বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন বিরোধী দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি বলে দেশে গণতন্ত্র নেই, সে কথা ঠিক নয়। বরং জনগণ যে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে সেটিই বড় বিষয় বলে দাবি করেছেন তিনি। গণভবনে নির্বাচন পরবর্তী এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা বলে তিনি।
প্রধানমন্ত্রী হাসিনা বলেন, “সব দলেরই তাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার আছে। কোনও দল যদি নির্বাচনে অংশ নিতে না চায় তার মানে এটা নয় যে দেশে গণতন্ত্র নেই। আপনাকে দেখতে হবে যে মানুষ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে কি না।”
এর আগে বিবিসির পক্ষ থেকে তাকে প্রশ্ন করা হয় যে, বিরোধী কোনও দল না থাকলে বাংলাদেশকে একটি সক্রিয় গণতান্ত্রিক দেশ বলা যায় কি না।
উল্লেখ্য যে গত সাতই জানুয়ারির নির্বাচনে দেশের প্রায় ৬০ শতাংশ ভোটার ভোট দেয়া থেকে বিরত ছিল। মানবাধিকার সংস্থাগুলোও গণতান্ত্রিক স্বাধীনতার দমনের প্রশ্নে এই সরকারের সমালোচনা করে আসছে।
এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিরোধী দলের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, “তারা কী করছে, আগুন দিয়ে মানুষ মারছে। ট্রেনে আগুন দিয়েছে। … এটা কি গণতন্ত্র? আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। কিন্তু আপনি যখন সাধারণ মানুষকে হত্যা করতে চাইবেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে…এটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নয়, এটা সন্ত্রাসী কার্যক্রম।”
“এ দেশে কেউ সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। মানুষ সন্ত্রাসী কার্যক্রম পছন্দ করে না”, আরও জানান তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমরা আমাদের ধৈর্য দেখিয়েছি। আমরা মানুষের অধিকার নিশ্চিত করেছি।”
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “তারা নির্বাচনে অংশ নিতে চায়নি। তারা মানুষের ভোট কেন্দ্রে যাওয়া ঠেকাতে চেয়েছে। কিন্তু তারা সেটা পারেনি। কারণ মানুষ সচেতন।”
“এছাড়া যদি গণতন্ত্রের আর কোনও সংজ্ঞা থেকে থাকে তাহলে সেটা আলাদা। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, এটা মানুষের অধিকার। যখন জনগণ অংশগ্রহণ করে, তারা তাদের সরকারের জন্য ভোট দেয়, তখন তাদের অংশগ্রহণই মূল বিষয়।”
গণতান্ত্রিক দেশে বিরোধী দল থাকাটা জরুরি, তা উল্লেখ করে আরেক জন সাংবাদিক এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমি বিরোধী দলে ছিলাম দীর্ঘদিন ধরে। আমাদের দলকে আমরা সংগঠিত করেছি। বিরোধী দলকে তাদের নিজেদের সংগঠিত করতে হবে। আপনি আমাকে বিরোধী দল গঠন করতে বলতে পারেন না। অবশ্য আপনি চাইলে আমরা সেটা করতে পারি। কিন্তু সেটা আসল বিরোধীদল হবে না।”
প্রধানমন্ত্রী জানান, নির্বাচন নিয়ে যারা সমালোচনা করতে চায় তারা করতে পারে। সেটা তাদের স্বাধীনতা।
“ভুল-ঠিক নিয়ে আমার নিজস্ব বিশ্বাস আছে। আমি সেটাতেই বিশ্বাস করি। হ্যাঁ আমি ঠিক কাজটি করেছি। নির্বাচন সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে”, যোগ করেন তিনি।
ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ক্ষমা করা হবে কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মি. ইউনুসের বিষয়টি শ্রম আদালতের বিষয়। তিনি শ্রম আইন লংঘন করেছেন। তার শ্রমিকদের ঠকিয়েছেন। শ্রমিকরা মামলা করেছেন। এখানে প্রধানমন্ত্রীর কিছু করার নেই বলেও জানান তিনি।
এর আগে নির্বাচন পরবর্তী সময়ে বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের নিয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “এটা জনগণের বিজয়, এটা আমার বিজয় না। কারণ জনগণের যে অধিকার আছে, সরকার গঠন করার ক্ষমতা তাদের হাতে আছে, জনগণের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করার মাধ্যমে সেটি নিশ্চিত হয়েছে। ”
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এবারের নির্বাচনে জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, “এবারের নির্বাচন ব্যতিক্রমী হয়েছে। কারণ সাধারণত দল থেকে প্রার্থী নির্বাচন করা হলেও এবার তার পাশাপাশি প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছিল। বিএনপি এবারের নির্বাচনে অংশ নেয়নি কারণ তারা আসলে নির্বাচনে অংশ নিতে চায় না এবং তারা ভয় পায়।”
আপনার মতামত জানানঃ