সম্প্রতি মঙ্গলের পৃষ্ঠে বরফমুক্ত প্রাচীন পুকুর ও হ্রদের প্রমাণ মিলেছে। নদীতে ঢেউ হলে নদীর তলদেশে যেমন ছোট ছোট ভাঁজ দেখা যায়, সেরকম ভাঁজের ছবি তুলেছে কিউরিসিটি। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার রোভার কিউরিসিটি মঙ্গলগ্রহে অনুসন্ধান চালাচ্ছে ২০১২ সাল থেকে। ছবিগুলো বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, মঙ্গলে এই তরঙ্গগুলো সৃষ্টি হইয়েছিল প্রায় ৩৭০ কোটি বছর আগে।
সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজির (ক্যালটেক) ভূতত্ত্বের তিন অধ্যাপক জন গ্রোটজিঙ্গার, হ্যারল্ড ব্রাউন এবং মাইকেল ল্যাম্ব এ বিষয়ে তাঁদের গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করেছেন সায়েন্স অ্যাডভান্স জার্নালে।
তাঁরা মঙ্গল গ্রহের পৃষ্ঠে অতীতের ঢেউয়ের প্রমাণ পেয়েছেন। ঢেউগুলো খুব বেশি বড় নয়। পৃথিবীর সৈকত ও হ্রদে এমন ঢেউ দেখা যায় অহরহ। বিজ্ঞানীরা এ বিষয়টা বেশি উত্তেজিত কারণ এতদিন মনে করা হতো, মঙ্গলে পানি ছিল বরফ আকারে। কিন্তু এই ছবি সে কথা বলে না। পানি বরফ আকারে থাকলে এমন ঢেউয়ের প্রমাণ থাকার কথা নয়। যেহেতু ঢেউ ছিল, তার মানে অবশ্যই মঙ্গলে তরল পানি ছিল। এখন পর্যন্ত মঙ্গলে পানি পাওয়ার যতগুলো প্রমাণ পাওয়া গেছে, সেসবের মধ্যে এই প্রমাণ সবচেয়ে শক্তিশালী।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, মঙ্গলের বায়ুমণ্ডল ও জলবায়ু বর্তমান সময়ের চেয়ে অনেক বেশি উষ্ণ ও ঘন ছিল। কিন্তু কতটা পানি ছিল সেখানে? এ প্রশ্ন জানতে হলে প্রথমে খুঁজে দেখতে হবে হ্রদটা কত বড় ছিল। সে কাজটাও করেছেন বিজ্ঞানীত্রয়। তাঁরা কম্পিউটার সিমুলেশনের মাধ্যমে ঢেউয়ের আকার ও বিস্তার হিসাব করে বের করেছেন, হ্রদটি ২ মিটারেরও কম গভীর ছিল। তবে ঢেউগুলো কতটা স্বাভাবিক ছিল এবং হ্রদে কী পরিমাণ পানি ছিল অতীতে, তা জানতে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
সৌরজগতের ৮টি গ্রহের মধ্যে দ্বিতীয় ক্ষুদ্রতম গ্রহ মঙ্গল। সূর্যের থেকে চতুর্থ গ্রহ। মঙ্গলের পৃষ্ঠে প্রচুর আয়রন অক্সাইড থাকার কারণে মাটি লাল দেখায়। মঙ্গলে উপত্যকা, আগ্নেয়গিরি এমনকি শুকিয়ে যাওয়া নদীর প্রমাণও পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। তবে পৃথিবীর মতো মঙ্গলে গিয়ে বুক ভরে শ্বাস নেওয়া সম্ভব নয়, কারণ গ্রহটিতে অক্সিজেন নেই বললেই চলে।
অনেক দিন ধরেই পৃথিবীবাসীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মঙ্গল গ্রহ। কারণ বিজ্ঞানীদের ধারণা, ভবিষ্যতে মানুষ মঙ্গলে বসবাস করতে পারবে। সে উদ্দেশ্যে ২০১১ সালে নাসা মঙ্গলের উদ্দেশ্যে পাঠায় কিউরিসিটি রোভার। রোভারটি ২০১২ সালের আগস্টে মঙ্গলে পৌঁছায় এবং তখন থেকে ঘুরে বেড়াচ্ছে গ্রহটির চারপাশে।
কিউরিসিটির মূল উদ্দেশ্য মঙ্গল গ্রহের জলবায়ু ও ভূতত্ত্ব নিয়ে অনুসন্ধান করা। পাশাপাশি অতীতে কখনো মঙ্গলে প্রাণ ছিল কি না, তাও খুঁজে দেখবে রোভারটি। এসব পরীক্ষার জন্য কিউরিসিটিতে প্রয়োজনীয় সব যন্ত্রপাতি সেট করা আছে। যেমন ছবি তোলার জন্য ক্যামেরা, মাটি ড্রিল করে পরীক্ষার জন্য নানা সরঞ্জাম ইত্যাদি।
আপনার মতামত জানানঃ