শেরপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষের সংবাদ সংগ্রহকালে দুর্বৃত্তের হামলায় ডিবিসি নিউজের শেরপুর প্রতিনিধি এস এম জুবায়ের দীপ গুরুতর আহত হয়েছেন। সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ৭টার দিকে চতুর্থ ধাপের পৌর নির্বাচনে ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বিজয়ী কাউন্সিলর নাহিদ হাসান ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। জুবায়ের দ্বীপ সেই সংঘর্ষের ভিডিও ধারণ করতে গেলে ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে তার ওপর অতর্কিতে হামলা চালায় দুই প্রার্থীর কাউন্সিলর সমর্থকরা। এসময় তার মোবাইল ক্যামেরা ও ট্রাইপড ছিনিয়ে নেয় হামলাকারীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শেরপুর শহরের পূর্বশেরী এলাকার বাসিন্দা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা মুরশীদুর রহমান আকন্দ ও স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছে। এর জের ধরে ইতোপূর্বে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবিতে অগ্নিসংযোগের ঘটনাও ঘটে। গতকাল সোমবার চতুর্থ ধাপের পৌরসভা নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা মুরশীদুর রহমান আকন্দের অনুসারী নাহিদ হাসান ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে বিজয়ী হন। এতে পুরনো দ্বন্দ্ব আবারো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে এবং গতকাল রাতে মুরশীদুর রহমান আকন্দের অনুসারীরা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা করলে সহিংস ঘটনা ঘটে।
ওই সহিংস ঘটনার সংবাদ সংগ্রহের জন্য ডিবিসি টিভির শেরপুর প্রতিনিধি এস এম জুবায়ের দ্বীপ পূর্বশেরী এলাকায় যান। এসময় অস্টমীতলা এলাকার দিক থেকে আসা ছাত্রলীগ নেতা মুরশীদুর রহমান আকন্দের অনুসারীদের একটি মিছিল থেকে স্থানীয় ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা আবুল কালাম আজাদের বিরুদ্ধে ‘আজাদের দুই গালে জুতা মারো তালে তালে’ স্লোগান দেওয়া হয়। সাংবাদিক জুবায়ের দ্বীপ সেই মিছিলের ভিডিও ধারণ করতে থাকলে ওই মিছিল থেকেই ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে তার ওপর অতর্কিতে হামলা চালিয়ে তাকে মারপিটে আহত করা হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে শেরপুর জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নবনির্বাচিত পৌর মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন, সদর থানার ওসি আব্দুলস্নাহ আল মামুন, শেরপুর প্রেসক্লাব সভাপতি শরিফুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মেরাজ উদ্দিন ও সাংবাদিক নৃেতৃবৃন্দ রাতেই আহত জুবায়ের দ্বীপকে দেখতে জেলা হাসপাতালে ছুটে যান ও তার চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন। হামলার ঘটনায় তারা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান এবং হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেপ্তার ও আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
এ বিষয়ে শেরপুর প্রেসক্লাব, শেরপুর ইয়্যুথ রিপোর্টার্স ক্লাব, নকলা ইয়্যুথ রিপোর্টার্স ক্লাবসহ জেলা-উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকদের সমন্বয়ে গঠিত বিভিন্ন সংগঠন আলাদাভাবে নিন্দা জ্ঞাপন করার পাশাপাশি জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। তাছাড়া জেলা-উপজেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়েছেন।
শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সাংবাদিক জুবায়ের দ্বীপের ওপর হামলার ঘটনায় দ্রুতবিচার আইনে একটি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। সাংবাদিক জুবায়ের দ্বীপ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরো ২০-২৫ জনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের করেছেন। মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে এবং ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতাদের বেওপরোয়া হয়ে ওঠার কারণেই সাংবাদিক থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের কেউ তাদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। দলীয় প্রভাব খাটিয়েই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা এ ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। সরকার দলীয় বিধায় তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলতে কেউ সাহস করে না। এমনকি স্থানীয় প্রশাসনও কোনো ভূমিকা নিতে পারে না। এসবের শাস্তি নিরূপণ নয়, দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিও দাবি করেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২০১৯
আপনার মতামত জানানঃ