বিদেশের কারাগারে ১১ হাজার ৪৫০ জন বাংলাদেশি বন্দি থাকার কথা সংসদকে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হাছান মাহমুদ।
সোমবার জাতীয় সংসদের প্রশ্নোত্তরে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ফরিদা ইয়াসমিনের প্রশ্নের জবাবে এ তথ্য জানান তিনি।
সোমবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রশ্নোত্তর টেবিলে উপস্থাপিত হয়।মন্ত্রীর তথ্য অনুযায়ী ৩১ টি দেশে বাংলাদেশি নাগরিকরা আটক আছেন। এর মধ্যে সব থেকে বেশি ৫ হাজার ৭৪৬ জন আটক আছেন সৌদি আরবে।
ভারতে আটক আছেন দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এক হাজার ৫৭৯ জন। এছাড়া তুরস্কে ৫০৮ জন, ওমানে ৪২০ জন, কাতারে ৪১৫ জন, গ্রিসে ৪১৪ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৪০৪ জন, দক্ষিণ আফ্রিকায় ৩৮৫ জন, মিয়ানমারে ৩৫৮ জন আটক আছেন।
স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ নাহিদ নিগারের প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, বিদেশে পাচার হয়ে যাওয়া বাংলাদেশি নাগরিকদের দেশে প্রত্যাবাসনের জন্য সংশ্লিষ্ট দূতাবাস আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা-আইএমওর সঙ্গে সমন্বয় করে তাদের উদ্ধার করে দেশে ফেরানোর ব্যবস্থা করে থাকে।
২০২৩ সালের জুলাই থেকে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১ হাজার ৪৭৯ জন বাংলাদেশিকে ফেরানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এর মধ্যে সুদান থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১ হাজার ২০০ জন প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্ধার করে এবং সরকারি খরচে দেশে ফেরত আনার ব্যবস্থা করা হয়।
জাতীয় পার্টির মুজিবুল হকের প্রশ্নের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কখনই শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা প্রদান করেনি। জিএসপি সুবিধাকালীন সময়েও গার্মেন্টস পণ্য এর আওতা বহির্ভূত ছিল।”
এ সুবিধা ছাড়াই উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানির একক বৃহত্তম বাজারে পরিণত হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন হাছান।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পর থেকে এখনো পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র তাদের জিএসপি পদ্ধতি পুনঃপ্রবর্তন করেনি জানিয়ে তিনি বলেন, “জিএসপি সুবিধা পুনরায় চালু হলে তাতে বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তি এবং গার্মেন্টস পণ্যকেও জিএসপির আওতায় আনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।”
চট্টগ্রাম-১১ আসনে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য এম আবদুল লতিফের এক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় র্যাবের উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে শুরু থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে।
র্যাবের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলোকে কথিত উল্লেখ করে বলা হয়, “এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও ট্রেজারি ডিপার্টমেন্টের কাছে পদ্ধতিগতভাবে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরা হয়েছে এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
“নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা ও বিধিগত প্রক্রিয়া চলমান আছে। এ বিষয়ে মন্ত্রণালয় যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুবিবেচনা আশা করছে।”
আবদুল লতিফের আরেক প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ থেকে মধ্যপ্রাচ্যে শ্রমশক্তি রপ্তানি দ্বিগুণ হয়েছে।
এ অঞ্চলে বাংলাদেশি শ্রমশক্তির প্রায় ৬০ শতাংশ আধাদক্ষ ও অদক্ষ এবং এ অঞ্চলটি ৬০ শতাংশ রেমিটেন্সের উৎস বলেও উল্লেখ করেন তিনি।মন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সালের ২০২৩ পর্যন্ত ১১ লাখ ৮১ হাজার ৫৩ জন বাংলাদেশি কর্মসংস্থান ভিসা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যান। কাজের সুযোগ না পেয়ে ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণে বাংলাদেশিরা অবৈধ হয়ে পড়ে। তাদের মানবিক সাহায্যের পাশাপাশি বৈধতা প্রদানে নিরবচ্ছিন্ন কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানো হয়।
করোনাভাইরাস মহামারীর সময়ে কাজ হারিয়ে অবৈধ হওয়া কর্মীদের একটি বড় অংশ নিয়োগকর্তা পরিবর্তনের মাধ্যমে বৈধ হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন বলেও সংসদকে জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রী। ২০২০-২০২২ মেয়াদে ভিজিট ভিসা থেকে কর্মী ভিসায় রূপান্তরের সুযোগ নিয়ে প্রায় ৩ লাখ বাংলাদেশি বৈধ কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
কিছু প্রবাসী বেশি উপার্জনের লোভে তাদের নিয়োগকারীদের কাছ থেকে পালিয়ে জর্ডানে অবৈধ হয়ে যায় জানিয়েও সতর্ক করেন হাছান মাহমুদ। বলেন, বাংলাদেশ দূতাবাস আম্মান শ্রমিকদের পালিয়ে যাওয়ার প্রবণতা কমানোর জন্য নিয়োগকারীদের সহযোগিতায় তাদের কর্মক্ষেত্রে পোস্ট অ্যারাইভাল সেশনসহ নিয়মিত সেশন আয়োজন করে থাকে।
আপনার মতামত জানানঃ