মিশরের ফাইয়ুম অববাহিকায় বিজ্ঞানীরা ৩০ মিলিয়ন (৩ কোটি) বছর আগের এক নতুন শিকারি প্রাণীর প্রায় সম্পূর্ণ একটি খুলি আবিষ্কার করেছেন। ‘বাস্টেটোডন সিরটোস’ নামের এই বিলুপ্ত মাংসাশী প্রাণীর জীবাশ্ম আবিষ্কার পূর্বে প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। এই খুলি আফ্রিকার প্রাচীন শিকারি প্রাণীদের বিবর্তন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে তাদের বিলুপ্তির বিষয়টি আরও স্পষ্ট করছে। এটা আধুনিক শিকারি প্রাণীদের আবির্ভাবের আগেই ঘটেছিল।
আবিষ্কৃত খুলির ধারালো দাঁত ও শক্তিশালী চোয়ালের গঠন থেকে বোঝা যায়, বাস্টেটোডন ছিল অত্যন্ত শক্তিশালী কামড়ের অধিকারী একটি ভয়ংকর স্তন্যপায়ী প্রাণী। আকারে এটি চিতাবাঘের সমান ছিল এবং সে সময়কার খাদ্যশৃঙ্খলের শীর্ষে অবস্থান করত। এটি এমন এক সময়ের শিকারি, যখন আমাদের আদিম বাঁদর-সদৃশ পূর্বপুরুষদের বিবর্তন চলছিল।
প্রখ্যাত ‘জার্নাল অব ভার্টিব্রেট প্যালিওনটোলজি’-তে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে বিজ্ঞানীরা উল্লেখ করেছেন, এই ভয়ংকর প্রাণী সম্ভবত প্রাচীন বনাঞ্চলে বসবাস করত, যেখানে তারা বাঁদরজাতীয় প্রাণী, প্রাচীন জলহস্তী, হাতির পূর্বপুরুষ এবং হাইরাক্স নামের ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণীদের শিকার করত। বর্তমানে ফাইয়ুম অঞ্চলটি মরুভূমিতে পরিণত হলেও, একসময় এটি ছিল সবুজে ঘেরা অরণ্য।
এই আবিষ্কারের নেতৃত্বে থাকা মানসুরা বিশ্ববিদ্যালয় ও আমেরিকান ইউনিভার্সিটি ইন কায়রোর জীবাশ্মবিজ্ঞানী শোরুক আল-আশকার জানান, ‘টানা কয়েকদিন ধরে আমরা ৩০ মিলিয়ন বছরের পুরনো শিলার স্তরগুলো পরীক্ষা করছিলাম। ঠিক যখন কাজ শেষ করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, দলের একজন সদস্য আকস্মিকভাবে মাটির নিচে বিশাল আকৃতির দাঁত বেরিয়ে থাকতে দেখেন। তার উত্তেজিত চিৎকারে পুরো দল একত্রিত হয়।
এটি আমাদের জন্য এক অভূতপূর্ব আবিষ্কারের সূচনা—একটি প্রায় সম্পূর্ণ মাথার খুলি, যা যে কোনো কশেরুকী জীবাশ্মবিদের স্বপ্নের মতো। ’
বাস্টেটোডন ‘হায়েনোডন্টস’ নামে পরিচিত এক বিলুপ্ত মাংসাশী স্তন্যপায়ী গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত। এই হায়েনোডন্টরা আধুনিক বিড়াল, কুকুর বা হায়েনার উদ্ভবের আগেই আফ্রিকার বাস্তুতন্ত্রে শীর্ষ শিকারি হিসেবে রাজত্ব করত। তারা ডাইনোসরদের বিলুপ্তির পর আফ্রিকায় শিকারি হিসেবে টিকে ছিল।
এই নতুন আবিষ্কার শুধুমাত্র বাস্টেটোডনের শারীরিক গঠনকেই ব্যাখ্যা করছে না, বরং এও বোঝাচ্ছে, জলবায়ুর পরিবর্তন কীভাবে এক সময়ের ভয়ংকর শিকারিদের বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দিয়েছে এবং আধুনিক শিকারি প্রাণীদের পথ তৈরি করেছে।
আপনার মতামত জানানঃ