বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দরে ভিড়েছে রাশিয়ার যুদ্ধজাহাজ। রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বিষয়টিকে ঘিরে দক্ষিণ এশিয়ায় রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান প্রভাব বাড়ার আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
মিয়ানমার এবং রাশিয়া তাদের প্রথম যৌথ নৌ মহড়া শুরু করার কয়েকদিন পর এন্টি সাবমেরিন যুদ্ধজাহাজ অ্যাডমিরাল ট্রিবুটস ও অ্যাডমিরাল প্যান্টেলিয়েভ এবং রাশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় নৌ বহরের ট্যাঙ্কার পেচেঙ্গা বঙ্গোপসাগরের মূল বন্দরে ভিড়েছে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রায় আগ্রাসনের সময় থেকে বাংলাদেশ ও রাশিয়া সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশটিতে একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করছে মস্কো। গত অক্টোবরে বাংলাদেশে প্রথম ইউরেনিয়াম চালান সরবরাহ করা হয়েছে।
ঢাকাস্থ রাশিয়ার দূতাবাস (যুদ্ধজাহাজের) এই সফরকে রাশিয়া-বাংলাদেশ সম্পর্কের জন্য এক “বিশাল মাইলফলক” বলে অভিহিত করেছে।
জাহাজের ছবি শেয়ার করে এক্সে (আগের টুইটার) করা এক পোস্টে রাশিয়ার দূতাবাস বলেছে, “৫০ বছর আগে শেষবার রাশিয়ান/সোভিয়েত নৌবাহিনীর জাহাজগুলো বাংলাদেশ সফর করেছিল।”
ইউক্রেনীয় সেনাবাহিনীর সরঞ্জাম কেনার জন্য অর্থ সংগ্রহকারী ‘সেরহি প্রিতুলা চ্যারিটি ফাউন্ডেশন’ এর সাথে যুক্ত “জে ইন কিয়েভ” -এর এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে রাশিয়ান জাহাজের এই সফর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।
সেখানে লেখা হয়েছে, “যুক্তরাষ্ট্র যখন অন্তর্দ্বন্দ্বে জর্জরিত, যখন সে রাশিয়ার গুজবের সাগরে হারিয়ে গেছে তখন পুতিন তার বিশ্ব দখল অব্যাহত রেখেছেন। বর্তমানে মিয়ানমারকে নিয়ন্ত্রণকারী সামরিক অভ্যুত্থানকে সমর্থন করার পর, ৫২ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশে রাশিয়ান যুদ্ধজাহাজগুলো ভিড়েছে।
বাংলাদেশে নিযুক্ত রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্দার মান্টিটঙ্কি বলেন, ১৯৭১ সালে সদ্য স্বাধীন হওয়া একটি দেশকে রক্ষা করতে এসেছিল রুশ যুদ্ধজাহাজগুলো। স্বাধীনতাযুদ্ধের পর চট্টগ্রাম বন্দরের জলসীমায় অনেক মাইন ছিল। সেখানে অনেক নৌযান ডুবে ছিল। অনেক দেশের কাছে সে সময় সহায়তা চেয়েছিল বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ। কয়েকটি দেশ বিপুল অর্থের বিনিময়ে সহায়তা করতে রাজি হয়েছিল। তবে বাংলাদেশের তখন অর্থের ঘাটতি ছিল। তখন শুধু সোভিয়েত ইউনিয়নই মানবিক কারণে সহায়তায় এগিয়ে এসেছিল।
এবার রুশ জাহাজগুলো পুরোপুরি বন্ধুত্বপূর্ণ এক সফরে বাংলাদেশে এসেছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামে রাশিয়ার অনারারি কনসাল আশিক ইমরান। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে সম্পর্ক যে খুবই উচ্চপর্যায়ে রয়েছে, তার প্রমাণস্বরূপ রুশ যুদ্ধজাহাজগুলোর বাংলাদেশ সফর।
সেনাশাসিত মিয়ানমার আন্দামান সাগরে রাশিয়ার সাথে যৌথ মহড়ায় অংশ নেওয়ার কয়েকদিন পর রাশিয়ান জাহাজের বাংলাদেশ সফরের খবরটি সামনে এলো। নৌবাহিনীর জাহাজ এবং বিমান ওই মহড়ায় অংশ নিয়েছিল বলে জানা গেছে।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশে অবস্থান করা রাশিয়ার এন্টি সাবমেরিন যুদ্ধজাহাজ অ্যাডমিরাল ট্রিবুটস এবং অ্যাডমিরাল প্যান্টেলিয়েভও ওই মহড়ায় অংশ নিয়েছিল।
আপনার মতামত জানানঃ