জামালপুরে ঝাওলা গোপালপুর কলেজের অধ্যক্ষ মোফাজ্জল হোসেনকে উপাধ্যক্ষের করা চাঁদাবাজির মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ড ও একই সঙ্গে এক লাখ টাকা জরিমানা— অনাদায়ে ছয় মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বুধবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক জহিরুল কবির এই রায় প্রদান করেন। এছাড়াও কলেজ অধ্যক্ষ মোফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে কলেজ ফান্ডের ১২ লাখ ৬২ হাজার ৮৬৭ টাকা আত্মসাতের আরও একটি মামলা বিচারাধীন রয়েছে।
মামলার বিবরণে জানা যায়, ঝাওলা গোপালপুর কলেজে শিক্ষক পদোন্নতির জন্য অধ্যক্ষ মোফাজ্জল হোসেন ওই কলেজের উপাধ্যক্ষ এবিএম ফরহাদ হোসেনসহ তিন শিক্ষকের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা নেন। পরে কাজ করে না দেওয়ায় ২০০৮ সালে উপাধ্যক্ষ এবিএম ফরহাদ হোসেন বাদী হয়ে জামালপুর সদর থানায় একটি চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত পুলিশ তার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ পত্র দেয়। দীর্ঘ ১২ বছর মামলা প্রক্রিয়ায় ৮ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে দণ্ডবিধি ৩৮৪ ধারার অভিযোগে স্পেশাল জজ আদালতের বিচারক এ রায় দেন।
রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অ্যাডভোকেট জাহিদ আনোয়ার ও এপিপি নুরুল করিম ছোটন। বিবাদী পক্ষে ছিলেন আনোয়ারুল করিম শাহজাহান।
রায় ঘোষণার সময় মোফাজ্জল হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাকে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
এছাড়াও মোফাজ্জল হোসেনের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, কলেজের অর্থ আত্মসাৎ, ঘুষ, দুর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য, শিক্ষকদের কাছ থেকে নানা কৌশলে অর্থ আদায়, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ফি আদায়সহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে প্রতারণা ও অর্থ আত্মসাৎসহ বিভিন্ন বিষয়ে থানা ও আদালতে মামলা রয়েছে। নানা অপকর্মের দায়ে একাধিকবার জেল হাজতেও যেতে হয়েছে তাকে।
জানা যায়, ১৯৯৭ সালে স্থানীয় প্রভাবশালী ও গভর্নিংবডিকে ম্যানেজ করে জামালপুরের ঝাওলা গোপালপুর ডিগ্রি কলেজে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগপান যুদ্ধাপরাধ মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামী জামায়াত নেতা মাওলানা ইউসুফ আলীর ভাতিজা ইসলামী ছাত্র শিবিরের ক্যাডার মো. মোফাজ্জল হোসেন। যোগদানের পর থেকেই নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। কিছুদিন যেতেই কলেজের রেজুলেশন ঘষামাজা করে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ৬জন শিক্ষক নিয়োগ দেন। বিষয়টি নিয়ে অভিযোগ হলে কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে এর সত্যতা পায়। পরবর্তীতে তাকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করেন। বিষয়টি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও অধিকতর তদন্ত করে অভিযোগের প্রমান পাওয়া তাকে তারিখে স্থায়ীভাবে বহিস্কার করে।
এদিকে বরখাস্ত হওয়ার পর মো. মোফাজ্জল হোসেন আদালতের মাধ্যমে চাকরিতে পূনঃবহাল হন। এবার চেয়ারে বসেই দ্বিগুন বেগে ক্ষিপ্ত হন তার বিরুদ্ধে অভিযোগকারীদের ওপর। রাজনৈতিক আশ্রয়ে চাপ প্রয়োগ করে বাদীকে দিয়ে মামলাটি প্রত্যাহার করান। অপর দিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি তদন্ত করে ১২ লক্ষ ৬২ হাজার ৮৬৭ টাকা আত্মসাতের বিষয়টি প্রমানিত হলে জামালপুর সদর থানায় মামলা হয়।
চাকরিতে পূনঃবহাল হয়ে অপ্রতিরুদ্ধভাবে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন। কলেজের হিসাব রক্ষক তার অনৈতিক কর্মকান্ডের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় তাকে কর্ম থেকে বিরত রেখে বিএম শাখার অফিস সহকারীকে দিয়ে মনগড়াভাবে হিসাব সংক্রান্ত কাজ করিয়ে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করছেন অনিয়মের মাধ্যমে। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে অভিভাবকদের জিম্মি করে ফরম ফিলাপের সময় সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে অতিরিক্ত টাকা আদায় এমনকি প্রবেশপত্র বিতরণের সময় ও ব্যবহারিক পরীক্ষার সময় নিয়ম বহির্ভূতভাবে ছাত্রছাত্রীদের জিম্মি করে টাকা আদায় করে আসছেন। এসব ছাড়াও বিভিন্ন অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ ও চাঁদাবাজির অভিযোগও রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ম্যানেজিং কমিটি বা গভর্নিং বডির বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানপ্রধানদের বিরুদ্ধেও এমন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক মাসে প্রতিষ্ঠানপ্রধানের বিরুদ্ধে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি, জাল সনদে শিক্ষক নিয়োগ, আর্থিক দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অভিযোগ উঠে আসছে। তারা মনে করেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের বিভিন্ন অনিয়ম আর দুর্নীতিতে একদিকে যেমন শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে অন্যদিকে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সমাজে নেতিবাচক মনোভাব তৈরী হচ্ছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নৈতিক শিক্ষা নিয়ে শিক্ষার্থীদের বেড়ে ওঠা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বলে মনে করেন তারা।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১০০
আপনার মতামত জানানঃ