গত নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের কাছে এখনও নিজের পরাজয় স্বীকার করে নেননি ট্রাম্প। আজ বুধবার(২০ জানুয়ারি) প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার কথা রয়েছে ডেমোক্র্যাটদলীয় বিজয়ী জো বাইডেনের। ট্রাম্পের মেয়াদের শেষ দুই সপ্তাহ ক্যাপিটল ভবনে প্রাণঘাতী দাঙ্গায় উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে দ্বন্দ্বেই কেটে গেছে। টুইটার, ফেসবুকসহ সামাজিক মাধ্যমগুলোতে নিষিদ্ধ হয়ে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকতে হয়েছে তাকে। বহু আলোড়ন তুলে গতকাল হোয়াইট হাউজ ছেড়েছেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। হোয়াইট হাউজে থাকার জন্য হেন কোনো কৌশল নেই যা তিনি খাঁটাননি। আমেরিকার ইতিহাসের ভয়ানকতম এক ইতিহাস রচনা করে তবেই তিনি ক্ষমতা ছাড়ছেন। এনিয়ে তার নিজ দলের লোকদেরও ভৎর্সনা কম পাননি। ক্ষমতা ধরে রাখার জন্য তিনি আন্দোলন বিক্ষোভ সবই করেছেন। তবে সেসব নাকি কেবল শুরু হয়েছে। এমনি জানিয়েছেন তার বিদায়ী ভাষণে। এরইমধ্যে মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের মাধ্যমে জানা গেলো, সাবেক এই প্রেসিডেন্ট নতুন রাজনৈতিক দল খোলার পরিকল্পনা করেছেন। তার পরাজয়কে ঘিরে রিপাবলিকান পার্টির মধ্যে চলমান অন্তর্কোন্দলের মুখে ট্রাম্পের এমন চিন্তাভাবনার কথা জানিয়েছে মার্কিন গণমাধ্যম ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল।
গতকাল মঙ্গলবার (১৯ জানুয়ারি) এক প্রতিবেদনে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায়, নতুন দল খোলার বিষয়ে গত সপ্তাহে সহযোগীদের সঙ্গে কথা বলেছেন ট্রাম্প। নতুন দলের নাম ঠিক করেছেন, ‘প্যাট্রিয়ট পার্টি’।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তবে নতুন দল খোলার বিষয়ে ট্রাম্প কতখানি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ তা এখনও পরিষ্কার নয়। তবে ২০১৬ সালে রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হওয়ার আগে ট্রাম্প সমর্থকগোষ্ঠীর বেশিরভাগকেই দলীয় কার্যক্রমে তেমন একটা দেখা যায়নি।
ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প রাজনৈতিক দল গঠনের ধারণা নিয়ে ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। ৬ জানুয়ারির ট্রাম্পের আহ্বানে ওয়াশিংটন ডিসিতে জড়ো হওয়া সমর্থকদের তাণ্ডবের পর রিপাবলিকান দলের মূল নেতাদের সঙ্গে ট্রাম্পের দূরত্ব স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তাকে দ্বিতীয় দফা কংগ্রেসে অভিশংসন প্রস্তাবের পক্ষেও ১০ জন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা ভোট দিয়েছেন।
২০২৪ সালে প্রেসিডেন্ট পদে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাম্প। তেমন হলে রিপাবলিকান পার্টির ভবিষ্যৎ সম্ভাব্য প্রার্থীদের জন্য তা চিন্তারই বিষয়। তবে এখন পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট পদে ডেমোক্র্যাট এবং রিপাবলিকানদের বাইরে তৃতীয় কোনো শক্তিশালী পক্ষের দেখা মেলেনি।
দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে তৃতীয় দল গড়ে তোলার প্রচেষ্টা আগেও হয়েছে। এখন ইতিহাসের সবচেয়ে বিভক্ত মার্কিন সমাজে ডোনাল্ড ট্রাম্প তার অতি রক্ষণশীল এজেন্ডাগুলো নিয়ে রাজনীতিতে আলাদা দল গঠন করলে তাকে রিপাবলিকান দলের কিছু নেতাকেও দলে নিতে হবে।
ক্ষমতা থেকে বিদায় নেওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্পের তৎপরতা ও যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক গতি প্রকৃতিই বলে দেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প নতুন দল করবেন কিনা। তবে তিনি এমন কোনো উদ্যোগ নিলে রিপাবলিকান দলের জন্য তা মাথাব্যথার কারণ হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অগ্রাধিকারমূলক ভোটের ক্ষেত্রে দলটির মধ্যে ফাটল তৈরি করতে পারে ট্রাম্পের নতুন দল। রিপাবলিকান দল থেকে নিজের সমর্থকদের টানতে পারবে ট্রাম্পের সম্ভাব্য প্যাট্রিয়ট পার্টি। বিদায়ী ভাষণে ট্রাম্প এমন একটি উদ্যোগের আভাস দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি মনে করি, আমরা যে আন্দোলন শুরু করেছি, তা এখন শুরুর পর্যায়ে আছে। আমরা তা-ই করেছি, যা করতে এসেছিলাম এবং প্রত্যাশার চেয়েও বেশি করেছি। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, ট্রাম্প নতুন দল নিয়ে নির্বাচনে এলে আমেরিকা আরেকটি ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে থাকবে।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৫৫৩
আপনার মতামত জানানঃ