মোহাম্মদ বিন সালমান দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে বদলের হাওয়া বইতে শুরু করেছে ‘রক্ষণশীল’ দেশ বলে পরিচিত সৌদি আরবে। মোহাম্মদ বিন সালমান ক্রাউন প্রিন্স হওয়ার পর থেকে নারীদের ওপর থেকে একের পর এক বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হচ্ছে। নারীরা এখন মাঠে বসে কনসার্ট ও খেলা দেখার সুযোগ পাচ্ছেন, গাড়ি চালানোর সুযোগ পাচ্ছেন। এরই ধারাবাহিকতায় সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা বাহিনীতেও নারীদের নিয়োগ কার্যক্রম শুরু হয়ে গেছে। গতকাল রোববার(২১ ফেব্রুয়ারি) দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে এতে বলা হয়েছে, সৈনিক থেকে শুরু করে সার্জেন্ট পদে যোগ দিতে পারবেন নারীরা। এই সুযোগ থাকবে রাজকীয় নৌবাহিনী, সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী, কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনী ও সশস্ত্র চিকিৎসা সেবা বিভাগের জন্য। আবেদনকারীকে নিয়োগ পরীক্ষায় পাস করতে হবে, পরিচ্ছন্ন রেকর্ড এবং শারীরিকভাবে সুস্থ হতে হবে। তবে নারীদের ক্ষেত্রে কিছু অতিরিক্ত যোগ্যতা থাকতে হবে। তাদের বয়স ২১ বছর থেকে ৪০ বছর মধ্যে হতে হবে। উচ্চতা কমপক্ষে ১৫৫ সেন্টিমিটার হতে হবে। সরকারি চাকরিজীবী হলে হবে না। কোনও বিদেশি নাগরিককে বিয়ে করলেও আবেদন করা যাবে না। অন্তত হাইস্কুল পাস হতে হবে। আর পুরুষ আবেদনকারীদের বয়স হতে হবে ১৭ থেকে ৪০ বছর, উচ্চতা ১৬০ সেমি বা পাঁচ ফিট ৩ ইঞ্চি।
আরব দেশগুলোর সেনাবাহিনীতে নারী নিয়োগ নিয়ে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিতর্ক চলছে। এখন যুবরাজ সালমানের দূরদৃষ্টির কারণে নানাক্ষেত্রে নারীদের নিয়োগ বেড়েছে। সরকারি বিভিন্ন চাকরির পাশাপাশি তারা এখন সেনাবাহিনীতেও কাজের সুযোগ পেতে যাচ্ছেন। এর আগে শপিং মলের ক্যাশিয়ার, রেস্টুরেন্টের ওয়েটার, কফিশপের বারিস্তার মতো কাজে একচেটিয়া পুরুষদের নিয়োগ দেয়া হত। নতুন এই অর্থনৈতিক পরিকল্পনার অংশ হিসেবে নারীদেরও এসব কাজে নিয়োগ দেয়া শুরু হয়।
প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সংস্কার কর্মসূচি ‘ভিশন ২০৩০’ বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে বর্তমানে সৌদি নারীরা বিভিন্ন সুবিধা পাচ্ছেন। কর্মক্ষেত্রে সৌদি নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানোরও পরিকল্পনা করা হয়েছে। ২০৩০ সালের মধ্যে নারীর সংখ্যা ৩১ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে মোট জনশক্তির এক-তৃতীয়াংশ করতে চায় দেশটি।
২০০৫ সালে সৌদি আরবে নারীদের জোরপূর্বক বিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়। ২০০৯ সালে সৌদি আরবের কেন্দ্রীয় সরকারে প্রথম নারী মন্ত্রী নিয়োগ করেন বাদশাহ আব্দুল্লাহ। নূরা আল কায়েজ নারী বিষয়ক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী হিসেবে সে বছর সরকারে যোগ দেন। ২০১২ সালে প্রথমবারের মতো অলিম্পিকে অংশ নেন সৌদি নারীরা।
২০১৫ সালে সৌদি আরবের পৌরসভা নির্বাচনে নারীরা প্রথমবারের মতো ভোট দেয়ার এবং নির্বাচনে অংশ নেয়ার সুযোগ পান। ২০১৫ সালে সৌদি আরবের ওই নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছিলেন ২০ জন নারী।
২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরব দেশটির স্টক এক্সচেঞ্জের চেয়ারপারসন হিসেবে সারাহ আল সুহাইমির নাম ঘোষণা করে আরেক ইতিহাস সৃষ্টি করে।
২০১৮ সালে নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি দেয় দেশটি। ফলে গাড়ি চালাতে সৌদি নারীদের আর কোনো পুরুষ অভিভাবকের অনুমতি নিতে হবে না। এছাড়া গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পাচ্ছেন তারা।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কট্টর রক্ষণশীল দেশ হিসেবে পরিচিত সৌদি আরব দেরি হলেও নিজেদের বুঝতে পারার চেষ্টা করছে। সৌদি নারীদের সেনাবাহিনীতে প্রবেশের অনুমতি প্রদান সৌদি নারীদের জন্য যুগান্তকারী এক সিদ্ধান্ত বটে। বিশ্বের অন্যান্য স্বাধীন নারীদের মতো সৌদি আরবের নারীরাও নিজেদের স্বাধীনতা ফিরে পাবেন এমন প্রত্যাশা লক্ষণীয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
এসডব্লিউ/ডিআই/কেএইচ/১৯০৫
আপনার মতামত জানানঃ