ফাইজারের টিকায় প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বিগ্ন সারা বিশ্ব। এর মধ্যেই ওই টিকা পেতে পেতে ১৬ জানুয়ারি ২০২১ শনিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে টিকার বৈশ্বিক জোট কোভ্যাক্সের কাছে আবেদন পাঠানো হয়েছে। এদিকে টিকার চুক্তি থাকা সত্ত্বেও তা ব্যবহার করা যাবে কিনা, সেই শঙ্কায় নরওয়ের জরুরি পরামর্শ চেয়েছে অস্ট্রেলিয়া। একই সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে ফাইজার কর্তৃপক্ষেরও বক্তব্য চেয়েছে দেশটি। তবে এসব কিছু সত্ত্বেও বাংলাদেশে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর দু-এক দিনের মধ্যেই ফাইজারের টিকা আমদানি ও ব্যবহারের অনুমোদন দিতে যাচ্ছে।
চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি টিকার বৈশ্বিক জোট কোভ্যাক্স থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হয়, বাংলাদেশ ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকা নেবে কিনা। এ জন্য সরকারকে ১৮ জানুয়ারির মধ্যে চিঠি দিয়ে জানাতে বলা হয়। একই চিঠি অন্য সদস্য রাষ্ট্রগুলোকেও দেওয়া হয়। বাংলাদেশ গত শনিবার কোভ্যাক্সের কাছে টিকা নেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে চিঠি দিয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহেদ মালেক এ চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, কোভ্যাক্স থেকে প্রথমেই বাংলাদেশ মোট জনসংখ্যার শূন্য ৪ শতাংশের জন্য টিকা পাবে। আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে ওই টিকা আসতে পারে বলে সংশ্নিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। একই সঙ্গে বেসরকারি ব্যবস্থাপনা ও ঢাকায় অবস্থিত বিদেশি দূতাবাসগুলোতে টিকা দেওয়ার জন্য পৃথক নীতিমালা করতে যাচ্ছে সরকার।
বাংলাদেশ ফাইজারের যে টিকা পেতে চাইছে, ওই একই টিকার এক কোটি ডোজ কিনতে ফাইজারের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ারও চুক্তি রয়েছে। কিন্তু টিকার কার্যকারিতা নিয়ে যাবতীয় সংশয় দূর করতে চায় দেশটি। অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী গ্রেগ হান্ট বলেন, সরকার ব্যাপক সাবধানতার সঙ্গে অগ্রসর হচ্ছে।
গত শুক্রবার পর্যন্ত নরওয়েতে একক ভ্যাকসিন হিসেবে ফাইজারের টিকা প্রয়োগ করা হয়েছে। শনিবার ব্লুমবার্গের প্রশ্নের লিখিত জবাবে তাই দেশটির স্বাস্থ্য কর্র্তৃপক্ষ অভিযোগ করেছে, সব মৃত্যুর সঙ্গেই ফাইজারের টিকার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। নরওয়ের স্বাস্থ্য কর্র্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ‘এরই মধ্যে ১৩ জনের মৃত্যুর কারণ খতিয়ে দেখা হয়েছে।’ সব মৃত্যুই বয়স্কদের, যারা টিকা নেওয়ার পর ভয়ানক শারীরিক সংকটের মুখোমুখি হয়েছিলেন। বাকি ১৬ জনের মৃত্যুর ঘটনাও তদন্তাধীন।
নরওয়েতে ফাইজারের উদ্ভাবিত করোনাভাইরাসের টিকা নেওয়ার পর মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৯ জনে দাঁড়িয়েছে। গত শুক্রবার দেশটির কর্র্তৃপক্ষকে উদ্ধৃত করে ২৩ জনের মৃত্যুর কথা জানিয়েছিল সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গ। সবশেষ তথ্য হাজির করে তারা বলছে, নতুন করে আরও ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রথমে যে ২৩ জনের মৃত্যুর খবর দেওয়া হয়েছিল, তাদের সবার বয়স ছিল ৮০-এর বেশি। তবে নতুন করে যে ছয়জনের মৃত্যুর তথ্য দেওয়া হয়েছে, তাদের বয়স ৭৫ থেকে ৮০ বছরের মধ্যে।
নরওয়ের চিকিৎসা নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ অস্ট্রেলিয়াকে জানিয়েছে, দুর্বল রোগীদের ক্ষেত্রে ভ্যাকসিন নেওয়ার পর সাধারণ জ্বর ও বমি বমি ভাবের মতো বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা যেতে পারে। কিছু দুর্বল রোগীর জন্য এটি মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে আমি অস্ট্রেলিয়ান মেডিকেল রেগুলেটর থেরাপিউটিক গুডস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের অনুরোধ করেছি, এ ঘটনার ব্যাপারে তাদের নরওয়ের চিকিৎসা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ফাইজারের কাছ থেকে বাড়তি তথ্য নিতে বলেছি।’
অস্ট্রেলিয়ার সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ সানজায়া সেনানায়াকে মনে করছেন, ভ্যাকসিন নেওয়ার ঘটনায় মৃত্যু কাকতালীয় হতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার প্রধান ভ্যাকসিন নিয়ন্ত্রক জানিয়েছেন, তার দেশ ইউরোপীয় নিয়ন্ত্রকদের সঙ্গে কভিড-১৯ ভ্যাকসিন সম্পর্কিত যেকোনো ঝুঁকি তদন্তের জন্য কাজ চালিয়ে যাবে।
তবে বাংলাদেশ ফাইজারের টিকা নিয়ে আগ্রহী। অনেকেই মনে করছেন, টিকার কার্যকারিতা বৃদ্ধদের জন্য আশা জাগানিয়া না হলেও তরুণদের জন্য তা সহায়ক হতে পারে। ফলে বাংলাদেশে উচিত ভেবেচিন্তে অগ্রসর হওয়া।
এসডাব্লিউ/এসএন/আরা/১১০৫
আপনার মতামত জানানঃ