সরকার অনুমোদিত অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান সাতক্ষীরা মার্চেন্ট কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড-এর বাবা মামুনুর রশিদ এমডি আর ছেলে আহসানুর রশিদ চেয়ারম্যান। দুজনে মিলে প্রতিষ্ঠানটির ১১ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ প্রতিষ্ঠানের আমানতের বেশির ভাগ টাকাই আত্মীয়স্বজনসহ নিজেরাই ঋণ নিয়ে মূলধন শূন্য করে ফেলেছেন বলে অভিযোগ। ফলে আমানতকারীদের মাসিক মুনাফা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ধীরে ধীরে সোসাইটির থলের বিড়াল বেরিয়ে আসে। মুনাফার টাকা আজকাল করতে করতে মাসের পর মাস হয়রানির শিকার হচ্ছেন আমানতকারীরা। যদিও সোসাইটির কর্মকর্তারা বলছেন, করোনার কারণে লেনদেনে সমস্যা দেখা দিয়েছে। যা দ্রুতই সমাধান হয়ে যাবে।
জানা যায়, ২০০৩ সালে সরকার অনুমোদিত অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান সাতক্ষীরা মার্চেন্ট কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড যাত্রা শুরু করে। যার এমডি মামুনুর রশিদ ও চেয়ারম্যান পুত্র আহসানুর রশিদসহ আত্মীয়-স্বজনদের নিয়ে ৬ সদস্যের পরিচালনা কমিটি গঠন করা হয়। ১৮ থেকে ২০ শতাংশ মুনাফা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে সাধারণ মানুষকে আকৃষ্ট করা হয়। অধিক মুনাফা পেতে ধীরে ধীরে আমানতকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। আর আমানতের টাকা হিসেবে সোসাইটির মূলধন দাঁড়ায় ১১ কোটি টাকা। বেশ কয়েক বছর ঠিকভাবে মুনাফা দিয়ে আসছিল কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু হঠাৎ করে মাসিক মুনাফা বন্ধ করে দেয় প্রতিষ্ঠানটি। এতে ভোগান্তিতে পড়েন আমানতকারীরা। অনেকে অসুস্থ স্বজনদের চিকিৎসা করাতে পারছেন না। অপরদিকে প্রতিষ্ঠানটির এমডি ও চেয়ারম্যান ঢাকা ও খুলনায় বাড়ি গাড়ি করে বিলাসবহুল জীবনযাপন করছেন। আমানতকারীরা মুনাফাসহ মূলধন ফিরে পেতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
আমানতকারীরা জানিয়েছেন, সোসাইটির মোট টাকার মধ্যে সোসাইটির এমডি মামুনুর রশিদের কাছে দুই কোটি ৩০ লাখ ও তার চেলে চেয়ারম্যান আহসানুর রশিদের কাছে এক কোটি ২৫ লাখসহ চেয়ারম্যানের ভাই মেহেবুবার রহমানের কাছে ৭০ লাখ, বোন তানিয়ার কাছে ৫০ লাখ, মাতা হোসনেয়ারা বেগমের কাছে ৫ লাখ ও শাশুড়ির কাছে ১৯ লাখ টাকা রয়েছে।
নিজেরা ঋণ নেওয়ার কথা স্বীকার করেই প্রতিষ্ঠানটির এমডি জানান, আমাদের লোন পরিশোধ করা হচ্ছে।
এক কোটি ২০ লাখ টাকা ঋণ নিয়ে বর্তমানে সুদ আসলে অনেক টাকা হয়েছে উল্লেখ করে এমডি মামুনুর রশিদ বলেন, করোনার কারণে লেনদেনে সমস্যা হচ্ছে।
সাতক্ষীরা মার্চেন্ট কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডে মধ্যবিত্ত ও বেসরকারি কলেজ শিক্ষকসহ ৭০০ আমানতকারী তাদের শেষ সম্বল আমানতের টাকা ফেরত পেতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
সমবায় সমিতি বা কো-অপারেটিভ সোসাইটিতে আমানতকারীরা যাতে টাকা জমা না রাখেন সে বিষয়ে জনসচেতনতা বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ লক্ষ্যে গণমাধ্যমে প্রচার চালানো হবে, যারা বেআইনি ব্যাংক ব্যবসা করছে তাদের বিরুদ্ধ ব্যবস্থা নেওয়া হবে স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে, যেসব প্রতিষ্ঠান সমবায় সমিতির থেকে নিবন্ধন নিয়ে বেআইনি ব্যাংক ব্যবসা করছে সেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কিন্তু অনেক কো-অপারেটিভ প্রতিষ্ঠান তাদের নামের শেষে ব্যাংক শব্দটি ব্যবহার করছে। ওইসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
জানা গেছে, কুমিল্লায় বেশকিছু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের টাকা দিতে পারছে না। এর মধ্যে সম্প্রতি দুটি প্রতিষ্ঠানকে কুমিল্লাহ সমবায় অফিসে তলব করে গ্রাহকদের সঙ্গে সমঝোতা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুটি সমিতির নতুন কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটি সমিতির সম্পদ বিক্রি করে আমানতকারীদের টাকা পরিশোধের উদ্যোগ নিয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তিদের কর্তৃক বিভিন্ন কৌশলে প্রতিষ্ঠানের অর্থ বগলদাবা করার রীতি বাজারে এখন চাউর আছে। ব্যাংক প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ সরিয়ে নিজেরা লাভবান হলেও প্রতারিত হচ্ছেন সাধারণ লোকজন। আইনের ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে তারা কীভাবে অর্থ আত্মসাৎ করে রাষ্ট্রের রাঘব-বোয়াল বলে যান, তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। আইনের যথাযথ ব্যবস্থা নেই বলে তারা এমন করার সুযোগ এবং সাহস অর্জন করেন বলে করেন সংশ্লিষ্টরা। ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকের সব পরিচালক, ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও তার নিম্নতর দুই পদের কর্মকর্তাদের আয় ও সম্পদের তথ্য নিজ নিজ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের কাছে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে। তারা যদি পারিবারিক সূত্রে সম্পদ বা ব্যবসায়ের অংশীদার হন, সে তথ্যও জমা দিতে হবে। সম্প্রতি একাধিক ব্যাংকের পরিচালক ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য বেরিয়ে আসায় বাংলাদেশ ব্যাংক এই প্রথম এ বিষয়ে নির্দেশনা দিল। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ব্যাংক সহ প্রতিটা প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্ত সকলের হিসাব ব্যাংকসহ সকলের দৃষ্টির গোচরে থাকা উচিত যেমন, তেমনি বিদেশে অর্থ পাচার বিষয়ে নজর রাখা উচিত।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৩১২
আপনার মতামত জানানঃ