সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ব্যবসায়ী ও স্বল্প শিক্ষিত প্রার্থীর আধিক্যের সংবাদ এখন পুরনো। এমনকি একাধিক চলমান মামলা কাঁধে নিয়েও অনেককে প্রার্থী হতে দেখা গেছে। এসব মামলায় মাদক পাচার এমনকি হত্যা মামলা পর্যন্তও রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করেন, প্রার্থীদের অনেকেই বিভিন্ন মামলার আসামি। এবার জানা গেলো খুনের মামলায় আট বছর ধরে কারাগারে থাকা আসামিও কাউন্সিলর পদে লড়ছেন। তিনি সাবেক কাউন্সিলর মীর এনাম আলী বাচ্চু। রাজবাড়ী পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের আসন্ন নির্বাচনে তিনি কাউন্সিলর পদে উটপাখি প্রতীক নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন।
সমকাল সূত্রে জানা যায়, ২০১২ সালের ২৩ আগস্ট দিবাগত রাতে রাজবাড়ী শহরের বিনোদপুর এলাকায় রাজবাড়ী জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি সামসুল আলম বাবলুকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার পর থেকেই পলাতক ছিলেন মীর এনাম আলী বাচ্চু। হত্যাকাণ্ডের ঘটনার দুদিন পর ২৫ সেপ্টেম্বর নিহতের সহোদর ভাই শহীদুল ইসলাম বাদী হয়ে মীর এনাম আলী বাচ্চুসহ সাতজনের বিরুদ্ধে রাজবাড়ী সদর থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। পরে পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে বাচ্চু আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তার বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশীটও দিয়েছেন। মামলাটি বর্তমানে রায়ের অপক্ষোয় রয়েছে। এই মামলা ছাড়াও বাচ্চুর বিরুদ্ধে একটি অস্ত্র মামলা, দ্রুত বিচার আইনসহ আরও তিনটি মামলা রয়েছে বলে তার নির্বাচনী হলফনামায় উল্লেখ রয়েছে।
এদিকে ২০১৬ সালের পৌর নির্বাচনে তিনি কারাগারে থেকে কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন জমা দেন। তখন যাচাই বাছাইয়ে তার মনোনয়ন বাতিল হয়। তবে এবার মনোনয়নপত্র জমা দানের শেষ দিন গত ১৭ জানুয়ারি মীর এনাম আলীর পক্ষে মনোনয়ন পত্র জমা দেন তার কয়েক সমর্থক। যাচাই বাছাইয়ে তার মনোনয়ন বৈধ বলে ঘোষণা করেন রিটার্নিং অফিসার।
রাজবাড়ী পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার ও রাজবাড়ীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) সারোয়ার আহমেদ সালেহীন জানান, কোনো দণ্ডিত আসামি নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না। মীর এনাম আলী বাচ্চু কারাগারে থাকলেও এখনও দণ্ডিত হননি। সে কারণে তার নির্বাচনে অংশ নিতে বাধা নেই। তবে ২০১৬ সালের নির্বাচনে বাচ্চুর মনোনয়ন কেন বাতিল হয়েছিল তা তার জানা নেই বলে জানান সারোয়ার আহমেদ।
সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, রাজনীতি এখন পুরোপুরি ব্যবসায় পরিণত হচ্ছে। ধনাঢ্য হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে দিচ্ছে রাজনীতি। ফলে প্রার্থী হবার দৌড়ে খুনের মামলার আসামি থেকে শুরু করে কয়েদিরাও আছেন। তারা মনে করেন, এতে দেশের লোকজন পরিষ্কার ইমেজের জনপ্রতিনিধি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। হলফনামার তথ্যের সঠিকতার গ্রহণযোগ্যতা করা না হলে এসব তথ্য নেওয়ার কোনো অর্থ নেই বলে মনে করেন তারা। একইসাথে নির্বাচনের বিধি নিষেধেরও কোনো জরুরি মনে করেন না তারা, যেখানে হত্যা মামলার আসামিরা কারাগারে বসেও নির্বাচনে লড়ে থাকেন।
এসডব্লিউ/ডিএস/কেএইচ/২০৩৫
আপনার মতামত জানানঃ