চীনের উহান শহরের গবেষণাগার থেকে করোনাভাইরাসের ছড়িয়েছে বলে যে কথা উঠেছিল, তা উদ্ভবের বিতর্কিত তত্ত্ব নাকচ করে দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বিশেষজ্ঞরা। চীন সফররত ডব্লিউএইচও’ তদন্ত দলের প্রধান পিটার বেন এম্বারেক মঙ্গলবার গবেষণাগার থেকে করোনার ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি নাকচ করে দেন। তিনি বলেন, উৎস শনাক্তে আরও অনেক কাজ প্রয়োজন। তদন্তে নতুন তথ্য পাওয়া গেছে।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের উৎস শনাক্তে ডব্লিউএইচওর একটি তদন্ত দল বর্তমানে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর সফর করছেন। ডব্লিউএইচওর ওই তদন্তকাজের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে চীনের একটি তদন্ত দলও। ডব্লিউএইচওর তদন্ত দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন পিটার বেন এমবারেক।
প্রাথমিকভাবে অবশ্য একাধিক গবেষণায় অনুমান করা হয়েছিল, বাদুড়ের দেহ থেকে ছড়িয়েছে করোনাভাইরাস। কারণ বাদুড়ের শরীরে এমন একটি জিনের হদিশ মিলেছিল, যার সঙ্গে সার্স-কোভ-২-এর ৯৬ শতাংশ মিল আছে। কিন্তু বাদুড়ের শরীরে যে করোনাভাইরাস থাকে, তা মানুষের ফুসফুসের কোষের রিসেপটরে কার্যকারী হতে পারে না। এম্বারেক বলেন, ‘উহান শহর বা সেখানের পরিবেশ যেহেতু বাদুড়ের বাসস্থানের কাছাকাছি নয়, তাই উহান শহরের বাদুড়ের শরীরে সংক্রমণের বিষয়টি খুব একটা সম্ভব নয়।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। সংক্রমণের খবর প্রকাশের পর বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছিলেন, ভাইরাসটি সম্ভবত চীনের উহান শহরের কোনও এক বাজারের বন্যপ্রাণীর শরীর থেকে মানুষের শরীরে প্রবেশ করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন শুরু থেকেই করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার জন্য চীনকে দায়ী করে আসছে। সঙ্গে আরও কিছু পশ্চিমা দেশ এই ভাইরাসের উৎস সম্পর্কে তদন্তের দাবি তুলেছিল। চীনের শীর্ষ ভাইরাস গবেষণাগারগুলোর একটি উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলোজি থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়েছে বলে জল্পনা চলছিল। গত এপ্রিলে প্রকাশ্যে আসা যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তার বার্তায় উহানে জৈবনিরাপত্তা নিয়ে দূতাবাস কর্মীদের উদ্বেগের ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
করোনার উৎস শনাক্তে ডব্লিউএইচওর সঙ্গে কাজ করছে চীনের তদন্ত দলের প্রধান লিয়াং ওয়ানিয়ানও গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি বলেন, প্রাণী থেকে ভাইরাসটি এলেও ভাইরাসের বাহক এখনো শনাক্ত করা হয়নি। আমদানি করা খাদ্যের মাধ্যমে করোনাভাইরাস চীনে এসেছে, এমন তত্ত্বকে ইঙ্গিত করে লিয়াং ওয়ানিয়ান আরও বলেন, গবেষণাগুলোয় দেখা গেছে, অনেক দূর থেকে আসা হিমায়িত পণ্যে ভাইরাসের উপস্থিতি থাকতে পারে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের আগে উহান থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর কোনো ‘প্রমাণ’ নেই বলেও দাবি করেন তিনি।
আন্তর্জাতিক জরিপ পর্যালোচনাকারী ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডওমিটারের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১০ কোটি ৭০ লাখ ৩ হাজার ৫২৬ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ২৩ লাখ ৩৬ হাজার ২৪২ জন। বাকিরা সুস্থ হয়ে ওঠেছেন।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/১৪৪০
আপনার মতামত জানানঃ