ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ চলাকালীন সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল সোফিয়া কুরেশিকে নিয়ে একটি মন্তব্য করার কারণে দিল্লির যে অধ্যাপককে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ, তাকে বুধবার সুপ্রিম কোর্ট অন্তর্বর্তীকালীন জামিন দিয়েছে।
ভারতের নামকরা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় – অশোকা ইউনিভার্সিটির রাজনীতি বিজ্ঞানের ওই অধ্যাপকের নাম আলি খান মাহমুদাবাদ।
সংঘর্ষের মধ্যেই আটই মে এক পোস্টে অধ্যাপক আলি খান লেখেন, “কর্নেল সোফিয়া কুরেশির প্রশংসা করছেন অনেক দক্ষিণপন্থি ভাষ্যকার, এটা দেখে আমি খুশি। তবে এরা যদি একইভাবে গণপিটুনি, নির্বিচারে বুলডোজার চালানো এবং বিজেপির ঘৃণা ছড়ানোর শিকার হওয়া মানুষদের হয়েও আওয়াজ তুলতেন যাতে এই মানুষগুলো ভারতের নাগরিক হিসেবে নিরাপত্তা পায়।”
সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করা এই মন্তব্যের কিছু শব্দ বিচার-বিবেচনা করে দেখার জন্য সিনিয়র পুলিশ কর্মকর্তাদের দিয়ে একটি বিশেষ তদন্ত দল গঠন করার কথাও বলেছে সুপ্রিম কোর্ট।
তবে অধ্যাপক আলি খান একা নন, পহেলগামের হত্যাকাণ্ড এবং তারপরে পাকিস্তানের সঙ্গে সংঘর্ষের আবহাওয়ায় একশোরও বেশি মানুষকে ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে পাকিস্তানের সমর্থনে সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করার কারণে।
অনেক রাজ্য থেকেই গ্রেফতারির খবর পাওয়া গেলেও সব থেকে বেশি মানুষ গ্রেফতার হয়েছেন আসাম আর উত্তর প্রদেশে। আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানিয়েছেন যে তার রাজ্যে এখন পর্যন্ত ৭৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আর উত্তর প্রদেশে গ্রেফতার হয়েছেন অন্তত ৩০ জন।
আসামে যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের মধ্যে রয়েছেন এআইইউডিএফের এক বিধায়ক আমিনুল ইসলামও। গত ২৩ এপ্রিল পহেলগাম হামলা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করার অভিযোগ ওঠে আমিনুল ইসলামের বিরুদ্ধে। পরের দিন অসমের নগাঁও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
পরে নগাঁওয়ের জেলা আদালত মি. ইসলাম জামিন পেলেও সঙ্গে সঙ্গেই আবার তাকে জাতীয় নিরাপত্তা আইনে আটক করা হয়।
আবার উত্তরপ্রদেশ থেকে বিবিসি-র দুই প্রতিনিধি সৈয়দ মজিজ ইমাম এবং শাহবাজ আনোয়ারের পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, সে রাজ্যে যে ৩০ জন গ্রেফতার হয়েছেন, তাদের ১৮টি জেলা থেকে ধরা হয়েছে।
ধৃতদের মধ্যে আছেন বরেলি জেলার বাসিন্দা মুহম্মদ সাজিদ। পুলিশের ভাষ্য মতে তিনি একটি পোস্টে ‘পাকিস্তান জিন্দাবাদ’ লিখেছিলেন।
পশ্চিম উত্তর প্রদেশের মেরঠের এক সেলুন মালিক ও তার সহযোগীর বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয় সাতই মে। তারা সামাজিক মাধ্যমে ‘পাকিস্তানের সমর্থনে’ পোস্ট করেছিলেন।
মুজফ্ফরনগর জেলার পুলিশ আনোয়ার জামিল নামে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে একই অভিযোগে এফআইআর দায়ের করে। একটি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর মি. জামিলের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয় বলে পুলিশ জানিয়েছে।
শ্রীনগর থেকে বিবিসি-র সংবাদদাতা মাজিদ জাহাঙ্গীর বলছেন যে সামাজিক মাধ্যমে ভারতের বিরুদ্ধে ‘অসন্তোষ’ এবং ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী চিন্তাভাবনা’ ছড়ানোর অভিযোগে সেখানকার পুলিশ হিলাল মীর নামে এক সাংবাদিককে গ্রেফতার করেছে।
জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের সন্ত্রাস দমন শাখা এক বিবৃতিতে বলেছে যে “কাশ্মীরিরা ব্যবস্থার দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন – এই কথা বলে যুব-সমাজের ভাবনাকে উসকে দিতে এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী চিন্তা তাদের মাথায় ঢোকাতে” যে পোস্ট করেছিলেন মি. মীর, সেজন্যই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মি. মীর তুরস্কের আনাদোলু নিউজ এজেন্সির হয়ে কাজ করতেন। তবে তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিবিসিকে বলেছেন, পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়েছে।
শ্রীনগরের আরেক সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, তার সামাজিক মাধ্যমের টাইমলাইনের একটা পোস্ট সরিয়ে ফেলতে এক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা তাকে ফোন করেছিলেন। তিনি ওই পোস্টটি ডিলিট করে দেন।
শ্রীনগর থেকে বিবিসি-র সংবাদদাতা মাজিদ জাহাঙ্গীর বলছেন যে সামাজিক মাধ্যমে ভারতের বিরুদ্ধে ‘অসন্তোষ’ এবং ‘বিচ্ছিন্নতাবাদী চিন্তাভাবনা’ ছড়ানোর অভিযোগে সেখানকার পুলিশ হিলাল মীর নামে এক সাংবাদিককে গ্রেফতার করেছে।
জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের সন্ত্রাস দমন শাখা এক বিবৃতিতে বলেছে যে “কাশ্মীরিরা ব্যবস্থার দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন – এই কথা বলে যুব-সমাজের ভাবনাকে উসকে দিতে এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী চিন্তা তাদের মাথায় ঢোকাতে” যে পোস্ট করেছিলেন মি. মীর, সেজন্যই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মি. মীর তুরস্কের আনাদোলু নিউজ এজেন্সির হয়ে কাজ করতেন। তবে তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু বিবিসিকে বলেছেন, পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়েছে।
শ্রীনগরের আরেক সাংবাদিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, তার সামাজিক মাধ্যমের টাইমলাইনের একটা পোস্ট সরিয়ে ফেলতে এক শীর্ষ পুলিশ কর্মকর্তা তাকে ফোন করেছিলেন। তিনি ওই পোস্টটি ডিলিট করে দেন।
দক্ষিণ ভারতের রাজ্য কর্ণাটকের একটি ঘটনা সামনে এসেছে, যেখানে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগ এনেছিল ভুয়া খবর পোস্ট করার।
ওই পোস্টে লেখা হয়েছিল যে বেলগাভি জেলায় কর্নেল সোফিয়া কুরেশির শ্বশুর বাড়িতে আরএসএসের কর্মীরা হামলা চালিয়ে আগুন লাগিয়ে দিয়েছে।
ওই ভুয়া পোস্টদাতা এবং সেটিতে সমর্থন দেওয়া দুজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে পুলিশ। তবে পরে জানা যায় যে ওই ভুয়া পোস্ট যিনি দিয়েছিলেন, তিনি আসলে কানাডার বাসিন্দা।
আবার এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ, যিনি পহেলগাম হামলার সঙ্গে বিহার রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের যোগসূত্র রয়েছে বলে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন। আদালতে হাজির করা হলে তাকে দুই লাখ টাকার জামিনে ছেড়ে দেওয়া হয়- কারণ তিনি মানসিকভাবে অসুস্থ।
উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মেঘালয়ের বাসিন্দা দুই অপ্রাপ্তবয়স্ককে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে তারা সামাজিক মাধ্যমে ‘পাকিস্তানের সমর্থনে’ পোস্ট করেছিলেন।
পুলিশ বলেছে যে ফেসবুকের একটি ভিডিও পোস্টে তাদের গারো ভাষায় ভারত-বিরোধী স্লোগান ও পাকিস্তানপন্থি স্লোগান দিতে দেখা গেছে। এর আগে, পহেলগামের হামলার পরপরই ফেসবুক পেজে ঘৃণা ছড়ানোর অভিযোগে মেঘালয়ে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ।
আপনার মতামত জানানঃ