এবার সবচেয়ে আলোচিত ছিল নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের বসুরহাট পৌরসভা নির্বাচন৷ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ভাই আবদুল কাদের মির্জা ‘সত্যবচনে’ শুরু দেকেই দেশব্যাপী আলোচনার জন্ম দেন৷ তিনি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে শুরু থেকেই সোচ্চার ছিলেন৷ আওয়ামী লীগের এই প্রার্থী বিপূল ভোটে মেয়র পদে জয়ী হয়েছেন৷ কিন্তু তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিদলীয় পরাজিত প্রার্থী কামাল উদ্দিন চৌধুরী অভিযোগ তুলেছেন তাকে কারচুপি করে নির্বাচনে হারানো হয়েছে। ইভিএম মেশিনের কারসাজি করে তাকে হারানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। গতকাল সোমবার(১৮জানুয়ারি) সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, আবারও প্রমাণিত হয়েছে এই নির্বাচন কমিশন ও পুলিশ প্রশাসন সরকারের আজ্ঞাবহ। নির্বাচন কমিশন সরকারের আদেশ মোতাবেক ইভিএম কারসাজি করে শাসকদলীয় প্রার্থীদের জিতিয়ে দিতে সদা প্রস্তুত থাকে।
কামাল উদ্দিন আরও বলেন, মনোনয়নপত্র দাখিলের পর থেকে নির্বাচন শেষ হওয়া পর্যন্ত আমার প্রতিদ্বন্দ্বী সরকার দলীয় প্রার্থীর নেতাকর্মীরা নির্বাচনে কোনো অসহযোগিতা করেনি। আমার পোস্টার-ফেস্টুন ছেড়েননি বা আমার নেতাকর্মীদের ওপর হামলা মামলা করেননি। কারণ তারা জানেন ভোটাররা ইবিএম মেশিনের যে প্রতীকেই ছাপ দেবেন ভোটটা চলে যাবে নৌকা প্রতীকে।
তিনি বলেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা এতদিন যে অভিযোগ করে আসছিলেন তা আবারো সঠিক প্রমাণিত হলো।
ডয়চে ভেলেতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বসুরহাট পৌর এলাকায় মোট ভোট ২১ হাজারের কিছু বেশি৷ ৬৬ ভাগ ভোট পড়েছে৷ কাদের মির্জা পেয়েছেন ১৪ হাজার ৫১ ভোট৷ নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির কামাল উদ্দিন চৌধুরী পেয়েছেন এক হাজার ৭৭৮ ভোট৷ বিএনপির এই প্রার্থী বলেন, “এত কম ভোট পেয়ে আমি কেন সবাই বিস্মিত হয়েছেন৷ এখানে ইভিএম জালিয়াতি হয়েছে৷ ইভিএমই ভোটের ফল নির্ধারণ করে দিয়েছে৷ এটা নতুন ধারার জালিয়াতি মনে হয়েছে আমরা কাছে৷ আমার হিসাব ছিল ৫০০-৬০০ ভোটের ব্যবধানে জয়-পরাজয় নির্ধারিত হবে৷ সব দলেরই তো একটি ভোট ব্যাংক আছে৷ সেই ভোট গেল কোথায়?”
তবে আবদুল কাদের মির্জা বলেন, ‘‘এখানে কোনো জালিয়াতি হয়নি৷ আর ইভিএম-এ জালিয়াতির সুযোগই নেই৷ সর্বোচ্চ শতকরা এক ভাগ ভোট ফিঙ্গার প্রিন্ট ছাড়া দেয়া যায়৷ তবে যদি নির্বাচন কর্মকর্তারা সততার সাথে কাজ না করেন তাহলে অন্যরকম কিছু হতে পারে৷”
তবে কোথাও কোথাও আওয়ামী লীগের প্রার্থীরও এরকম অস্বাভাবিক কম ভোট পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে৷ হবিগঞ্জের মাধবপুরে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শ্রীধাম দাসগুপ্ত ভোট পেয়েছেন মাত্র ৬০৮টি৷ মোট ভোট পড়েছে ১৩ হাজার ১০৫টি৷ তিনি জামানত হারিয়েছেন৷
কিন্তু নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘ভোটের ব্যাপক পার্থক্য হলে আমরা কী করবো? যে যেরকম ভোট পেয়েছেন ফলও তা-ই হয়েছে৷”
ইভিএম জালিয়াতির প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘তাহলে বিএনপির প্রার্থী, বিদ্রোহী বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কীভাবে পাস করল?”
এদিকে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এবারের নির্বাচন ডিজিটাল তেলেসমাতিতে হয়েছে। এত এত ব্যবধানে বিএনপি প্রার্থীদের পরাজয়কে স্বাভাবিক হিসাবে দেখছেন না তারা। ৩০ পৌরসভায় বিএনপির প্রার্থী জামানত হারিয়েছেন, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। বিএনপি মাত্র ১৮ ভাগ ভোট পেয়েছে৷ আর ভোটের বিপুল ব্যবধান আমাদের অভিজ্ঞতার সাথে যায় না বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, নির্বাচন কমিশন তো এর আগে জাতীয় নির্বাচনেও তেলেসমাতি দেখিয়েছে৷ এবার নতুন তেলেসমাতি৷ ইভিএম তো পুরো নির্বাচন কমিশনের নিয়ন্ত্রণে৷ তারা যেরকম ফল চাইবে, সেরকম হবে৷ এর বিপরীতে তো প্রিন্টেড ব্যালট পেপার নেই৷ ফলে আর কিছুই করার নেই৷ দুনিয়ার কোথাও এরকম ইভিএম নেই৷
নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে নির্বাচনের আগে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধীদলগুলো বিভিন্ন অনিয়ম আর দুর্নীতির অভিযোগে এনেছিলেন এবং একইসাথে নির্বাচন কমিশন অপসারণের দাবিও জানিয়েছেন। দেশের বিশিষ্ট নাগরিক সমাজও নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে প্রেসিডেন্ট বরাবর চিঠি পাঠিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেছেন। সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা জানান, নির্বাচন কমিশনের গাফিলতি কিংবা অনিয়মের কারণে নির্বাচনে এমন ব্যব্ধানে প্রার্থীর হার হয়ে থাকার সম্ভাবনাই বেশি।
এসডব্লিউ/এমএন/কেএইচ/১৭০৩
আপনার মতামত জানানঃ