ছবি: সংগৃহীত
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের অভিযান আর সমর্থন করবে না যুক্তরাষ্ট্র। বিশ্বব্যাপী কূটনীতি, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান জোরদারের অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র নীতিতে অন্যান্য বিষয়ে পরিবর্তনের ঘোষণাও দেন বাইডেন। বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট হিসেবে কূটনীতিকদের উদ্দেশে দেওয়া বক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি।
দায়িত্ব গ্রহণের দুই সপ্তাহ শেষে বাইডেন ও ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস একসঙ্গে পররাষ্ট্র দফতরে যান। ট্রাম্পের চার বছরের শাসনের পরে কূটনৈতিক বিষয় নবায়নের প্রতীক হিসেবে তারা পররাষ্ট্র দফতরে গেলেন।
সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতি উল্টে দিয়ে বাইডেন ঘোষণা করেন, এই যুদ্ধের ইতি টানতে হবে। তিনি বলেন, আমরা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ইয়েমেন যুদ্ধে অস্ত্র বিক্রিসহ আমেরিকার সব ধরনের সহযোগিতা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছি।
বাইডেন বলেন, আমেরিকা তার জায়গায় ফিরেছে, কূটনীতি ফিরে এসেছে। ইয়েমেনে বিশেষ দূত হিসেবে টিমুথি লেনডারকিংকে নিয়োগ দিয়ে তিনি বলেন, এই দূত জাতিসংঘের যুদ্ধ বিরতি প্রচেষ্টা এবং সরকার ও হুতি বিদ্রোহীদের মধ্যে শান্তি আলোচনায় সহায়তা করবে। হুতিরা রাজধানী সানাসহ দেশটির বেশীরভাগ এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। যুদ্ধের অবর্ণনীয় দুর্দশায় থাকা ইয়েমেনের জনগণের কাছে মানবিক সহায়তা পৌঁছানো নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করবে।
গত সপ্তাহে সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) কাছে অস্ত্র বিক্রি স্থগিত করে বাইডেনের প্রশাসন। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের সাত দিনের মাথায় মধ্যপ্রাচ্যের শক্তিশালী দেশ ইরানের চিরবৈরী এই দুই দেশের কাছে অস্ত্র বিক্রি বন্ধ করেন জো বাইডেন। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে কেনা এই অস্ত্র দিয়েই মূলত ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহী ও সাধারণ মানুষের ওপর হামলা চালাতো দেশ দুটি। অবশ্য সৌদি আরবের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার কাজে ওয়াশিংটনের সমর্থন অব্যাহত থাকবে বলেও তিনি ঘোষণা করেন।
২০১৫ সালে ইয়েমেনের প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদিকে উচ্ছেদ করে রাজধানী সানা দখলে নেয় দেশটির ইরান সমর্থিত শিয়াপন্থী হুথি বিদ্রোহীরা। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন ক্ষমতাচ্যুত হাদি। হুথিরা ক্ষমতা দখলের পর থেকেই হাদির অনুগত সেনাবাহিনীর একাংশ তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে। ২০১৫ সালের মার্চে হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে ‘অপারেশন ডিসাইসিভ স্টর্ম’ নামের সামরিক আগ্রাসন শুরু করে সৌদি-আমিরাতের সামরিক জোট। সৌদি জোটের বিমান হামলায় নিহত হয় লক্ষাধিক বেসামরিক মানুষ। দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছায় ইয়েমেন।
হুতিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের প্রতি সমর্থন জানিয়ে আসছিল যুক্তরাষ্ট্র। বৃহস্পতিবার বাইডেনের দেয়া ঘোষণা অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র এই অভিযানে সমর্থন দেয়া বন্ধ করবে।
এখন ইয়েমেন এবং ইরানে নতুন মার্কিন দূতদের কাজ হবে ইয়েমেনের যুদ্ধ থামানো এবং যুদ্ধের একটি মূল কারণ আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব নিরসনের চেষ্টা করা। এর আগে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর রিয়াদের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্পর্ক পুনর্নির্মাণের’ অঙ্গীকার করেছিলেন বাইডেন। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই ট্রাম্প প্রশাসনের প্রধান প্রধান বিভিন্ন নীতি ও সিদ্ধান্ত পরিবর্তন বা পর্যালোচনা করতে একের পর এক নির্বাহী আদেশ জারি করেন নতুন এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট।
একইসাথে ইরানের কারণে সৌদি আরবের সার্বভৌমত্ব ও নিরাপত্তায় হুমকি মোকাবেলায় সহযোগিতাও করবে ওয়াশিংটন। এ আশ্বাসে সন্তোষ জানিয়েছে রিয়াদ।
জাতিসংঘের ভাষ্য অনুযায়ী, বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ইয়েমেন। সেখানকার জনসংখ্যার ৮০ ভাগেরই সহায়তা বা সুরক্ষা প্রয়োজন। ছয় বছর ধরে চলতে থাকা এই যুদ্ধে এখন পর্যন্ত এক লাখ ১০ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে বলে ধারণা করা হয়। ওই সংঘাত ইয়েমেনের লাখ লাখ নাগরিককে দুর্ভিক্ষের দিকে ঠেলে দিয়েছে। দুর্বল ইয়েমেন সরকার এবং হুতি বিদ্রোহীদের মধ্যে এই সংঘাতের শুরু ২০১৪ সালে।
এসডব্লিউ/এমএন/ এফএ/২২৩০
আপনার মতামত জানানঃ