ক্রিস্টোফার কলম্বাস স্পেনীয় ও ইহুদি ছিলেন কিনা – এ নিয়ে বিতর্ক বহুদিনের। সম্প্রতি কলম্বাসের জাতীয়তা নিয়ে এই শতাব্দী প্রাচীন রহস্য উন্মোচন হয়েছে বলে দাবি গবেষকদের।
এ রহস্যের সমাধান মিলেছে অভিযাত্রী বা নাবিক কলম্বাসের প্রাচীন ডিএনএ বিশ্লেষণ করে, যেটি পরে স্পেনের এক রাষ্ট্রীয় টিভিতে ডকুমেন্টারি আকারে প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা।
১৫ শতকের অভিযাত্রী কলম্বাস ছিলেন ইহুদি এবং তিনি স্পেন থেকে এসেছিলেন বলে উঠে এসেছে ‘কলম্বাস ডিএনএ: হিজ ট্রু অরিজিন’ নামের টিভি ডকুমেন্টারিতে।
স্পেনের জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষ্যে ও নতুন বিশ্বে কলম্বাসের আগমনকে স্মরণ করার জন্য শনিবার এ ডকুমেন্টারিটি প্রচারিত হয় দেশটির রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল ‘আরটিভিই’তে।
১৪৯২ সালের ১২ অক্টোবর কলম্বাস প্রথম ইউরোপীয় হিসাবে আমেরিকার ভূখণ্ডে পা রাখেন, যে ভূমি তিনি আবিষ্কার করেছিলেন এশিয়া মহাদেশে পৌছানোর অভিযানে।
ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ মিগুয়েল লরেন্তের নেতৃত্বে করা এ গবেষণায় ‘সেভিল ক্যাথিড্রাল’-এ সমাহিত কলম্বাসের দেহাবশেষের ক্ষুদ্র নমুনা পরীক্ষা করেছেন গবেষকরা, যা দীর্ঘদিন ধরে চিহ্নিত ছিল কলম্বাসের শেষ বিশ্রামের স্থান হিসাবে এবং এমন দাবি ছিল প্রতিপক্ষেরও।
গবেষণা দলটি সম্প্রতি এই ডিএনএ-এর সঙ্গে কলম্বাসের পরিচিত আত্মীয় ও বংশধরদের তুলনা করেছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক পত্রিকা গার্ডিয়ান।
কলম্বাসের উৎপত্তি বা জাতীয়তা ও তার চূড়ান্ত বিশ্রামের স্থান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিতর্ক করে আসছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। ১৪৯০-এর দশক থেকে স্পেনীয়-অর্থায়নে পরিচালিত অভিযানের নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি, যা আমেরিকায় ইউরোপের নতুন কলোনি পত্তনের পথ উন্মুক্ত করেছে।
অনেকের দাবি, উত্তর-পশ্চিম ইতালির জেনোয়া থেকে এসেছিলেন কলম্বাস। তবে প্রচলিত এমন তত্ত্ব নিয়ে অনেক ঐতিহাসিকই প্রশ্ন তুলেছেন। কলম্বাসকে নিয়ে অন্যান্য তত্ত্বের মধ্যে আছে, তিনি ছিলেন একজন স্পেনীয় ইহুদি, গ্রীক, বাস্ক বা পর্তুগিজ।
এ গবেষণার বিষয়ে বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে কলম্বাসকে নিয়ে আগের বিভিন্ন তত্ত্ব নিশ্চিত করে গবেষক লরেন্তে বলেন, সেভিলের দেহাবশেষগুলো আসলে কলম্বাসেরই।
“নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে বর্তমানে এটি নিশ্চিতভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়েছে যে, সেভিলের দেহাবশেষগুলো ছিল কলম্বাসের।”
“কলম্বাসের জাতীয়তা নিয়ে করা এ গবেষণাটি অনেক তথ্য’সহ বেশ কয়েকটি কারণে তুলনামূলক জটিল হলেও এর ফলাফল প্রায় পুরোপুরি নির্ভরযোগ্য।”
১৫০৬ সালে স্পেনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ভালাদোলিডে ৫৫ বছর বয়সে মারা যান কলম্বাস। তবে হিস্পানিওলা দ্বীপে সমাধিস্থ হতে চেয়েছিলেন তিনি, যা বর্তমানে রয়েছে ডমিনিকান প্রজাতন্ত্র ও হাইতির মধ্যে।
১৫৪২ সালে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয় কলম্বাসের দেহাবশেষকে। তারপর ১৭৯৫ সালে আবার তার দেহকে পাঠানো হয় কিউবায়। এরপর দীর্ঘদিনের ধারণা ছিল, ১৮৯৮ সাল থেকে কলম্বাসের দেহাবশেষ রয়েছে স্পেনের সেভিল ক্যাথিড্রালে।
১৮৭৭ সালে ডোমিনিকান প্রজাতন্ত্রের রাজধানী সান্টো ডোমিংগোর একটি ক্যাথিড্রাল বেদীর পিছনে পুঁতে রাখা এক সীসার কফিন খুঁজে পান শ্রমিকরা, যেখানে ছিল দেহাবশেষ বা হাড়ের বিভিন্ন টুকরো। আর এই দেহাবশেষ কলম্বাসের বলে দাবি করে স্পেন।
তবে এই উভয় দাবিই সত্য হতে পারে, বলেন গবেষক লরেন্তে। কারণ, উভয় হাড়ের সেটই ছিল অসম্পূর্ণ।
আপনার মতামত জানানঃ