দেশে প্রায় ২৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা থাকলেও টেনেটুনে সাড়ে ১৪ হাজার মেগাওয়াটের বেশি উৎপাদন করা যাচ্ছে না। ফলে সাড়ে ১৫ হাজার থেকে ১৭ হাজার মেগাওয়াটের মধ্যে ওঠানামা করা চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে গড়ে দেড় হাজার মেগাওয়াটের ঘাটতিতে পড়েছে দেশ। সঞ্চালন লাইনের দুর্বলতার কারণে উৎপাদিত বিদ্যুতের ভারসাম্যপূর্ণ বণ্টনও সম্ভব হচ্ছে না।
এপ্রিলে দেশজুড়ে তীব্র খরতাপ শুরু হওয়ার পর বিদ্যুতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা ব্যবস্থাপনা করতে গিয়ে দেশের কিছু অঞ্চলে ১০ থেকে ১২ ঘণ্টারও লোডশেডিং করতে হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আর্থিক টানাপড়েনের কারণে এ খাতে দীর্ঘদিন ধরে রাষ্ট্রীয় ভর্তুকির অর্থছাড় ধীল হয়ে গেছে। ফলে আর্থিক ব্যবস্থাপনার স্তরে স্তরে জমছে বকেয়া। বেশি মূল্যে কেনা বিদ্যুৎ গ্রাহকের কাছে কম মূল্যে পৌঁছাতে গিয়ে এখন অনেকটা রেশনিং করে উৎপাদন ও বণ্টনের ভারসাম্য রক্ষা করার চেষ্টা করছেন তারা।
তবে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করছেন, ভর্তুকির চাপ কমাতে সরকার বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানো ও উৎপাদন সীমিত রাখার কৌশল নিয়েছে। ফলে গরমের মওসুমে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এখন লোড শেডিংও বেশি দিতে হচ্ছে।
গত বছরের হিসাব অনুযায়ী, ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুতের ইউনিট প্রতি খরচ হচ্ছে ৭ টাকা ৮৩ পয়সা। দেশে উৎপাদিত বিভিন্ন মূল্যের বিদ্যুতের গড় মূল্য ইউনিট প্রতি কমবেশি ১২ টাকা। আর বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে পিডিবি পাইকারিতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ বিক্রি করছে ৭ টাকা ০৪ পয়সা।
এসব করতে গিয়ে প্রতিবছর প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার ঘাটতি সৃষ্টি হচ্ছে, যা অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ভর্তুকি হিসেবে পরিশোধ করার কথা। কিন্তু সম্প্রতি ভর্তুকি খরচ করার ক্ষেত্রে ‘সংকোচন নীতি’ অবলম্বন করছে সরকার।
উৎপাদন-বণ্টন পরিস্থিতি
গত ৩০ এপ্রিল রাত ৯টার সময় দেশে বিদ্যুতের উৎপাদন ১৬ হাজার ৪৭৭ মেগাওয়াটের নতুন মাইলফলক স্পর্শ করে। কিন্তু চাহিদা ১৭ হাজার মেগাওয়াট থাকায় তখনও ৫০০ মেগাওয়াটের লোড শেডিং চলছিল।
সঞ্চালন কোম্পানি পিজিসিবির গত ২৫ থেকে ৩০ এপ্রিল তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২৫ এপ্রিল ১৫ হাজার ৩৮৪ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৩৮৮ মেগাওয়াট। ফলে ওইদিন ঘাটতি ছিল প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট।
পরদিন ২৬ এপ্রিল ১৪ হাজার ৭৩০ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ১৮ মেগাওয়াট। ওইদিন ঘাটতি ছিল ৭১২ মেগাওয়াট। ২৭ এপ্রিল ১৪ হাজার ৮৬৫ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১৩ হাজার ৯৫০ মেগাওয়াট। ওইদিন ঘাটতি ছিল ৯১৪ মেগাওয়াট।
২৮ এপ্রিল ১৫ হাজার ৬৮৬ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১৩ হাজার ৯২৭ মেগাওয়াট। ওইদিন ঘাটতি ছিল ১৭৫৯ মেগাওয়াট। ২৯ এপ্রিল ১৫ হাজার ৯৩৪ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ১৩ হাজার ৭৯১ মেগাওয়াট। ঘাটতি ছিল ২ হাজার ১৪৩ মেগাওয়াট। ৩০ এপ্রিল ১৬ হাজার ৫৮ মেগাওয়াট চাহিদার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছিল ১৪ হাজার ৪২৭ মেগাওয়াট। ওইদিন ঘাটতি হয়েছিল ১ হাজার ৬৩১ মেগাওয়াট।
কিন্তু দেশের সব এলাকায় লোড শেডিংয়ের ‘সমবণ্টন’ হচ্ছে না। ফলে কোনো কোনো এলাকায় বিদ্যুতের যাওয়া-আসা বেশ কম, কোথাও কোথাও মানুষ অতিষ্ঠ। কোথাও দিনে এক ঘণ্টা আবার কোথাও ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা লোড শেডিংয়ের তথ্যও মিলছে।
তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বেশি বিপর্যস্ত জেলাগুলোর মধ্যে যশোর, চুয়াডাঙ্গা, জয়পুরহাট, নীলফামারী অঞ্চলে লোডশেডিং পরিস্থিতি গত বছরের তুলনায় উন্নতির কথা জানাচ্ছেন গ্রাহকরা।
অন্যদিকে বৃহত্তর ময়মনসিংহ, নোয়াখালী ও কুমিল্লার কিছু অঞ্চলে অসহনীয় পরিস্থিতির কথা আসছে। এমনও হচ্ছে, একই জেলায় কোথাও তেমন সংকট নেই, কোথাও আবার বিদ্যুতের যাওয়া-আসা স্বাভাবিক ঘটনায় পরিণত হয়েছে।
উৎপাদনে স্থবিরতা
এ মুহূর্তে বেসরকারি খাতে ৮৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্র সচল রয়েছে, যেগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা ১০ হাজার ৭৫০ মেগাওয়াট। বেসরকারি পর্যায়ে ডিজেল ও ফার্নেস অয়েলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ৪৪টি, যেগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা চার হাজার ৬৯৪ মেগাওয়াট। বেসরকারি পর্যায়ে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রয়েছে ২৮টি, যেগুলোর সক্ষমতা ৪ হাজার ১৯ মেগাওয়াট।
সর্বোচ্চ চাহিদার এ সময়ে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রের সক্ষমতার প্রায় অর্ধেকই এখন অব্যবহৃত পড়ে আছে। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে বর্তমানে জ্বালানির ধরন অনুযায়ী তেলভিত্তিক কেন্দ্রগুলোর ৬ হাজার ৩৫৬ মেগাওয়াট, আদানির ঝাড়খন্ড বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়া অন্যান্য কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ৫ হাজার ২৮ মেগাওয়াট ও গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর ১১ হাজার ১১৪ মেগাওয়াট উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে।
গত ৬ মে রাতে পিজিসিবির পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, রাত ৯টায় সর্বোচ্চ উৎপাদনকালীন সময়ে চাহিদা ছিল ঘণ্টাপ্রতি ১৪ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট আর উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার ৩৫৩ মেগাওয়াট। এই সময় ৪৫ মেগাওয়াটের ঘাটতি দেখানো হয়েছে।
ওই সময়ে গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে ৬ হাজার ৫৬৩ মেগাওয়াট, তরল জ্বালানিভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে তিন হাজার ৫২৫ মেগাওয়াট, কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রগুলো থেকে তিন হাজার ১৬৯ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে। চাহিদার বাকি অংশ ভারত থেকে আমদানি করা বিদ্যুৎ ও বিভিন্ন নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎস থেকে পূরণ হয়েছে।
উপায় কী
সক্ষমতা থাকলেও উৎপাদন বাড়িয়ে বিদ্যুতের চাহিদা কেন পূরণ করা যাচ্ছে না- এমন প্রশ্নে পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসেন এর পেছনে আর্থিক টানাপড়েনকেই মূল কারণ হিসেবে দেখছেন।
তিনি বলেন, “মূল সমস্যা হল বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ক্রয়মূল্য বা উৎপাদন ব্যয়ের চেয়ে বিক্রয়মূল্য অনেক কম থাকে। ফলে গ্যাপটা দিন দিন বেড়ে এখন ৪১ হাজার কোটি টাকার মতো আর্থিক ঘাটতি আছে। এটা মূলত এতদিন সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি হিসেবে পেয়ে আসছিল পিডিবি। এখন যেহেতু বৈশ্বিক সমস্যার ঢেউ বাংলাদেশেও আছে, সে কারণে সরকারও কৃচ্ছতা সাধন করছে।”
সরকারি-বেসরকারি সব বিদ্যুৎকেন্দ্রই পিডিবির কাছে টাকা পাবে জানিয়ে তিনি বলেন, সে কারণে এখন তেল হোক আর কয়লা হোক রেশনিং করে চলতে হচ্ছে।
“আমাদের কিছু পেমেন্টের ব্যপার আছে। বন্ড দিয়ে কিছুটা সমাধান করা হয়েছে। এই পেমেন্টের কারণে অনেক সময় সবগুলো ইউনিট প্রয়োজন মতো চালানো যাচ্ছে না। আবার অনেক কেন্দ্র আছে দিনরাত চালু থাকার কারণে তেল দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। কয়লা যা আসছে সেগুলোকে রেশনিং করে চলার কারণে পুরোটা সক্ষমতা কাজে লাগানো যাচ্ছে না।”
গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো পূর্ণ উদ্যমে না চালানোর কারণ জানতে চাইলে মোহাম্মদ হোসেন বলেন, “ঈদের ছুটির সময় সর্বোচ্চ পরিমাণ গ্যাস দেওয়া হয়েছে এবং সেটা কিন্তু আমরা ব্যবহার করেছি। ৮ হাজার মেগাওয়াট প্লাস আমরা গ্যাস থেকে উৎপাদন করেছি, যেটা রেকর্ড। এখনও ৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যেত যদি পর্যাপ্ত গ্যাস পাওয়া যেত।”
সঞ্চালন লাইনের সীমাবদ্ধতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “কিছু কিছু জায়গায় এখনও সীমাবদ্ধতা আছে, যেমন ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা জোনে একটু সমস্যা আছে।”
প্রায় একই সুরে কথা বলেন বিপিডিবির সদস্য (উৎপাদন) খন্দকার মোকাম্মেল হোসেন। উৎপাদন না বাড়ানোর কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, “আমাদের কিছু পেমেন্টের ব্যাপার আছে। বন্ড ইস্যু করে গত নভেম্বর পর্যন্ত থাকা বকেয়ার কিছু অংশ পরিশোধ করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সরকারি-বেসরকারি কোম্পানিগুলো অনেক সময় প্ল্যান্ট চালানোর মত জ্বালানি প্রস্তুত করতে পারছে না। সরকারের নিজস্ব কিছু বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। সেগুলোও ঠিক সময়ে জ্বালানি পৌঁছাতে না পারার কারণে কখনও কখনও বন্ধ থাকছে। এটা হচ্ছে পরিবহন ইস্যু।
“আর কয়লাভিত্তিক কেন্দ্রেও এক সঙ্গে সব কয়লা জ্বালিয়ে ফেলা হচ্ছে না। যেহেতু কয়লা সরবরাহে ধীর গতি আছে, সে কারণে কিছুটা কম জ্বালানি পুড়িয়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর গ্যাস যতটা পাওয়া যাচ্ছে তার পুরোটা কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বেশি দক্ষতা সম্পন্ন কেন্দ্রগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে এবং সেটা করতে গিয়েও অনেক গ্যাসভিত্তিক কেন্দ্র এখনও মাঝে মধ্যে বন্ধ রাখতে হচ্ছে। এই করেই এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে।”
তবে বিদ্যুৎখাতের অনিয়ম ও দুর্নীতি নিয়ে সোচ্চার নাগরিক সংগঠন কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, “লোড শেডিং দিয়ে তারা ভর্তুকি সাশ্রয় করছে। বার বার মূল্য বৃদ্ধি করে আর উৎপাদন কমিয়ে ভর্তুকি বাঁচাচ্ছে। তারা এই দুটো কৌশল গ্রহণ করেছে।
“এখন যে পরিমাণ বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে এটা সরকারের পলিসি। এভাবে কতখানি ভর্তুকি তারা সাশ্রয় করছে সেটা তো জনগণ জানতে পারে না। সেজন্যই তারা এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের গণশুনানি বন্ধ করে দিয়েছে, যাতে জনগণ তাদের সম্পর্কে জানতে না পারে। আমরা সংবাদ সম্মেলন করে অপ্রয়োজনীয় ব্যয় হ্রাস করে ভর্তুকি কমিয়ে আনার পন্থা বলে দিয়েছি। তারপরেও সরকার কোনো আলোচনা না করে দাম বৃদ্ধি করে যাচ্ছে। উৎপাদন কমিয়ে রেখেছে।”
বিদ্যুৎ খাতে সরকারের দেওয়া ভর্তুকি কমিয়ে আনতে আইএমএফের সমালোচনা করেন তিনি।
শামসুল আলম বলেন, “ব্যয় বৃদ্ধির কারণ বিবেচনা না করে আইএমএফ একরোখাভাবে বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির জন্য চাপ দিতে থাকবে এটা কাম্য নয়। আমরা যাতে আদালতে যেতে না পারি, নতুন দ্রুত বিদ্যুৎ-জ্বালানি সরবরাহ আইন পাস করে সেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর মাধ্যমে আবারও আমরা অবিচারের সম্মুখীন হলাম। এটা বড় ধরনের জুলুম। আইএমএফও এটা বুঝল না, না বুঝে তারা মূল্যবৃদ্ধিতে সমর্থন দিয়ে গেল।
“দাতা সংস্থারা বলে আসছে, আমরাও বলে আসছি যে, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অডিট হওয়া দরকার। এটা সিএজি বা অডিটর জেনারেলের কাজ। সরকার চাইলে তাদের দিয়ে অডিট করাতে পারে। সরকার যেহেতু এটা ভাবছে না তাহলে এই অডিট কে করবে?”
পাহাড়সম বকেয়া
পিডিবির গত ২৯ এপ্রিলের হিসাব অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন কোম্পানিগুলো তাদের কাছে ৩৩ হাজার ১০৯ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি খাতের ৯৯টি কোম্পানি পাবে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা।
বিদ্যুৎ রপ্তানি বাবদ বিভিন্ন ভারতীয় কোম্পানি পিডিবির কাছে পাবে পাঁচ হাজার ৩০ কোটি টাকা। জিটুজি ভিত্তিতে নির্মিত পায়রা ও রামপাল তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র পিডিবির কাছে পাবে দুই হাজার ৪০০ কোটি টাকা। আর বিভিন্ন সরকারি কোম্পানি পাবে ১০ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
দীর্ঘদিন আটকে থাকা বকেয়ার বোঝা কমাতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সম্প্রতি ১০ হাজার ৬০০ কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করা হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় প্রায় সাত হাজার কোটি টাকাসহ মোট ১৭ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করেছে সরকার।
লোড শেডিংয়ের কারণ কী?
বিদ্যুৎ বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মূলতঃ বিদ্যুতের একক ক্রেতা ও বিক্রেতা কোম্পানি বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড বা বিপিডিবির কাছে উৎপাদন কোম্পানিগুলোর হাজার হাজার কোটি টাকা পাওনা থাকার কারণে উৎপাদন প্রক্রিয়া গতিহীন হয়ে পড়েছে।
বিশাল বকেয়ার বোঝা নিয়ে সরকারি-বেসরকারি উৎপাদন কোম্পানিগুলো জ্বালানি ও খরচের ক্ষেত্রে অনেকটা রেশনিংয়ের কৌশল নিয়েছে। পাশাপাশি সঞ্চালন লাইনের দুর্বলতার কারণেও বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনা কিছুটা পিছিয়ে যাচ্ছে, যার ফলে বাড়ছে লোড শেডিং।
পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলে বিভক্ত দেশের বিদ্যমান সঞ্চালন লাইনের সক্ষমতার ঘাটতিও স্পষ্ট। পশ্চিমাঞ্চলে চাহিদার তুলনায় বেশি বিদ্যুৎ থাকলেও এর পুরোটাই পূর্বাঞ্চলের চাহিদা পূরণের জন্য স্থানান্তর করা যাচ্ছে না।
পিজিসিবির মুখপাত্র এ বি এম বদরুদ্দোজা খানের ভাষ্য, পূর্বাঞ্চলে চাহিদার তুলনায় কম বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে, পশ্চিমাঞ্চলে উৎপাদিত বিদ্যুৎ দিয়ে সেই অঞ্চলের চাহিদা পূরণ করা যাচ্ছে। আমিনবাজার গ্রিড সাবস্টেশন হয়ে এখন দৈনিক ৭০০ থেকে ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ পূর্বাঞ্চলে সঞ্চালন করা যাচ্ছে। সঞ্চালন লাইনের সক্ষমতা বাড়লে আরও বেশি বিদ্যুৎ পূর্বাঞ্চলে আনা সম্ভব হতো।
আপনার মতামত জানানঃ