এতোদিন রাজনৈতিক মুরুব্বী ভারত যা বলেছে হাসিনা সেটাই মেনে নিয়েছে। ফলে ফারাক্কায় পানি চুক্তি করেও পদ্মায় পানি দেয়নি। তিস্তা পানি দেয়ার চুক্তি এক যুগ থেকে ঝুলিয়ে রেখে ফেনি নদীর পানি তুলে নিচ্ছে। ভারতের দাদাগিরির প্রতিবাদ বাংলাদেশের মানুষ করলেও ফ্যাসিন্ট হাসিনা ঢাকার বদলে দিল্লির স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দেয়ায় বছরের পর বছর ধরে পানি নিয়ে অবিচারের শিকার হয়েছে বাংলাদেশ।
কিন্তু এখন সেই ভারতকে উচিত শিক্ষা দিচ্ছে চীন। যমুনা ও ব্রহ্মপুত্রের উৎপত্তিস্থলের কাছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পানিবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে চীন। তিব্বত মালভূমির পূর্ব প্রান্তে এই বাঁধ নির্মাণ করা হবে ইয়ারলুং জ্যাংবো নদীর ওপর। এ নদী ভারতের অরুণাচল, আসাম হয়ে বাংলাদেশে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নাম পেয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
তিব্বত মালভূমির পূর্ব প্রান্তে এই বাঁধ নির্মাণ করা হলে ব্রহ্মপুত্র নদ ও যমুনা নদীর পানিপ্রবাহ নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের যথেষ্ট উদ্বেগ আছে। কারণ এই প্রকল্পটি শুধু স্থানীয় বাস্তুতন্ত্রই নয়, বরং নদীর প্রবাহপথ পরিবর্তন করে করতে পারে। এতে করে বাংলাদেশ যেমন পদ্মা-তিস্তায় পানি থেকে বঞ্ছিত হচ্ছে; তেমনি ভারতও ব্রহ্মপুত্র ও যমুনায় পানি সংকটে পড়বে। তিব্বত মালভূমির কাছাকাছি এ বাঁধের ভৌগোলিক ও পরিবেশগত প্রভাব পড়বে ভারত ও বাংলাদেশের ওপর।
চীনের পাওয়ার কনস্ট্রাকশন কর্পের ২০২০ সালের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক ট্রিলিয়ন ইউয়ান বা ১৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে নির্মিতব্য এ বাঁধ বছরে ৩০০ বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে।
বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাঁধও চীনে অবস্থিত। মধ্য চীনের থ্রি গর্গেস বাঁধের উৎপাদন ক্ষমতা ৮৮ দশমিক দুই বিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টা। তিব্বতে নির্মিতব্য বাঁধটি এর তিন গুণেরও বেশি বিদ্যুৎ উৎপাদন করবে।
চীনা বার্তা সংস্থা সিনহুয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই প্রকল্প চীনের কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। বিশাল এই প্রকল্প দেশের প্রকৌশল খাতসহ সংশ্লিষ্ট শিল্পগুলোকে উদ্দীপ্ত করবে, পাশাপাশি তিব্বতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
তিব্বতের এক জায়গায় ইয়ারলুং জ্যাংবো মাত্র ৫০ কিলোমিটারের ব্যবধানে দুই হাজার মিটার নিচে নেমে আসে। যে কারণে এটি জলবিদ্যুৎ বাঁধের জন্য উৎকৃষ্ট স্থান হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।
থ্রি গর্গেস বাঁধ নির্মাণের আগে ১৪ লাখ মানুষকে পুনর্বাসন করতে হয়েছিল চীনের। তিব্বতের এই প্রকল্পে কতজন বাস্তুচ্যুত হবে এবং স্থানীয় পরিবেশের ওপর এর প্রভাব কেমন পড়বে, তা এখনো স্পষ্ট করেনি চীনা কর্তৃপক্ষ। ইয়ারলুং জ্যাংবো নদীর উজানে ইতোমধ্যে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু করেছে চীন। এই নদীকে ঘিরে আরো প্রকল্পের পরিকল্পনা করছে দেশটির সরকার।
আপনার মতামত জানানঃ