মিয়ানমারের নির্বাচিত সরকার সুচিকে ক্ষমতা থেকে হটিয়ে দেশটির সামরিক বাহিনী সদ্যই ক্ষমতা দখল করে নেয়। বিশ্বব্যাপী ের আলোচনা-সমালোচনার রেশ এখনো কাটেনি, এরইমধ্যে দেশটির সামরিক সরকার ইয়াঙ্গুনে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতের মাধ্যমে বাংলাদেশকে চিঠি দিয়েছে। চিঠিতে দেশটিতে সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের কেন দরকার পড়লো বাংলাদেশকে তারা সেটির ব্যাখ্যা দিয়েছে। আজ শনিবার(০৬ ফেব্রুয়ারি) পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন সাংবাদিকদের একথা জানিয়েছেন। তবে সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা মনে করছেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের চলমান দ্বন্দ্ব নিরসনে দেশটির সামরিক বাহিনী বাংলাদেশকে কাছে টানতে চাইছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন শনিবার সাংবাদিকদের বলেন, মিয়ানমার সরকার আমাদের রাষ্ট্রদূতকে একটি চিঠি দিয়েছে। সেখানে তারা বলেছে কী কারণে তারা ক্ষমতা দখল করেছে। তারা বলেছে, এক কোটির বেশি ভুয়া ভোট হয়েছে। এই ভুয়া ভোটের কারণে তাদের একটি দায়িত্ব চলে এসেছে।
অং সান সুচি’র সরকারের সময়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকারের সাথে একটা আলোচনা চলছিল। গণতান্ত্রিক সরকারের একটা পদ্ধতিও এসেছিল। মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশ সরকার সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আলোচনা চলছিল। এখন সামরিক সরকার গঠন করেছে। এই সামরিক সরকারের সাথে বাংলাদেশ এবং বিভিন্ন দেশের যোগাযোগ বা আলোচনা হবে কিনা-সেখানে দেখা দিয়েছে ধোঁয়াশা। মিয়ানমারের সেনা সরকার চলমান রোহিঙ্গা ইস্যুর আলোচনায় কোন অবস্থান নেবে- এ নিয়ে ছিল সন্দেহ। কারণ সেটি তাদের রাজনীতির পুরোপুরি বিপরীত একটি কাজ হবে।
রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানোর ব্যাপারে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মধ্যে চুক্তি সই হয়েছিল ২০১৮ সালে জানুয়ারি মাসে। প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে দ্বিপাক্ষিক সেই চুক্তিকে মূল ভিত্তি হিসাবে তুলে ধরে বাংলাদেশ সরকার। তবে এখন যে আলোচনা থমকে গেছে, বাংলাদেশ সরকার সেই আলোচনাই আবার শুরু করতে চায়। এরইমধ্যে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইতিবাচক এক ইঙ্গিত দিলেন।
এই নতুন সরকারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ’আমাদের কাছে খবর এসেছে যে মিলিটারি কমান্ডাররা রাখাইনে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পে গিয়েছিলেন এবং তাদের সঙ্গে আলাপ করেছেন। রোহিঙ্গারা তাদের অভিযোগের কথা বলেছে যে তারা চলাফেরা করতে পারে না। আর্মি সরকার বলছে, আমরা তোমাদের অবস্থার পরিবর্তন করবো, ধাপে ধাপে অবস্থার পরিবর্তন করবো। এগুলো শুনে কুতুপালং ক্যাম্পে খুব উৎসাহ হচ্ছে। তারা খুশি যে আর্মিরা তাদের অভয় দিচ্ছে। এটি ভালো খবর।
মিয়ানমারের সামরিক অভ্যুত্থান নিয়ে যখন পশ্চিমা দেশগুলো নিন্দা জানিয়ে আসছিল ক্রমাগত, এই মুহূর্তে সামরিক সরকার কর্তৃক বাংলাদেশকে চিঠি মারফতে অভ্যুত্থানের কৈফিয়ত দেওয়াকে বাংলাদেশকে তারা কাছে টানতে চাইছেন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা। একইসাথে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দেওয়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে সামরিক বাহিনীর ইতিবাচক আচরণের বিষয়টাকেও একই উদ্দেশ্য বলে মনে করছেন তারা। তবে রোহিঙ্গা প্রত্যাবসনে কোনো ইতিবাচক সংবাদ প্রত্যাশা করতে পারছেন না তারা। কেননা এটা সামরিক বাহিনীর সম্পূর্ণ বিপরীতে অবস্থান করে। তবে বিশ্ব রাজনীতি এবং বাংলাদেশের সাথে চীনের চলমান আলাপ আলোচনা থেকে বিশ্লেষকরা ধারণা করতে চান যে, এবিষয়ে ইতিবাচক কোনো ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা উঁকি দিয়েছে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২০৪৬
আপনার মতামত জানানঃ