কক্সবাজারের ক্যাম্প থেকে স্থানান্তরের তৃতীয় ধাপে ১ হাজার ৭৭৮ জন রোহিঙ্গার একটি দল নোয়াখালীর ভাসানচরে পৌঁছেছে, উখিয়ার ক্যাম্প থেকে রওনা হয়েছে ১ হাজার ৭০০ জনের আরেকটি দল। তৃতীয় দফায় রোহিঙ্গাদের একটি দল আজ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টায় নোয়াখালীর ভাসানচরে পৌঁছোয়। চট্টগ্রাম বোট ক্লাব থেকে চারটি জাহাজে করে তাদের ভাসানচরে আনা হয়। সকাল ৯টার দিকে জাহাজগুলো ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হয়
এসব তথ্য নিশ্চিত করে অতিরিক্ত শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ সামছু-দৌজা জানান, ‘তৃতীয় দফায় (প্রথম অংশের) এক হাজার ৭৭৮ জন রোহিঙ্গা আজ শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) দুপুরে নোয়াখালীর ভাসানচরে পৌঁছেছেন। এছাড়া একই দিন ৩০টি বাসে করে আরও দেড় হাজার রোহিঙ্গা উখিয়া থেকে ভাসানচরের উদ্দেশে চট্টগ্রামে রওনা দিয়েছেন। তারা রাতে চট্টগ্রামে থাকবেন। শনিবার সকালে জাহাজে করে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা হবেন তারা।’
গতকাল ৩৮টি বাসে করে অন্তত ৩৫৩ পরিবারের ১ হাজার ৭৭৮ জনকে চট্টগ্রামে আনা হয়। এই ১ হাজার ৭৭৮ জনই আজ দুপুরে ভাসানচরে পৌঁছাল। আজ আরও ১ হাজার ৭০০ জনকে চট্টগ্রামে আনা হবে। সেখান থেকে তাদের নৌবাহিনীর জাহাজে করে নোয়াখালীর ভাসানচরে পাঠানো হবে।
চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল মো. মোজাম্মেল হক বলেন, “সকালে যে ১ হাজার ৭৭৮ জন রওনা হয়েছিল, তারা পৌঁছে গেছে। আজ কক্সবাজার থেকে রওনা হয়েছে আরও ১৭০০ জন। রাতে চট্টগ্রামে থেকে আগামীকাল তারা ভাসানচরে যাবে।”
জানা গেছে, উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ভাসানচরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে গত রাত থেকেই রোহিঙ্গারা সপরিবারে উখিয়া ডিগ্রি কলেজ মাঠে আসতে থাকেন। সকালের মধ্যে সেখানে হাজার খানেক রোহিঙ্গাকে দেখা গেছে। তারা শুক্রবার সকালে বাসে করে ভাসানচরের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, তাদের নাম নিবন্ধন চলছে। যাদের নিবন্ধন সম্পন্ন হচ্ছে তাদের মালপত্র ট্রাকে আর পরিবারের সদস্যদের বাসে উঠানো হচ্ছে। আজ প্রথমে ১৮টি এবং পরে ১২টি বাস তাদের নিয়ে রওনা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে, আজ সন্ধ্যা বা রাতের মধ্যে বাসে ওঠা নিবন্ধিত রোহিঙ্গারা চট্টগ্রামের বিএএফ শাহীন কলেজের ট্রানজিট ক্যাম্পে পৌঁছাবেন। সেখানে চূড়ান্ত প্রক্রিয়া শেষে নৌবাহিনীর ব্যবস্থাপনায় আগামীকাল শনিবার তাদের জাহাজে তোলা হবে। ৩০ জানুয়ারি তারা ভাসানচরে পৌঁছাবেন। এছাড়া শুক্রবার দুপুরে তৃতীয় ধাপের একটি অংশ (১৭৭৮ জন) রোহিঙ্গা ভাসানচরে পৌঁছেছেন। তাদের সেখানকার প্রক্রিয়া শেষে তাদের সেন্টার ঘরে তুলে দেওয়া হচ্ছে।
কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির ও তার বাইরে অবস্থান নিয়ে থাকা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে নিয়ে নানা সামাজিক সমস্যা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে দুই বছর আগে তাদের একটি অংশকে হাতিয়ার কাছে মেঘনা মোহনার দ্বীপ ভাসান চরে স্থানান্তরের পরিকল্পনা নেয় সরকার। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ২৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে মোটামুটি ১৩ হাজার একর আয়তনের ওই চরে ১২০টি গুচ্ছগ্রামের অবকাঠামো তৈরি করে এক লাখের বেশি মানুষের বসবাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। গত ৪ ডিসেম্বর প্রথম ধাপে এক হাজার ৬৪২ জন রোহিঙ্গা হাসিমুখে ভাসানচরে পৌঁছায়। দ্বিতীয় ধাপে গত ২৯ ডিসেম্বর এক হাজার ৮০৪ জনকে ভাসানচরে নেওয়া হয়। সর্বশেষ আজ (২৯ জানুয়ারি) সকালে এক হাজার ৭৭৮ রোহিঙ্গা নতুন করে ভাসানচরে পৌঁছান। এছাড়া অবৈধভাবে সাগরপথে মালয়েশিয়া যেতে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসা ৩০৬ জন রোহিঙ্গাকে গত মে মাসে ভাসানচরে নিয়ে যায় সরকার। তারাও সেখানে রয়েছেন।
মিয়ানমারে হত্যা ও নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয় ৮ লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে আসে আরও কয়েক লাখ। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১১ লাখ।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/২১৫৬
আপনার মতামত জানানঃ