প্রাথমিক কৃষি বিকাশের মাধ্যমে প্রাচীন ইউরোপীয়রা কীভাবে অভিযোজিত বা খাপ খাইয়ে নিয়েছিলেন তা উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
প্রাচীন জনগোষ্ঠীদের জীবনযাপন কেমন ছিল তা জানতে গবেষণায় সাড়ে আট হাজার থেকে এক হাজার তিনশ বছর আগের বিভিন্ন নমুনার ডিএনএ পরীক্ষা করেছেন গবেষকরা।
গবেষণায় জিনোমের ১৪টি অংশে প্রাচীন জনগোষ্ঠীর লোকদের জিনের পরিবর্তন লক্ষ্য করেছেন তারা। যেমন– সাম্প্রতিক সময়ে নিজেদের দেহে ভিটামিন ডি তৈরি ও তরুণ বয়সে দুধ হজম করতে পেরেছে এমন বৈশিষ্ট্যওয়ালা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক নির্বাচনের দৃঢ় লক্ষণ দেখা গেছে।
“প্রাচীনকালে ফসল না থাকা, খাদ্যের অভাব ও রোগব্যাধির সময় বেঁচে থাকার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল দুধ হজম করার এই সক্ষমতা,” বলেছেন এ গবেষণার প্রধান গবেষক ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস’-এর বাগিশ নরসিমহান।
নানা সময়ে পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে গেছে মানুষের রোগ প্রতিরোধ সংশ্লিষ্ট জিনগুলো। সেই সময়ের বিভিন্ন প্রাচীন জনগোষ্ঠী সম্ভবত কৃষি ও অভিবাসন বাড়ানোর মাধ্যমে নতুন কোনও রোগের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিত বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট কসমস।
গবেষণার জন্য আধুনিক পর্তুগাল ও ব্রিটেন থেকে ইউরোপ জুড়ে ছড়িয়ে থাকা সাতশ’রও বেশি নমুনা সংগ্রহ করেছেন গবেষকরা। স্ক্যান্ডিনেভিয়া, ভূমধ্যসাগর ও এর মধ্যবর্তী অঞ্চলের সব জায়গা থেকেই এ নমুনা সংগ্রহ করেছেন তারা। গবেষণার লক্ষ্যে এসব নমুনাকে নিওলিথিক, ব্রোঞ্জ, লৌহ ও ঐতিহাসিক যুগ নামে চারটি সময়ে ভাগ করেন গবেষকরা।
সবচেয়ে প্রাচীন নমুনাগুলো নিওলিথিক যুগের, যেটি প্রস্তর যুগ নামেও পরিচিত। প্রায় তিন হাজার সাতশ বছর আগে শেষ হয়েছে এই প্রস্তর যুগ। মানব বিকাশের এই সময়টিকে চিহ্নিত করা হয়েছে স্থায়ী জীবনযাত্রার সূচনা হিসেবে।
নিওলিথিক যুগের বিভিন্ন প্রাচীন জনগোষ্ঠীই প্রথম উদ্ভিদ চাষ ও খাদ্যের জন্য পশুপালন করতে শিখেছে। আর এ বিষয়টি শিকারের মাধ্যমে জীবনধারণ করা জনগোষ্ঠীগুলোর জন্য নতুন এক পরিবর্তনের সূচনা করে। এই সময়টি ছিল আধুনিক মানুষ আসার আগে। তিন লাখ বছর ধরে আধিপত্য বিস্তার করেছে এটি।
“প্রাচীন ডিএনএ নিয়ে গবেষণার ফলে প্রাচীন জনগোষ্ঠীর বিবর্তনীয় বিভিন্ন পরিবর্তন নিয়ে আমরা সরাসরি পর্যবেক্ষণ করতে পেরেছি। ফলে তাদের জেনেটিক স্বাক্ষর উন্মোচন করতে পেরেছি আমরা, যেগুলো বর্তমান সময়ের আধুনিক মানুষের জিনোম থেকে অনেকাংশে মুছে গেছে বা ঢাকা পরেছে মুখোশের আড়ালে,” বলেছেন নরসিমহান।
প্রাচীন যুগের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য এক নতুন পরিসংখ্যান পদ্ধতি ব্যবহার করে গবেষণা দলটি। যার মাধ্যমে প্রাচীন জনগোষ্ঠীগুলোর প্রাকৃতিক নির্বাচনের বিভিন্ন লক্ষণ স্ক্যান করে দেখা আরও সহজ হয়েছে গবেষকদের জন্য।
“প্রাচীন জনগোষ্ঠীগুলো কীভাবে ও কখন নির্দিষ্ট বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের জন্য প্রাকৃতিকভাবে নির্বাচিত হয়েছিল তার এক স্পষ্ট ছবি দিয়েছে আমাদের এ গবেষণা পদ্ধতিটি। বিশেষ করে সেই সব চিহ্ন যা আধুনিক জিনোম থেকে একেবারে হারিয়ে গেছে,” বলেছেন এ গবেষণার সহ-লেখক ও ‘ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সাস’-এর স্নাতক শিক্ষার্থী দেবাংশ পান্ডে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে, প্রাচীন জনগোষ্ঠীগুলোর অভিযোজনের ঘটনাটি ঘটে প্রাথমিক কৃষি উদ্ভবের সময়। কারণ, ওই সময় মানুষ একে অপরের কাছাকাছি বাস করার পাশাপাশি গৃহপালিত প্রাণীও ছিল তাদের। গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার কমিউনিকেশন’-এ।
আপনার মতামত জানানঃ