করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে মধ্যপ্রাচ্যের অর্থনীতি পর্যুদস্ত হলেও সেই মধ্যপ্রাচ্যেই আটকে আছে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানি। এর বাইরে অন্য দেশে বাংলাদেশি শ্রমিকরা গেলেও তার হার অনেক কম। ইতিমধ্যেই কয়েক লাখ শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছেন। নতুন করে যাদের যাওয়ার কথা ছিল সেই সংখ্যা মারাত্মকভাবে কমে গেছে। ফলে বাংলাদেশের শ্রমবাজারের স্বাভাবিক গতি ধরে রাখতে আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্র মাদাগাস্কারে যাচ্ছে বাংলাদেশি কর্মী। প্রাথমিক পর্যায়ে প্রায় এক হাজার ১০০ শ্রমিক পাঠানোর চিন্তা করা হচ্ছে। কর্মী নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশে আসছেন প্রকল্প বাস্তবায়ন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা। মাদাগাস্কারের নির্মাণ প্রকল্পে কাজ করবেন এই কর্মীরা। ইতিমধ্যেই বাংলাদেশ দূতাবাস কর্মী নিয়োগের বিষয়ে সম্মতি জানিয়েছে। ফলে আগামী মার্চের মাঝামাঝি এসব কর্মীর ফ্লাইট শুরু হবে আশা করা যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পৃথিবীর বৃহত্তম দ্বীপগুলোর মধ্যে অন্যতম মাদাগাস্কার দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকা মহাদেশের উপকূলে অবস্থিত। এটি দ্বীপরাষ্ট্র হলেও মাদাগাস্কারের আয়তন বাংলাদেশের প্রায় চারগুণ। তবে জনসংখ্যা প্রায় আড়াই কোটি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি মাদাগাস্কার অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে চলছে। মাদাগাস্কার সরকার প্রায় ১০ হাজার সোশ্যাল হোম নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এ প্রকল্পের কাজ পেয়েছে মালয়েশিয়ার এম সিটি ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্ট। মালয়েশিয়ার এই কোম্পানিটি প্রাথমিক পর্যায়ে ইঞ্জিনিয়ার ও দক্ষ নির্মাণ শ্রমিক এবং অদক্ষ শ্রমিক মিলিয়ে ১২টি ক্যাটাগরিতে প্রায় এক হাজার ১০০ কর্মী নিয়োগ করবে বাংলাদেশ থেকে। কর্মী নিয়োগের সাক্ষাৎকারের জন্য এম সিটি ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্টের তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশ সফরে আসছেন। পরবর্তীতে আরও কর্মী নেওয়ার চিন্তা আছে কোম্পানিটির। বাংলাদেশের জন্য নতুন এই মাদাগাস্কারের শ্রমবাজার নিয়ে কাজ করছে এশিয়া কন্টিনেন্টাল গ্রুপ (বিডি)। এই কোম্পানি এর আগে রোমানিয়ায় নতুন শ্রমবাজার তৈরিতে ভূমিকা রাখে। এ প্রসঙ্গে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক লোকমান শাহ বাংলাদেশ গণমাধ্যমকে বলেন, করোনা মহামারীসহ বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে আসছিল। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন নতুন শ্রমবাজার সন্ধানের নির্দেশ দেন। এ কাজটি শুধু সরকারের হাতে ছেড়ে না দিয়ে আমরাও বিভিন্ন পর্যায়ে ব্যক্তি উদ্যোগে নতুন বাজার খুঁজতে সচেষ্ট হই। পরে পরিশ্রমের ফসল হিসেবে রোমানিয়া, মাদাগাস্কারের মতো বাজার তৈরি করি।
জনশক্তি, প্রশিক্ষণ ও কর্মসংস্থান ব্যুরোর (বিএমইটি) মহাপরিচালক শামসুল আলম বলেছেন, আগে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩ হাজার লোক বিদেশে যেত। এখন তা কমে ১৬/১৭ শ দাঁড়িয়েছে। কিন্তু করোনার কারণে তা দিন দিন কমছে। অনেক দেশ বিমান চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় এমন হচ্ছে। আসলে মহামারীর এ সময়ে কারও কিছু করার নেই। সবাই অসহায়। তিনি বলেন, গত ৮ মাসে যারা ফিরেছেন তার মধ্যে ৮/৯ হাজার লোক আবার ওইসব দেশে ফিরে গেছেন। আর বাকিরা সবাই এমনিতেই আর যেতে পারবেন না। তিনি বলেন, ফিরে আসাদের মধ্যে অনেকের ভিসার মেয়াদ শেষ, অনেকে প্রতারিত হয়ে ফিরেছেন, আবার অনেকে বিদেশে গিয়ে অপরাধ করে সাধারণ ক্ষমায় ফিরেছেন। তারা আর যাওয়ার সুযোগ পাবেন না।
নতুন শ্রমবাজার সম্পর্কে বিএমইটি মহাপরিচালক বলেন, মালয়েশিয়া, উজবেকিস্তান ও জর্ডানের ব্যাপারেও সরকার আশাবাদী। করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে এর কাজের অগ্রগতি বোঝা যাবে। পাশাপাশি মধ্য এশিয়া ও পূর্ব ইউরোপের দেশ রোমানিয়া এবং কাজাখস্তান। এ ছাড়াও জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া এবং হংকংয়ের কথাও ভাবা হচ্ছে। তিনি বলেন, মরুভূমির চেয়ে এসব দেশে আবহাওয়া সহনীয়। তাছাড়া এসব দেশে কাজগুলোর ধরন ভালো, শুধু ক্লিনারের কাজ নয়। বেতনও বেশি আবার শ্রমিকদের অধিকারের পরিস্থিতিও ভালো।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, করোনা ভাইরাস মহামারি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বিশ্বব্যাপী শ্রমবাজার হুমকির মুখে পড়েছে। এটি মোকাবিলা করা চ্যালেঞ্জিং বটে। মালয়েশিয়া, সৌদি আরব, কুয়েতসহ কয়েকটি দেশ থেকে প্রবাসী শ্রমিকরা দেশে ফেরত আসছেন। এমতাবস্থায় বিদেশে শ্রমবাজার সঙ্কুচিত হয়ে আসছে। এ পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখার বিষয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা বাড়ছে। সে বিবেচনায় শ্রমিকদের মধ্যপ্রাচ্যের পাশাপাশি বিকল্প শ্রমবাজার আফ্রিকার দ্বীপরাষ্ট্র মাদাগাস্কারে পাঠানোর পরিকল্পনা সরকারের ভালো উদ্যোগ।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৩১০
আপনার মতামত জানানঃ