ব্ল্যাকহোল হলো এমন এক জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক স্থান যেখানে মহাকর্ষ এত প্রবল যে আলো পর্যন্ত সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে না। সাধারণভাবে এটি এক অদৃশ্য মৃত্যুর ফাঁদ বলে মনে হলেও আধুনিক পদার্থবিদরা কল্পনা করেছেন, আমাদের মহাবিশ্ব নিজেই হয়তো একটি বিশাল ব্ল্যাকহোলের ভেতরে অবস্থান করছে। এই প্রশ্ন বিজ্ঞানীদের কৌতূহলকে জাগিয়ে তুলেছে—আমরা আসলে কোথায়?
পক্ষে যুক্তি হিসেবে দেখা যায়, মহাবিশ্বের জন্ম ও সম্প্রসারণের সঙ্গে ব্ল্যাকহোলের গঠন এবং ভেতরের অবস্থার বিস্ময়কর মিল রয়েছে। বিগ ব্যাংয়ের প্রাথমিক মুহূর্ত অনেকটা ব্ল্যাকহোলের সিঙ্গুলারিটির মতো—অসীম ঘনত্ব ও তীব্র শক্তির কেন্দ্র। তাছাড়া মহাবিশ্বে একটি সীমা রয়েছে, যাকে কসমিক হরাইজন বলা হয়, যার বাইরে আমরা কিছুই পর্যবেক্ষণ করতে পারি না। ব্ল্যাকহোলের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে, সেখানে ইভেন্ট হরাইজনের ভেতরের তথ্য বাইরের কাছে অজানা থেকে যায়। আবার মহাবিশ্বের ক্রমবর্ধমান সম্প্রসারণকে কিছু বিজ্ঞানী ব্ল্যাকহোলের ভেতরে স্থানকালের বিকৃত জ্যামিতির প্রতিফলন হিসেবে দেখেন। আইনস্টাইনের সাধারণ আপেক্ষিকতাও এই দুই কাঠামোর মধ্যে মৌলিক সাদৃশ্যের ইঙ্গিত দেয়।
তবে বিপক্ষে শক্ত যুক্তিও রয়েছে। একটি ব্ল্যাকহোলের ভেতরে পদার্থ ক্রমে সিঙ্গুলারিটিতে ধ্বসে পড়ে, কিন্তু আমাদের মহাবিশ্বে গ্যালাক্সি, নক্ষত্র, গ্রহ ও জীবন গঠিত হয়েছে এবং এটি সংকুচিত নয়, বরং ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে। ব্ল্যাকহোলের অভ্যন্তর অস্থিতিশীল ও চরম পরিবেশের জন্য পরিচিত, অথচ মহাবিশ্ব তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল এবং জীবনধারণের উপযোগী। এছাড়া আমাদের মহাবিশ্বে ডার্ক ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জির প্রভাব রয়েছে, যা ব্ল্যাকহোলের প্রচলিত মডেলের সঙ্গে সরাসরি মেলে না। সবচেয়ে বড় কথা, এখন পর্যন্ত কোনো প্রত্যক্ষ পর্যবেক্ষণগত প্রমাণ নেই যে আমরা ব্ল্যাকহোলের ভেতরে বাস করছি।
এখনকার বৈজ্ঞানিক অবস্থান হলো, এটি একটি কল্পনামূলক তত্ত্ব, তবে একেবারে অগ্রাহ্য করা যায় না। কারণ এটি মহাবিশ্বের প্রকৃতি বোঝার ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দেয়। ভবিষ্যতে কোয়ান্টাম গ্র্যাভিটি, ডার্ক এনার্জি ও মহাজাগতিক পর্যবেক্ষণের উন্নতি হয়তো আমাদের আরও স্পষ্ট ধারণা দেবে। আপাতত আমরা বলতে পারি, মহাবিশ্ব সম্ভবত ব্ল্যাকহোল নয়, বরং নিজস্ব স্বতন্ত্র কাঠামো। তবুও এই প্রশ্নটি বিজ্ঞানের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ এবং কল্পনার এক আকর্ষণীয় দ্বার।
আপনার মতামত জানানঃ