।
শৈলকুপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর রাত সাড়ে ৩টার দিকে আমাকে বিষয়টি জানিয়েছেন। তাৎক্ষণিকভাবে সেখানে পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এ বিষয়ে এখনো পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, রাতেই সহকারী প্রক্টর ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সকালে প্রক্টরিয়াল বডি ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা মেসে গিয়েছিলেন। ছাত্রীরা বাড়ি যেতে চাওয়ায় তাদের মালামাল হলে রেখে ছাত্রীদের বাড়ি পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা মেস মালিকের সঙ্গে কথা বলে অভিযুক্তদের নাম জানার চেষ্টা করছি। যেহেতু এটা ক্যাম্পাসের বাইরে তাই কারো নাম জানা গেলে আমরা সে অনুযায়ী অভিযোগ দাখিল করব।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন, বিষয়টি নিয়ে প্রক্টর ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলেছি যেন বিষয়টি নিয়ে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হয়। পাশাপাশি অন্য শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছি।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন,ছাত্রীদের যৌন হয়রানি ও উত্যক্ত করার ফলে তাদের জীবনে নানা ধরনের জটিলতা নেমে আসে। বিপর্যস্ত হয় শিক্ষাজীবন। যৌন হয়রানির ফলে ছাত্রীরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। কিছু ছাত্রী অন্যদের থেকে আলাদা হয়ে যান, কিছু পড়াশোনায় মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন। আবার কিছু ছাত্রী হয়রানির শিকার হয়ে একপর্যায়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন।এসব বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও থানা প্রশাসনকে যথেষ্ট সজাগ থাকতে হবে বলে মনে করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন।কেএইচ/২১৩০
আপনার মতামত জানানঃ