করোনাভাইরাসের টিকা যে সত্যিই সংক্রমিতদের হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার মতো গুরুতর অসুস্থ হওয়া বিপুলভাবে কমিয়ে দিতে পারে তার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে যুক্তরাজ্যের স্কটল্যান্ডে চালানো এক জরিপে। স্কটল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য বিভাগের চালানো গবেষণায় দেখা যায়, প্রথম ডোজ টিকা দেবার চার সপ্তাহ পর করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া চমকপ্রদভাবে কমে গিয়েছে।
যারা ফাইজার-বায়োএনটেকের তৈরি টিকা নিয়েছেন তাদের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণজনিত গুরুতর অসুস্থতা ৮৫ শতাংশ কমে গেছে এবং অক্সফোর্ড-এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা গ্রহণকারীদের মধ্যে এই হার কমেছে ৯৪ শতাংশ। ওই জরিপের প্রধান গবেষক অধ্যাপক আজিজ শেখ বলেন, দুটো ভ্যাকসিনই দারুণভাবে কাজ করছে এবং তা ভবিষ্যতের ব্যাপারে আশাবাদী হবার মত।
করোনাভাইরাসের টিকাদান কর্মসূচির ফলে বাস্তব দুনিয়ায় একটা জনগোষ্ঠীর ওপর কি প্রভাব পড়ছে – প্রথমবারের মত তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে স্কটল্যান্ডে চালানো এক জরিপে। যাদের বয়স ৮০-র বেশি তাদের মধ্যে হাসপাতালে ভর্তির সংখ্যা কমেছে ৮১ শতাংশ। স্কটল্যান্ডে ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১১ লাখ ৪০ হাজার লোককে কোভিডের টিকা দেয়া হয়।
টিকা নেওয়া এই লোকদের মধ্যে কতজন কোভিডে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তার সাথে তুলনা করে দেখা হয়, যারা-টিকা-নেননি তাদের মধ্যে কতজন হাসপাতালে ভর্তি হলেন। সব মিলিয়ে দেখা যায় যারা টিকা নেবার পর চার সপ্তাহ পার করেছেন তাদের মধ্যে মাত্র ৫৮ জন কোভিড আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। অন্য গ্রুপটি অর্থাৎ টিকা না নেয়া লোকদের মধ্যে থেকে ৮ হাজার লোক কোভিড সংক্রমণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন।
বিবিসির স্বাস্থ্য সংবাদদাতা লিসা সামার্স বলছেন, এ জরিপের সীমাবদ্ধতা হচ্ছে, এখানে শুধুমাত্র টিকা নেবার পর করোনাভাইরাসের সংক্রমণে গুরুতর অসুস্থ হবার সম্ভাবনা কতটা কমলো সেটাই দেখা হয়েছে। টিকা নেবার পরও আপনি ভাইরাসে সংক্রমিত হতে পারেন কিনা বা অন্যদের মধ্যে রোগ ছড়াতে পারেন কিনা – তা দেখা হয়নি। একটা নির্দিষ্ট সময় পরে টিকা-গ্রহণকারীদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে কিনা – তাও দেখা হয়নি এ জরিপে। কিন্তু আসল কথাটা হলো, মাত্র এক ডোজ টিকা নেবার পরই গ্রহণকারীদের করোনাভাইরাস সংক্রমণে “গুরুতর অসুস্থ হবার” সম্ভাবনা ৮৫ থেকে ৯৪ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাচ্ছে – এটা স্পষ্টভাবেই বেরিয়ে এসেছে এ জরিপে।
পৃথিবীর বহু দেশেই এখন করোনাভাইরাসের টিকা দেয়া শুরু হয়ে গেছে। এ পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি টিকা দেয়া হয়েছে ইসরায়েল, সংযুক্ত আরব আমিরাত, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রে।
এদিকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউট থেকে এলো ২০ লাখ করোনার টিকা। সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভারতের স্পাইসজেট এসজি-০০৬৩ ফ্লাইটটি কোভিশিল্ড ভ্যাকসিনের ২০ লাখ ডোজের একটি চালান নিয়ে বিমানবন্দরে অবতারণ করে। এর আগে, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী ভ্যাকসিনের (কোভিশিল্ড) ২০ লাখ ডোজ বাংলাদেশকে উপহার দিয়েছে ভারত। এরপর গত ২৫ জানুয়ারি বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনায় প্রথম চালানে ৫০ লাখ ডোজ কোভিশিল্ড ভ্যাকসিন (টিকা) বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। গত ২৭ জানুয়ারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নার্স রুনু ভেরোনিকা কস্তাকে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধী টিকা (কোভিশিল্ড) দেওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে টিকা দান কর্মসূচির উদ্বোধন হয়। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চ্যুয়ালি টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০৪০
আপনার মতামত জানানঃ