
ছবি : সংগৃহীত
ঘটনার সূত্রপাত শহরের রূপাতলী বিআরটিসি বাস কাউন্টারে। গতকাল দুপুর ১টার দিকে যশোরে নিজ বাড়িতে যাওয়ার জন্য শহরের রূপাতলী বিআরটিসি বাস কাউন্টারে যান সজল নামের এক শিক্ষার্থী। তাকে বাসে উঠিয়ে দিতে সঙ্গে যান সহপাঠি ফারজানা আক্তার। টিকিট কেটে সজল ও ফারজানা বিআরটিসি বাস কাউন্টারে অপেক্ষা করছিলেন। এসময় ভান্ডারিয়াগামী একটি বিআরটিসি বাস এসে থামে। লাইনম্যান রফিকের কাছে বাসটি কোথায় যাবে জানতে চাইলে সজলকে গালি দেন তিনি। এনিয়ে তাদের সঙ্গে লাইনম্যান রফিক ও বিআরটিসি বাস কাউন্টারে থাকা অন্যদের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে রফিক পাশের ফলের দোকান থেকে ছুরি নিয়ে এসে সজলকে আঘাত করেন। তাকে উদ্ধারে সহপাঠি ফারজানা এগিয়ে এলে তাকে লঞ্ছিত করে রফিকসহ স্টাফরা। এখান থেকেই আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
এ ঘটনার সংবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে দেড়টার দিকে তারা ঘটনাস্থলে হাজির হয়। দুপুর দুইটা থেকে সড়কে টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ শুরু করেন। পরে পুলিশ অভিযুক্ত বিআরটিসি বাস কাউন্টারের স্টাফ মো. রফিককে আটক করে। তিনি বরিশাল-আমুয়া রুটে লাইনম্যান হিসেবে রূপাতলী বিআরটিসির বাস কাউন্টারে কাজ করেন।
পুলিশ বলছে, অভিযুক্তকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান।
ওসি মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘অভিযুক্ত রফিককে আটক করা হয়েছে। উদ্ভূত সমস্যা সমাধানের চেষ্টা চলছে। শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার করেছেন। উত্তেজনা নিরসনে ওই এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’
ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি। পরিবহন শ্রমিককে আটক করায় ফোঁসে ওঠে অন্যান্য পরিবহন শ্রমিকেরা। পরে গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। রাত ২টার দিকে রুপাতলী হাউজিং এলাকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মেসে এ হামলার ঘটনা ঘটে। অভিযোগ, বরিশাল-পটুয়াখালী মিনিবাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাউসার হোসেন শিপনের নেতৃত্বে একদল পরিবহন শ্রমিক লাঠিসোঁটা নিয়ে ওই হামলা চালায়।এতে ১১ শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। তাদেরকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আহত শিক্ষার্থীরা হলেন মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের নুরুল্লাহ সিদ্দিকী, রসায়ন বিভাগের এস এম সোহানুর রহমান, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আহসানুজ্জামান, গণিত বিভাগের ফজলুল হক রাজীব, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের আলীম সালেহী, বোটানি ও ক্রপ সাইন্সের আলী হাসান, বাংলা বিভাগের মো. রাজন হোসেন এবং মার্কেটিং বিভাগের মাহবুবুর রহমান, মাহাদী হাসান ইমন, মিরাজ হাওলাদার ও সজীব শেখ।
শিক্ষার্থীরা জানান, মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রকে ছুড়িকাঘাত ও লাঞ্ছিত করার পর হামলাকারী পরিবহন শ্রমিকের বিচার দাবিতে সড়ক অবরোধ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এর জের ধরে অবরোধের সময় নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থী মাহামুদুল হাসান তমালের মেসে গভীর রাতে হামলা চালান পরিবহন শ্রমিকরা। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে পার্শ্ববর্তী মেসের শিক্ষার্থীরা তমালকে উদ্ধারে এগিয়ে এলে ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়। ৬০ থেকে ৭০ জন পরিবহনশ্রমিক ধারালো অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে রূপাতলী হাউজিংয়ের ১৮, ১৯, ২৩ ও ২৫ নম্বর রোডের মেসগুলোতেও তাণ্ডব চালান। রাত দুইটার দিকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আনে এবং আহত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অ্যাম্বুলেন্স গিয়ে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
এই ঘটনায় রাতেই ঢাকা কুয়াকাটা মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করা হলেও সকাল ৭টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ চলছে। হামলার ঘটনার সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত সড়ক অবরোধ অব্যাহত থাকবে বলে জানান শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সুব্রত কুমার দাস বলেন, রাতে সংবাদ পেয়ে তিনি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষক-কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান। আহত সব শিক্ষার্থীর চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানার পরিদর্শক মো. আসাদুজ্জামান বলেন, শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। দুই পাশে অসংখ্য যানবাহন আটকা পড়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩৩০
2 - 2Shares
আপনার মতামত জানানঃ