সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি : বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকী উপলক্ষে ঘোষিত মুজিব বর্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার হিসেবে আধা পাকা ঘর এবং জমি পাচ্ছেন বছরের পর বছর ঘর না থাকার কষ্টের জীবন শেষ হতে যাওয়া ভূমি ও গৃহহীন মানুষ। এটিই বিশ্বে গৃহহীন মানুষকে বিনামূল্যে ঘর করে দেওয়ার সবচেয়ে বড় কর্মসূচি আর সেই কর্মসুচি আর ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে স্বপ্ন ছোঁয়ার অপেক্ষায় আছে সুনামগঞ্জের তিন হাজার ৯০৮ ভূমি ও গৃহহীন পরিবার। প্রথম ধাপে স্বপ্নছুঁতে যাচ্ছেন ৪০৭টি পরিবার, পাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহার ঘর। দ্বিতীয় ধাপে বাকি ঘরেরও নির্মাণ কাজ চলছে দ্রুতগতিতে।
২৩ জানুয়ারি শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় উপকারভোগী পরিবারের নিকট আনুষ্ঠানিক ভাবে গৃহ হস্তান্তর কার্যক্রমের উদ্বোধন করছেন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিরা উপকারভোগীদের ঘর বুঝিয়ে দেবেন।
এই ঘর নির্মাণেও অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে বলে জানান জেলা ও উপজেলার সচেতন মহল। তারা জানান, কিছু সংখ্যাক দালাল ও সুবিধাবাদী লোক যারা বিভিন্ন মহলে চিহ্নিত তারা ভূমি ও গৃহহীন পরিবারের লোকজনের কাছ থেকে কৌশলে অর্থ আদায় করেছে আর ঘর নির্মাণেও অনিয়ম করেছে, কিন্তু কেউ এই বিষয়ে সরাসরি কথা বলতে চায় না। বললে ঘর পাবে না আর নির্মাণের অনিয়মের কথা বললে পড়তে হবে মামলা হামলাসহ বিভিন্ন ঝামেলায়। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে গুরুত্ব সহকারে সঠিক তদারকি করার দাবী জানানো হয়।
মুজিববর্ষে দেশে ভূমিহীন ও গৃহহীন অসহায় মানুষদের মধ্যে যাদের ভূমি নেই তাদের সরকারের খাস জমি থেকে ২ শতাংশ ভিটে এবং ঘর দিচ্ছে সরকার। যাদের ভিটে আছে ঘর নাই তাদের ঘর দিচ্ছে সরকার।
প্রতিটি ঘর নির্মাণে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। আর প্রতিটিতে পরিবহন ব্যয় হিসেবে দেয়া হয়েছে আরও ৪ হাজার টাকা। ঘরগুলো ইতোমধ্যেই প্রস্তুত হয়ে উঠছে। দ্রুতগতিতে কাজ চলছে। ২৩ জানুয়ারি প্রথম ধাপে ৪০৭টি ঘর হস্তান্তরের জন্য প্রস্তুত। প্রস্তুত করা হচ্ছে সুবিধাভোগীদের কাগজপত্রও। প্রতিটি ঘর দুই কক্ষ বিশিষ্ট। এতে দুটি রুম ছাড়াও সামনে একটি বারান্দা, একটি টয়লেট, একটি রান্নাঘর এবং একটি খোলা জায়গা থাকবে।
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান করুণ সিন্ধু চৌধুরী বাবুল বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো- ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্ন অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন, ঋণপ্রদান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহে সক্ষম করে তোলা এবং আয় বাড়ে এমন কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ। এর মধ্য দিয়ে পৃথিবীতে নতুন ইতিহাস গড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ। গৃহহীন-ভূমিহীনদের ঘর করে দেওয়ার এত বড় কর্মসূচি পৃথিবীতে আর একটিও নেই যা প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার দুরদর্শি চিন্তা ও জ্ঞানের প্রমান।
সহকারি কমিশনার মোঃ রিফাতুল হক সুনামগঞ্জে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের ঘর প্রদান কার্যক্রম সম্পর্কে জানান, সুনামগঞ্জে গৃহহীন ও ভূমিহীন ‘ক’ শ্রেনীর পরিবারের সংখ্যা ১১ হাজার ২৫৪টি। যার মধ্যে ২০২০-২১ অর্থ বছরে মোট তিন হাজার ৯০৮টি ঘর নির্মাণ করা হবে। এখন পর্যন্ত জেলার তাহিরপুর উপজেলায় ২৫টি, জগন্নাথপুর উপজেলায় ২৩টি, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় ৩০টি, সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ৫০টি, ধর্মপাশা উপজেলায় ৩৪টি, দিরাই উপজেলায় ৪০টি, শাল্লা উপজেলায় ১৬০টি, ছাতক উপজেলায় ১০টি, দোয়ারাবাজার উপজেলায় ১০টি, জামালগঞ্জ উপজেলায় ২৫টি ঘরের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ঘর নির্মাণে যদি কেউ কোনো রকমের টাকা দাবি করে বা ঘর নির্মাণে শ্রমিকদের মজুরি বা মালামাল খরচ চায় তাহলে বিষয়টি আমাকে জানাবেন।এছাড়া ঘরগুলো সঠিক ব্যক্তি পাচ্ছে কি না সে বিষয়ে আমাদের নজর রাখতে হবে। ঘর নির্মাণ ও প্রদানে কোন রকমের দুর্নীতি বা অনিময় অথবা টাকা দাবি করলে আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নেবো।
তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার ১৫১টি ঘর নির্মাণ করার কথা থাকলেও বিজ্ঞ আদালতের স্থগিতাদেশের জন্য এ নির্মাণ কাজ বন্ধ রয়েছে। ২০২০-২১ অর্থ বছরে সুনামগঞ্জে মোট তিন হাজার ৯০৮টি ঘর তৈরি করা হবে। আমরা আশাকরি আগামী মার্চ মাসের মধ্যেই ঘরগুলোর নির্মাণ কাজ শেষ করতে পারবো।
এসডব্লিউ/জেএভি/নসদ/০১৫০
আপনার মতামত জানানঃ