সীমান্তের পাশে জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণের সময় জেলার ঠাকুরগাঁওয়ের হরিপুর উপজেলার বেতনা সীমান্তে শাহা আলম (১৭) নামে এক কিশোরকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠেছে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহু (বিএসএফ)’র বিরুদ্ধে। এ ঘটনার পর অচেতন ঐ কিশোরকে ‘মৃত’ ভেবে সীমান্তের বাংলাদেশ অভ্যন্তরে ফেলে রেখে যায় বিএসএফ।
মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে হরিপুর উপজেলার বেতনা সীমান্তের ৩৬৭ পিলারের কাছে এ ঘটনা ঘটে। আহত শাহা আলম হরিপুর উপজেলার মানিকখাড়ী গ্রামের মো. নজরুল ইসলামের ছেলে। তিনি বর্তমানে হরিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিচ্ছেন। হরিপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দায়িত্বরত চিকিৎসক জানান, তাকে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। শরীরে বিভিন্ন ধরনের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
আহত কিশোরের বাবা নজরুল ইসলাম জানান, সকালে সীমান্তের ৩৬৭ নং পিলারের কাছে নিজের জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করছিল শাহা আলম। দুপুরে হঠাৎ কোয়ালিঘর ক্যাম্পের বিএসএফের সদস্যরা এসে তাকে তুলে নিয়ে কাঁটাতারের কাছে পাশবিক নির্যাতন চালায়। নির্যাতনের কারণে শাহা আলম অজ্ঞান হয়ে গেলে মৃত ভেবে ফেলে চলে যায় বিএসএফ সদস্যরা। তিনি জানান, স্থানীয়রা খবর দিলে আমরা সকলে গিয়ে শাহা আলমকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করি। এমন নির্মম নির্যাতনের বিচারের পাশাপাশি সীমান্তে নিরাপত্তার সাথে কৃষি কাজ করার নিশ্চয়তা দাবি করেছেন নজরুল ইসলামসহ স্থানীয় কৃষকরা।
ভারতের কোয়ালিঘর ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা এমন পাশবিক নির্যাতন চালিয়েছে জানিয়েছে বেতনা বিজিবি ক্যাম্পের ক্যাম্প কমান্ডার হাবিব বলেন, বিষয়টি নিয়ে পতাকা বৈঠক করার জন্য বিএসএফকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জানতে ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল শহিদুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তার ফোনটি রিসিভ হয়নি।
সমাজ বিশ্লেষকরা মনে করেন, ভারত সরকারের ঊর্ধ্বতন মহল দফায় দফায় বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্ত্বেও সীমান্তে হত্যা চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ছে। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মতে, ২০১৮ সালে যেখানে সীমান্তে হত্যার সংখ্যা ছিল ১১, সেখানে ২ বছরের ব্যবধানে তা চারগুণ ছাড়িয়ে গেছে। ভারত সরকারের সবুজ সংকেত ছাড়া এভাবে সীমান্তে হত্যাকাণ্ড বেড়ে যাওয়ার কথা নয় বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষকরা। ভারত সরকার যেহেতু বাংলাদেশকে কৌশলগত বন্ধু হিসেবে তুলে ধরে, সেক্ষেত্রে সীমান্তে হত্যার নির্দেশ কে দিচ্ছে, কিংবা সেই হত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে কে ভারত সরকারকে বাধা দিচ্ছে বাংলাদেশকে এটা খুঁজে বের করতে হবে বলে মনে করছেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহা. রুহুল আমীন সম্প্রতি সংবাদমাধ্যমকে বলেছেন, সীমান্ত হত্যার পেছনেও ঐতিহাসিক রাজনৈতিক সন্দেহ রয়েছে। ভারত ছোট দেশকে সব সময় ছোট করেই রাখতে চায়। তাই সীমান্ত হত্যাসহ বিভিন্ন সমস্যা সমাধান হচ্ছে না। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক শুধু কাগজে কলমে। তাই ভারতের ক্ষমতাসীনদের মধ্যে বাংলাদেশকে দাবিয়ে রাখার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্তে বিএসএফ’র হাতে বাংলাদেশিদের হত্যা থামাতে হলে রাজনৈতিক প্রচেষ্টা ও নিয়ন্ত্রণ দরকার। সীমান্তে হত্যা বিশেষ করে ভারতের সাথে বাংলাদেশের সীমান্তে হত্যা বন্ধ করতে হলে ভারতের সাথে এ নিয়ে নতুন করে আলোচনা করে তাদের বোঝাতে হবে যে এ ধরণের হত্যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৮০০
আপনার মতামত জানানঃ