ধর্মপাশার সুনই জলমহালের দখল নিয়ে প্রতিপক্ষের হামলায় মৎস্যজীবী শ্যামাচরণ বর্মণকে নিহতের ঘটনায় ‘মিথ্যা তথ্য দিয়ে’ পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তার ছেলে চন্দন বর্মণ। থানায় তার দেওয়া লিখিত অভিযোগ গ্রহণ না করে অন্য একটি এজাহার তৈরি ও সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়াকে বেআইনি উল্লেখ করে চন্দন আইনগত প্রতিকার চেয়ে পুলিশ সুপারের কাছে আবেদন করেছেন তিনি।
৮ জানুয়ারি ২০২০, শুক্রবার সুনামগঞ্জের ধরমপাশা উপজেলার সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের শ্যামাচরণ বর্মণকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। খুন হওয়া ব্যক্তির নাম শ্যামাচরণ বর্মণ (৬৫)। তিনি সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি চন্দন বর্মণের বাবা।
স্থানীয়রা জানায়, ধর্মপাশার বৃহৎ জলমহাল সুনই নিয়ে দুই মৎস্যজীবী সমিতির দ্বন্দ্ব চলছে অনেক দিন ধরে। জলমহালের খাজনা পরিশোধ করে দুই পক্ষই মহালের মালিকানা দাবি করে আসছে। একপক্ষ সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বিরুদ্ধে জাতীয় প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনও করেছিল। এই দ্বন্দ্বের জের ধরে গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮ টায় জলমহালের পাড়ে থাকা একপক্ষের মাছের খলায় আরেকপক্ষ আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় প্রতিপক্ষের লোকজন শ্যামাচরণ বর্মণ নামের ৬৫ বছরের এক বৃদ্ধ জেলেকে গলা কেটে হত্যা করে। এ ঘটনায় কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছে।
ঘটনার পর শনিবার সন্ধ্যায় সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি ও নিহতের ছেলে চন্দন বর্মণ (৩০) স্থানীয় সাংসদ মোয়াজ্জেম হোসেন ওরফে রতন (৫২), তার ছোট ভাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হোসেন ওরফে রোকন (৩২), সাংসদের বড় ভাই উপজেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক মোবারক হোসেন ওরফে মাসুদসহ (৫৫) ৬৩ জনকে আসামি করে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। পুলিশ তাদের মামলাটি এজাহার হিসেবে গ্রহণ করেনি।
পুলিশ তাদের বলেছেন, মামলা থেকে স্থানীয় সাংসদের নাম বাদ না দিলে তারা মামলা নেবেন না। তবে ধরমপাশা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন বলেছেন, চন্দন বর্মণের দেওয়া লিখিত অভিযোগে বেশ কিছু ত্রুটি ছিল। সেগুলো সংশোধন করে আবার থানায় জমা দিতে বলা হয়েছিল।
এদিকে ঘটনার পর ধরমপাশা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আরিফুল ইসলাম বাদী হয়ে গত রোববার রাতে ৬০-৬৫ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে একটি মামলা করেছেন। ঘটনার রাতেই পুলিশ ২৩ জনকে আটক করে। এর মধ্যে দুজন অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। অন্যদের ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে হাজির করলে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি চন্দন বর্মণ তার লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, সুনই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি সকল আইনী প্রক্রিয়া মেনে সুনই নদী জলমহাল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৬ বছরের জন্য বন্দোবস্ত নেয়। কিন্তু এজাহারে উল্লেখিত আসামীগণ বৃহস্পতিবার রাতে মারাত্মক অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে জলমহালের পাড়ে থাকা খলায় হামলা করে তার বাবা শ্যামাচরণ বর্মণকে খুন করে। এ ঘটনায় গত শনিবার মামলা দায়েরের জন্য ঘটনায় জড়িত ৬৩ জনের নামোল্লেখ করে থানায় এজাহার নিয়ে যান তিনি। পুলিশ তাদের মামলা গ্রহণ করে নি। কিন্তু পরদিন অজ্ঞাতনামা ৬৩ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিয়ে পুলিশের একজন সাব ইন্সপেক্টরকে বাদী করে থানায় একটি মামলা (নম্বর-৩, তারিখ ১০.০১.২১) হয়েছে।
লিখিত অভিযোগে তিনি দাবি করেছেন, প্রকৃত ঘটনাকে আড়াল করার জন্য ধর্মপাশা থানা পুলিশ এই মামলা নিয়েছে। এ ব্যাপারে পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। এই অভিযোগের সঙ্গে চন্দন বর্মণ তার নিজের দায়ের করা এজাহার কপিও পুলিশ সুপারের নিকট জমা দিয়েছেন। পরে পুলিশ সুপার কার্যালয়ের রিসিভ করা কপি সাংবাদিকদের দিয়েছেন চন্দন বর্মণ।
চন্দন বর্মণ আরো লিখেছেন, এভাবে এজহার দায়ের সম্পূর্ণ বেআইনি। উচ্চ আদালতগুলো সিদ্ধান্ত অনুযায়ী কোনো অপরাধজনক ঘটনার বিষয়ে প্রথম সংবাদের ভিত্তিতেই সংশ্লিষ্ট থানায় মামলা হওয়া উচিত। কিন্ত ধরমপাশা থানা তার দায়ের করা অভিযোগ গ্রহণ না করে পরবর্তীকালে অন্য একটি এজাহার তৈরি ও তার ভিত্তিতে মামলা রুজু করে প্রকৃত ঘটনাটি নষ্ট করার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান মঙ্গলবার গণমাধ্যমে বলেছেন, ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে তাদের গ্রেপ্তারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন। এ জন্য পুলিশের বিশেষ দল কাজ করেছে। বেশ কিছু লোক জেলে আছে। নিহত বৃদ্ধের পরিবারের লোকজনের উচিত পুলিশকে সহযোগিতা করা, যাতে প্রকৃত দোষীরা আইনের আওতায় আসে।
এসডব্লিউ/ফাআ/২১২০
আপনার মতামত জানানঃ