পত্রপত্রিকায় কিশোর গ্যাং বিষয়ে প্রায় প্রতিদিনই কিছু না কিছু খবর বেরোচ্ছেই। সমস্যাটি যে করোনার মতোই মহামারি হতে চলেছে, খবরের সংখ্যা বেড়ে চলা থেকেই সেটি স্পষ্ট। রাজধানীর মুগদায় ‘সিনিয়র-জুনিয়র’ দ্বন্দ্বে হাসান মিয়া (১৭) নামে এক কিশোরকে হত্যা মামলায় জড়িত সন্দেহে সাতজনকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। সংস্থাটির ভাষ্য, গ্রেফতারকৃতরা একটি কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (পূর্ব) অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সাহিদুর রহমান রিপন জানিয়েছেন, মতিঝিল গোয়েন্দা বিভাগের খিলগাঁও অঞ্চলের একটি দল মহানগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে সাত কিশোরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার কৃতরা হলেন- মো. তানভির ওরফে ব্যান্ডেজ (১৬), রাতুল (১৬), ফাহিম (১৬), মো. রতন (১৭), রিয়াদ ওরফে গ্যাং স্টার রিয়াদ, নিশাত (১৬), এবং আবু বকর সিদ্দিক (১৭)।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার মো. মাহবুব আলম বলেন, মূলত সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দ্বে ব্যান্ডেজ গ্রুপের সদস্যরা হাসানকে খুন করেছে। হাসান তাদের সালাম দেয়নি বলে ক্ষুদ্ধ হয়ে তারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে। ওই কিশোর গ্যাং গ্রুপের নেতৃত্বে ছিল তানভীর। তিনি বলেন, হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আরও কয়েকজনের নাম পাওয়া গেছে। তাদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
ডিএমপির অপরাধ পর্যালোচনার তথ্য অনুযায়ী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ৪০টির মতো কিশোর গ্যাং রয়েছে৷ প্রতিটি গ্যাং-এর সদস্য সংখ্যা ১৫-২০ জন৷ পুলিশ সূত্র জানায়, গত এক বছরে ঢাকায় অন্তত পাঁচটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তারা৷ এর মধ্যে উত্তরার কিশোর গ্যাং সবচেয়ে আলোচিত৷ সেখানে একাধিক গ্যাং রয়েছে৷ ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে উত্তরায় ডিসকো এবং নাইন স্টার গ্রুপের দ্বন্দ্বে নিহত হয় কিশোর আদনান কবির৷ তার পরের মাসে তেজকুনি পাড়ায় দুই গ্রুপের দ্বন্দ্বে খুন হয় কিশোর আজিজুল হক৷ ঢাকার বাইরে থেকেও প্রায়ই কিশোর গ্যাং-এর দ্বন্দ্বে খুনখারাবির খবর পাওয়া যায়৷
গডফাদাররা এই কিশোরদের ব্যবহার করছে৷ গত বছর সাভারে স্কুল ছাত্রী নীলা হত্যায় কিশোর গ্যাং জড়িত৷ আর ওই হত্যাকাণ্ডের মূল আসামি মিজানুর রহমান কিশোর গ্যাং লিডার৷ আর তার গডফাদার স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা৷ ওই বছরের ৯ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লায় দুই কিশোর গ্যাংয়ের বিরোধে নাঈম নামের এক কিশোরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়৷ একই এলাকায় কিশোর গ্যাং-এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ায় গত বছরের ১ এপ্রিল শরিফ হোসেন নামে এক যুবককে কুপিয়ে হত্যা করা হয়৷
সারাদেশের প্রত্যন্ত এলাকাতেও এখন কিশোর গ্যাং সক্রিয়৷ অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতারা তাদের ব্যবহার করেন৷ আর সেই ক্ষমতায় গ্যাংগুলো বেপরোয়া হয়ে উঠেছে৷ হত্যা ছাড়াও ধর্ষণ, মাদক ব্যবসাসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে৷
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার চার কোটি শিশু-কিশোর৷ এরমধ্যে এক কোটি ৩০ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত৷ ওই শিশুরা তো অপরাধে জড়িয়ে পড়তেই পারে৷ নিম্নবিত্ত পরিবারে যেমন বাবা -মা দুইজনই কাজে বেরিয়ে যান, তেমনি মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত পরিবারেও বাবা-মা সন্তানকে সময় দেন না৷ তারা নানা ধরনের গেম, সিনেমা দেখে, একাকিত্বের কারণে অপরাধী হয়ে ওঠে৷ আর সমাজ ও রাষ্ট্রে অপরাধ, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহারও তাদের অপরাধে প্রলুব্ধ করে৷ রাষ্ট্র, সমাজ ও পরিবার শিশুদের জন্য শিশুবান্ধব পরিবেশ দিকে ব্যর্থ হচ্ছে৷ তাদের মধ্যে মূল্যবোধ তৈরি করতে পারছে না৷ যার পরিণতি আমরা এখন দেখছি পারছি। একমাত্র পরিবারের নজরদারি ও মূল্যবোধ এই কিশোর অপরাধ অনেক কমিয়ে আনতে পারে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৭১৯
আপনার মতামত জানানঃ